জমির উর্ধ্বসীমা নির্ধারণ ও সীমাতিরিক্ত জমি উদ্ধারের নীতিমালা

(তথ্য : ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল; ১৯৯০)

 

বিধি-১৩৮। জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ২০(২) এবং ৯০ ধারার বিধান মোতাবেক কোন ব্যক্তি ৩৭৫ বিঘার বেশী জমির মালিকানা অর্জন করতে পারেনা। বাংলাদেশ ল্যান্ড হোল্ডিং লিমিটেশন অর্ডার ১৯৭২ (রাষ্ট্রপতির ১৯৭২ সনের ৯৮নং আদেশ) বলে ১৯৭২ সনের ১৫ই আগষ্ট হতে এ উর্ধসীমা ১০০ বিঘায় কমিয়ে আনা হয়। ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ (১৯৮৪) জারী হওযার তারিখের পূর্ব দিনে যারা ১০০ বিঘার বেশী জমির মালিক ছিলেন; তাদের ১০০ বিঘার অতিরিক্ত জমি রাষ্ট্রপতির ১৯৭২ সনের ৯৮ নম্বর আদেশ বলে সরকারে সমর্পিত হবে। লক্ষ রাখতে হবে যে, ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ জারী হওয়াসত্বেও যারা ইতপূর্বে ১০০ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিক ছিলেন, তাদের ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশে আরোপিত ঊর্ধসীমার (৬০ বিঘা) অতিরিক্ত জমি সমর্পিত হবেনা। তবে ১০০ বিঘার অতিরিক্ত জমি সমর্পণযোগ্য, বিধায় উহা অধিগ্রহণ করার ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে।

বিধি-১৩৯। অন্যকোন আইনে যাই থাকুক না কেন, রাষ্ট্রপতির ১৯৭২ সনের ৯৮নং আদেশ বলবৎ হওয়ার পর (১৫ আগষ্ট, ১৯৭২) কোন পরিবার বা সংস্থার মালিকানাধীন মোট জমির পরিমাণ ১০০ বিঘার বেশী হতে পারবেনা এবং ১০০ বিঘার বেশী জমি ক্রয়, দান উত্তরাধিকার বা অন্যকোন সূত্রে অর্জন করতে পারবেনা।

বিধি-১৪০। ১০০ বিঘার ঊর্ধসীমা নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক আরেপিত শর্তে শিথিল করা যেতে পারে-

(ক) যদি কোন সমবায় সমিতির সকল সদস্য তাদের জমির মালিকানা সমিতির অনুকূলে হস্তান্তর করে নিজেরা চাষাবাদ করেন;

(খ) চা, কপি, রাবার বা অন্য ফলের বাগানের জন্য ব্যবহৃত জমি;

(গ) কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান ইহার নিজস্ব কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল উৎপাদনের উদ্দেশ্যে জমি ব্যবহার করলে; এবং

(ঘ) অন্যকোন কাজের জন্য নজস্বার্থে সরকার প্রয়োজন মনে করেন এরূপ জমি।

ওয়াক্‌ফ, দেবোত্তর বা ধর্মীয় ট্রাষ্টের ক্ষেত্রে ইহার মালিকানাধীন জমির সম্পূর্ণ আয় ধর্মীয় বা দাতব্য কাজে ব্যয় হলে এরূপ জমির ক্ষেত্রে এ ঊর্ধসীমার বিধান প্রযোজ্য হবেনা। ধর্মীয় ও ব্যক্তির স্বার্থে ব্রয় হয়ে থাকে, তবে জমির যে অংশের আয় কেবলমাত্র ধর্মীয় বা দাতব্য কাজে ব্রয় হয়, সেই পরিমাণ জমির জন্য এ ঊর্ধসীমা প্রযোজ্য হবেনা।

বিধি-১৪১। ১৫ই আগষ্ট (১৯৭২) তারিখের পর ১০০ বিঘার অধিক জমির মালিক পরিবার বা সদস্য কোন জমি বিক্রয়/হস্তান্তর করে থাকলে উক্ত বিক্রয়/হস্তান্তর বাতিল বলে গণ্য হবে। স্বত্ব ঘোষণা ডিক্রি বা বন্ধকী দায়ের জন্য এবং চুক্তির বিশেষ বাস্তবায়নের (Specific Performance of Contact) জন্য কোন সম্পত্তি বিক্রয় হয়ে থাকলে তাও এ আইনে হস্তান্তরিত সংজ্ঞাভুক্ত হবে।

বিধি-১৪২। ১৯৭৩ সনের ১লা জানুয়ারীর পূর্বে প্রত্যেক মালিক পরিবার/সংস্থা প্রধানকে বাংলাদেশ ল্যাণ্ড হোল্ডিং লিমিটেশন রুলস, ১৯৭২ এর বিধান মোতাবেক স্থানীয় রাজস্ব অফিসারের নিকট ইহার মালিকানাধীন সকল জমির পূর্ণ বিবরণ দাখিল করতে হবে। অবশ্য ১০০ বিঘার বেশী জমির এরূপ ব্যক্তির নাম ঠিকানা যেকোন ব্যক্তির রাজস্ব অফিসারের নিকট দাখিল করতে পারেন।

বিধি-১৪৩। উপরের অনুচ্ছেদে বর্ণিত হিসাব বিবরণী পাওয়ার পর রাজস্ব অফিসার যথাযোগ্য শুনানীর সুযোগ প্রদান করে সীমাতিরিক্ত জমি সরকারের নিকট সমর্পণ করার জন্য জমির মালিক/সংস্থাকে নির্দেশ প্রদান করেন।

বিধি-১৪৪। ১০০ বিঘার বেশী জমির মালিক পরিবার/সংস্থা সীমাতিরিক্ত সমর্পণযোগ্য জমি নির্বাচন করতে পারবেন। কোন মালিক পরিবার/সংস্থা সমর্পণযোগ্য জমি নির্বাচনে ব্যর্থ হলে রাজস্ব অফিসার নির্ধারিত নিয়মে সমর্পণযোগ্য জমি নির্বাচন করবেন।

বিধি-১৪৫। ওয়াক্‌ফ/দেবোত্তর ক্ষেত্রে ঊর্ধসীমার বিধান হতে অব্যাহতি দেয়ার উদ্দেশে রাজস্ব অফিসার-

(ক) প্রথমে স্থানীয় তদন্ত করে এবং প্রয়োজনে পরীক্ষামূলক শস্য কেটে জমিতে বিভিন্ন উৎপাদিত ফসলের বার্ষিক উৎপাদন নির্ণয় করবেন;.

(খ) বিগত পাঁচ বছরের ফসলের গড় মূল্যের নিরিখে বার্ষিক ফসল মূল্য নিরূপণ করবেন;

(গ) ফসলের বার্ষিক গড় মূল্যের ৩৩.৩৩% শতাংশ নীট আয় বলে নির্ধারণ করবেন।

    এ নীট আয়ের ভিত্তিতে ধর্মীয় বা দাতব্য কাজে সম্পূর্ণভাবে ব্যয়িত আয়ের জন্য যে পরিমাণ জমির প্রয়োজন, সেই পরিমাণ জমি এ ঊর্ধসীমা বিধানের আওতাভুক্ত থাকবে। এ নীট আয়-ব্যয় নিরূপণের উদ্দেশে রাজস্ব অফিসার মোতোওয়াল্লী সেবায়েত এর হিসাব রেজিষ্টার তবল করতে পারবেন।

বিধি-১৪৬। মালিক পরিবার বা সংস্থা সমর্পণযোগ্য সীমাতিরিক্ত জমি নির্বাচনে ব্যর্থ হলে রাজস্ব অফিসার সমর্পণযোগ্য জমি এমনভাবে নিরূপণ করবেন, যাতে মালিক পরিবার নিম্নোক্ত প্রাধিকার ক্রম অনুসারে জমি নিজের জন্য রাখতে পারে-

(ক) বসতবাড়ী, আংগিনা, সংশ্লিষ্ট জমি;

(খ) পুকুরসহ চাষযোগ্য বা আবাদযোগ্য নয় এরূপ জমি, যা রাজস্ব অফিসারের মতে মালিকের জন্য সুবিধাজনক; এবং

(গ) অব্যবহার্য অকৃষি জমি, যা খুবই মূল্যবান।

বিধি-১৪৭। জমির বিবরণী পাওয়ার পর উহা নিরীক্ষা করে এবং প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান চালিয়ে সংশ্লিষ্টপক্ষকে শুনানীর সুযোগ প্রদান করে সমর্পণযোগ্য জমি গ্রহণ করার আদেশ প্রদান করবেন।

বিধি-১৪৮। সমর্পিত জমি গ্রহণ সম্পর্কিত রাজস্ব অফিসারের আদেমের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসকের নিকট আপীল দায়ের করা যাবে। জেলা প্রশাসকের রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের নিকট আপীল দায়ের করা যাবে। বিভাগীয় কমিশনারের রায়ের বিরুদ্ধে ভূমি আপীল বোর্ডের নিকট আপীল দাযের করা যাবে এবং বোর্ডের আদেশ চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

বিধি-১৪৯। এ আইন বলে জমির জন্য নিম্নোক্ত হারে ক্ষতিপুরণ প্রদান করা হবে-

(ক) সমর্পিত জমির পরিমাণ ৫০ বিঘার বেশী না হলে ঐ সম্পত্তির বাজার মূল্যের শতকরা বিশ ভাগ হারে :

(খ) সমর্পিত জমির পরিমাণ ৫০ বিঘার বেশী হলে-

(১) প্রথম ৫০ বিঘার জন্য জমির বাজার মূল্যের শতকরা বিশ ভাগ;

(২) অবশিষ্ট জমির জন্য বাজার মূল্যের শতকরা দশ ভাগ।

বিধি-১৫০। ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের উদ্দেশে সমর্পিত জমির বাজার মূল্য নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে নির্ধারণ করতে হবে-

(ক) আইন বলবৎ হওয়ার পূর্বৈর ৪ মাসের নিকটবর্তী এলাকায় সমাশ্রেণীর জমির বিক্রয় মূল্য সাবরেজিষ্টার অফিস হতে সংগ্রহ করতে হবে এবং অস্বাভাবিক বেশী বা অস্বাভাবিক কম মূল্য বাদ দিতে হবে।

(খ) সকল জমির গড় বিক্রয় মূল্যকে বিক্রিত জমির পরিমাণ দিয়ে ভাগ করে একর প্রতি জমির মূল্য নিরূপণ করতে হবে। এভাবে নির্ধারিত গড় মূল্যকে বাজারমূল্য বলে গণ্য করতে হবে।

বিধি-১৫১। এ আইন বলবৎ হওয়ার পর কোন পরিবার বা সংস্থা ১০০ বিঘার অতিরিক্ত জমি উত্তরাধিকারসূত্র ব্যতীত অর্জন করলে জমির বিবরণী দাখিল করার পর অর্জন করলে এ সীমাতিরিক্ত অর্জিত জমি সরকারে বাজেয়াপ্ত হবে এবং উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত সীমাতিরিক্ত জমি সরকারে সমর্পিত হবে।

বিধি-১৫২। রাজস্ব অফিসার কর্তৃক ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট ৩০ দিনের মধ্যে আপীল দায়ের করা যাবে। জেলা প্রশাসকের রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে জেলা জজের নিকট আপীল করা যাবে এবং জেলা জজের রায় চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

বিধি-১৫৩। ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত বিষয় জেলা জজের নিকট উপরোক্তভাবে আপীল দায়ের ব্যতীত এ আইনের অধীনে গৃহীত কোন কার্যক্রম বা কর্তৃপক্ষের আদেশ সম্পর্কে কোন আদালতে প্রশ্ন করা যাবেনা। রাজস্ব অফিসারের লিখিত আরজী ব্যতীত এ আইনের অধীনে শাস্তিযোগ্য কোন অপরাধের জন্য কোন আদালত মামলা করবেনা।

বিধি-১৫৪। এ আইনের অধীনে দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য রাজস্ব অফিসার সুর্যোদয় হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোন সময়ে যেকোন জমিতে প্রবেশ করে পরিমাপ করতে পারবেন এবং যেকোন ব্যক্তিকে তার মালিকানা জমির বিবরণ বা হিসাবপত্র দাখিল করার জন্য লিখিতভাবে নির্দেশ প্রদান করতে পারেন। এ আইনের অধীনে তদন্ত/অনুসন্ধানকালে রাজস্ব অফিসার জমি সংক্রান্ত ব্যাপারে সাক্ষীর উপস্থিতি বা দলিল উপস্থাপনের জন্য দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের যাবতীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।

বিধি-১৫৫। যে সীমাতিরিক্ত জমি এ আইনের অধীনে সরকারের নিকট সমর্পণ করা হয়েছে বা সরকারে সমর্পিত হয়েছে বা সরকারে বাজেয়াপ্ত হয়েছে, রাজস্ব অফিসার দখলদারকে উচ্ছেদ করে ঐ জমির দখল তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করবেন।

বিধি-১৫৬। এ আইনের অধনে সীমাতিরিক্ত জমি নির্ধারণ করে উহার দখলগ্রহণ করার জন্য কালেক্টরগণ সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। সীমাতিরিক্ত জমি উদ্ধার ভূমি সংস্কার কর্মসূচী তথা খাসজমি ভূমিহীনদের মধ্যে বণ্টন কর্মসূচীর একটি প্রারম্ভিক অত্যাবশ্যক পদক্ষেপ।

 

সূত্র: বাংলাদেশের উপজাতিদের আইন- রামকান্ত সিংহ, ২০০৩

 

 

 

সৌজন্যে: প্যান লোকালাইজেশন প্রোজেক্ট