পার্বত্য জেলাসমূহ (আইন রহিত, প্রয়োগ ও বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৮৯

[১৯৮৯ সনের ১৬নং আইন]

 

 

Chittagong Hill Tracts Regulations, 1900 রহিব এবং পার্বত্য জেলাসমূহে কতিপয় প্রচলিত আইনের প্রয়োগ ও উক্ত জেলাসমূহ কতিপয় বিশেষ বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইন। যেহেতু Chittagong Hill Tracts Regulations, 1900 (Regulation 1 of 1900) রহিত করা এবং পার্বত্য জেলাসমূহ কতিপয় প্রচলিত আইন প্রয়োগ ও উক্ত জেলাসমূহের জন্য কিছু বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা সমীচিত ও প্রয়োজনীয়; সেহেতু এতদ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হল-

 

১। সংক্ষিপ্ত শিরনাম ও প্রবর্তন : ১) এ আইন পার্বত্য জেলাসমূহ (আইন রহিত ও প্রয়োগ এবং বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৮৯ নামে অভিহিত হবে।

     ২) সরকার সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা যে তারিখ নির্ধারণ করবে, সেই তারিখে এ আইন বলবৎ হবে।

২। সংজ্ঞা : বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী কোন কিছু না থাকলে এ আইনে-

ক) "পাব্যত্য জেলা" অর্থ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা ও বান্দরবন পার্বত্য জেলা;

খ) "চীফ" অর্থ চাকমা চীফ, বোমং চীফ ও মং চীফ;

গ) "হেডম্যান" অর্থ মৌজা হেডম্যান;

ঘ) "বিধি" অর্থ এ আইনের অধীন প্রণীত বিধি।

৩। Regulation 1 of 1900 রহিতকরণ : এ আইন প্রবর্তনের সাথে সাথে Chittagong Hill Tracts Regulations, 1900 (Regulation 1 of 1900), অতপর উক্ত Regulation বলে উল্লিখিত, রহিত হবে।

* আইনটি সংসদ কর্তৃক গৃহীত হবার পর বিগত ২রা মার্চ, ১৯৮৯ইং মোতাবেক ১৮ই ফাল্গুন, ১৩৯৫ বাংলা তারিখে রাষ্ট্রপতির সম্মতিলাভ করে এবং একই তারিখে সর্বসাধারণের অবগতির নিমিত্তে বাংলাদেশ গেজেট বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়।

৪। পার্বত্য জেলাসমূহে কতিপয় প্রচলিত আইন প্রয়োগ : উক্ত Regulations রহিত হবার অব্যবহিত পূর্বে যেসকল আইন পার্বত্য জেলাসমূহে প্রচলিত ছিলনা, সেসকল আইন এ আইন প্রবর্তনৈর সাথে সাথে উক্ত জেলাসমূহে প্রযোজ্য হবে।

৫। চীফগণ : ১) আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, উক্ত Regulations রহিত হবার পূর্বে পার্বত্য জেলাসমূহে যে চাকমা চীফ, রোমং বীফ ও মং চীফ প্রথা প্রচলিত ছিল তা বহাল থাকবে। তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত চীফগণের এখতিয়ার স্ব-স্ব জেলার মধ্যে সীমিত থাকবে।

                 ২) চীফের উত্তরাধিকারী এবং তার অভিষেক সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হবে।

                 ৩) চীফ, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কমিশন, সম্মানী ও অন্যবিধ সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন।

                 ৪) উক্ত Regulations রহিত হবার অব্যবহিত পূর্বে যারা চীফ ছিল তারা তাদের স্ব-স্বপদে বহাল থাকবে এবং কমিশন, সম্মানী বা অন্যবিধ সুযোগ সুবিধা হিসেবে         তারা যা ভোগ করত, তা অত্র আইনের বিধানাবলীর সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে যথাযথভাবে পরিবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত ভোগ করতে থাকবেন।

৬। হেডম্যান : ১) আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, পার্বত্য জেলাসমূহে ভূমি উন্নয়ন কর আদাযের জন্য উহাদের প্রত্যেক মৌজায় হেডম্যান থাকবেন এবং তারা তহশীলদারের ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবে।

                   ২) ডেপুটি কমিশনার হেডম্যান নিযুক্ত করবে এবং অযোগ্যতা বা অসদাচরণের কারণে তিনি তাকে তারপদ হতে অপসারণ করতে পারবেন।

                   ৩) হেডম্যান নিয়োগ বা অপসারনের পূর্বে ডেপুটি কমিশনার চীফের সহিত পরামর্শ করবেন।

                   ৪) হেডম্যান সরকারী কর্মচারী বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি বলে গণ্য হবেন না।

                   ৫) ডেপুটি কমিশনার সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে হেডম্যানের জন্য কমিশন, সম্মানী বা অন্যবিধ সুযোগ সুবিধা নির্ধারণ করবেন।

                   ৬) ডেপুটি কমিশনার সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী পূর্বানুমোদনক্রমে হেডম্যানকে অন্য কোন দায়িত্বও অর্পণ করতে পারবেন।

                   ৭) চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার অনুমোদন করলে চীফ যে মৌজার স্থায়ী বাসিন্দা, সেই মৌজা তার খাস মৌজা বলে গণ্য হবে এবং সেক্ষেত্রে উক্ত মৌজার হেডম্যানের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন সাপেক্ষে তিনি তার সম্মানীর অতিরিক্ত হিসেবে হেডম্যানের প্রাপ্য সম্মানীও প্রাপ্য হবে।

                   ৮) ডেপুটি কমিশনার প্রয়োজনবোধে চীফকে একাধিক মৌজার হেডম্যান নিযুক্ত করতে পারবেন।

                   ৯) উক্ত Regulation রহিত হবার অব্যবহিত পূর্বে পার্বত্য জেলাসমূহে যারা হেডম্যান পদে ছিলেন, তারা তাদের স্ব-স্ব পদে বহাল থাকবেন এবং অত্র ধারার অধীনে নিযুক্ত হয়েছিল বলে গণ্য হবেন। আর কমিশন, সম্মানী বা অন্যবিধ সুযোগ-সুবিধা হিসেবে তারা যা ভোগ করত তা এ আইনের বিধানাবলীর সহিত সামঞ্জস্য হওয়া সাপেক্ষে যথাযথভাবে পরিবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত ভোগ করতে থাকবেন।

৭। ঝুমচাষ : ১) আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, ডেপুটি কমিশনার পার্বত্য জেলাসমূহ ঝুমচাষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং এতদুদ্দেশে প্রয়োজনীয় আদেশ জারী ও প্রয়োগ করতে পারবেন।

                ২) ডেপুটি কমিশনার প্রয়োজনবোধে যেকোন এলাকাকে ঝুমচাষের জন্য নিষিদ্ধ এলাকা বলে ঘোষণা করতে পারবেন।

                ৩) কোন নিষিদ্ধ এলাকায় ঝুম ফসল উৎপাদিত হলে ডেপুটি কমিশনার উৎপাদিত ফসল বাজেয়াপ্ত করতে পারবেন এবং তজন্য উৎপাদনকারীকে ১০০ (একশত) টাকা পর্যন্ত জরিমানাও আরোপ করতে পারবেন।

৮। ঝুমকর আরোপ : ১) সরকার সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা ঝুমিয়ে পরিবারের ওপর ঝুমকর আরোপ করতে পারেন।

ব্যাখ্যা (Explanation) : "ঝুমিয়া পরিবার" বলতে ঝুম চাষরত ও একই ঝুম ফসল ভোগী একান্নভুক্ত পরিবারের সকল সদস্যকে বুঝাবে।

                ২) চীফ তার এলাকার স্থানীয় প্রথা অনুযায়ী ঝুমকর প্রদান হতে অব্যাহতি পাবার যোগ্য ঝুমিয়া পরিবারবর্গের একটি তালিকা প্রত্যেক বৎসর ১৫ই অক্টোবরের আগে ডেপুটি কমিশনারের অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করবেন এবং ডেপুটি কমিশনার কর্তৃক অনুমোদিত হলে অনুমোদিত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ঝুমিয়া পরিবারবর্গ ঝুমকর প্রদান হতে অব্যাহতি পাবে।

                ৩) যেসকল ঝুমিয়া পরিবার এক মৌজায় বাস করে অন্য মৌজায় ঝুমচাষ করে (তারা স্থানীয়ভাবে পারকুলিয়া বলে পরিচিত হবে) তাদেরকে যে মৌজায় তারা ঝুমচাষ করবে, সেই মৌজায় অতিরিক্ত ঝুমকর প্রদান করতে হবে এবং এই করের হার হবে সাধারণ ঝুমকরের অর্ধেক।

                ৪) উক্ত Regulation রহিত হবার অব্যবহিত পূর্বে পার্বত্য জেলাসমূহে ঝুমিয়া পরিবারবর্গের ওপর যে ঝুমকর আরোপিত ছিল, উহা এ ধারার অধীনে সরকার কর্তৃক আরোপিত হয়েছে বরে গণ্য হবে এবং সরকার কর্তৃক পরিবর্তিত না হওয়া পর্যন্ত উহা উক্ত Regualtion রহিত হবার অব্যবহিত পূর্বে যে হারে আরোপিত ছিল ঐহারে আরোপিত থাকবে।

৯। ঝুমকর আদায় ইত্যাদি : ১) প্রত্যেক বৎসর শেষ হবার পূর্বে ঝুমকর হেডম্যানের নিকট প্রদান করতে হবে এবং অনুরূপভাবে ঝুমকর প্রদান করা না হলে পরবর্তি বৎসরের পহেলা জানুয়ারীতে উহা বকেয়া বলে গণ্য করা হবে এবং এ বকেয়ার ওপর বার্ষিক শতকরা ৬.২৫ (ছয় টাকা পঁচিশ পয়সা) হারে সুদ প্রদেয় হবে।

                ২) ঝুমকর হতে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত একটি অংশ হেডম্যান নিজের জন্য কর্তন করে বাকী অংশ চীফের নিকট প্রদান করবে।

                ৩) উপধারা (৪)-এর অধীনে ঝুমকর হতে হেডম্যান ও চীফের প্রাপ্য অংশ নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত Regulation রহিত হবার অব্যবহিত পূর্বে উক্ত অংশ যে হারে নির্ধারিত ছিল, ঐ হারে প্রদেয় হবে।

                ৪) হেডম্যান চীফকে প্রদেয় ঝুমকরের অন্তত অর্ধেক পূণ্যাহের ছিল এবং অবশিষ্টাংশ ১৫ই জানুয়ারীর আগে চীফকে প্রদান করবে এবং উহার সঙ্গে বকেয়া করের তালিকা ও রসিদের চেকমুড়ি তার নিকট দাখিল করবেন এবং চীফ উক্ত তালিকা ও চেকমুড়ি, তৎসহ এ বিধান লংঘনকারী হেডম্যানের নাম ৩১শে জানুয়ারীর মধ্যে ডেপুটি কমিশনারের নিকট প্রেরণ করবেন এবং ডেপুটি কমিশনার যথাযথ তদন্তের পর বকেয়া কর সরকারী দাবী (Public demand) হিসেবে আদায়ের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

                ৫) ডেপুটি কমিশনার কর্তৃক আদায়কৃত ঝুমকর হতে সার্টিফিকেটের খরচ এবং হেডম্যানের প্রাপ্য অংশ বর্তিত হয়ে সরকারী রাজস্ব খাতে জমা হবে এবং অবশিষ্টাংশ চীফকে প্রদান করা হবে।

                ৬) ডেপুটি কমিশনার বিশেষ কারণে এবং চীফকে অবহিত করে এ নির্দেশ দিতে পারবেন যে, কোন মৌজার হেডম্যান বা ঝুমিয়া পরিবারবর্গ ঝুমকর চীফকে প্রদান না করে সরাসরি তার নিকট প্রদান করবেন।

                ৭) হেডম্যানের প্রতি উপধারা (৬)-এর অধীনে নির্দেশ জারী করা হলে ডেপুটি কমিশনার আদায়কৃত অর্থ হতে হেডম্যানের অংশ কর্তন করে অবশিষ্টাংশ চীফকে প্রদান করবেন এবং হ্যানম্যানের অংশ হতে তিনি প্রথমে হেডম্যান হতে সরকারের প্রাপ্য উসুল করে লইবে এবং তৎপর হেডম্যানের নিকট হতে ঝুমকর বাবদ চীফের অনাদায়ী প্রাপ্য উসুল করে অবশিষ্টাংশ হেডম্যানকে প্রদান করবেন।

                ৮) ঝুমিয়া পরিবারবর্গের প্রতি (৬) ধারার অধীনে নির্দেশ জারী করা হলে হেডম্যান ঝুমকর আদায় করলে তার যে অংশ হতে উহা আদায় খরচ বাবদ সরকারী রাজস্ব খাতে জমা করা হবে এবং অবশিষ্টাংশ চীফকে প্রদান করা হবে।

                ৯) চীফ প্রত্যেক বৎসর ৩১শে মার্চের মধ্যে তৎকর্তৃক প্রদেয় সরকারের প্রাপ্য প্রদান করবেন।

                ১০) যদি কোন হেডম্যান যুক্তিসঙ্গত কারণে বিশ্বাস করে যে, কোন ঝুমিয়া পরিবার ঝুমকের প্রদান না করে তার এলাকা ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতে চায়, তাহলে তিনি উক্ত ঝুমিয়া পরিবারের সম্পত্তি আটক করতে পারবেন এবং বিষয়টি অবিলম্বে চীফ বা ডেপুটি কমিশনারের গোচরে আনবে এবং হেডম্যান যদি উক্ত প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে অবহেলা করেন, তাহলে অনাদয়ী করের জন্য হেডম্যানকে দায়ী করা যাবে।

১০। ঝুমকর হ্রাস ইত্যাদি : ১) ডেপুটি কমিশনার, চীপ এবং হেডম্যানের সহিত পরামর্শক্রমে-

 (ক) যুক্তিসঙ্গত কারণে কোন বিশেষ ক্ষেত্রে ঝুমকর হ্রাস বা মওকুফ করতে পারবেন;

 (খ) ফসলহানির কারণে কোন বিশেষ এলাকায় ঝুমকর হ্রাস বা মওকুফ করতে পারবেন; এবং উক্তরূপ কর হ্রাস বা মওকুফের বিষয়টি সম্পর্কে কমিশনারের মাধ্যমে সরকারকে লিখিতভাবে অবহিত করবেন। উপধারা (১ক) এর অধীনে ঝুমকর হ্রাস বা মওকুফের কারণে চীফের নিকট হতে সরকারের প্রাপ্য হ্রাস বা মওকুফ হবেনা; কিন্তু উপধারা (১খ) এর আওতায় ঝুমকর হ্রাস বা মওকুফের ফলে যে পরিমাণ কর হ্রাস বা মওকুফ হয়েছে, ঐ পরিমাণ কর হতে চীফ কর্তৃক সরকারের প্রদেয় অংশ প্রদান করতে হবেনা।

১১। ঝুম তৌজি : ১) হেডম্যান প্রত্যেক বৎসরের জন্য একটি ঝুম তৌজি প্রস্তুত করবে এবং উহাতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ করবে; যথা- ক) প্রত্যেক ঝুম পরিবারের কর্তার নাম এবং পরিবারের সদস্য সংখ্যা; খ) তারা ঝুমকর দেয় কিনা বা তারা পারকুলিয়া কিনা বা তারা ঝুমকর হতে অব্যাহতি প্রাপ্ত হলে কি কারণে অব্যাহতি প্রাপ্ত; গ) পরিবারটি পূর্বে না মধ্যে তার মৌজায় এসেছে।

                ২) হেডম্যান ১লা জুনের পূর্বে ঝুম তৌজি চীফের নিকট প্রেরণ করবেন এবং চীফ ১লা আগস্টের আগে তৌজিগুলো ডেপুটি কমিশনারের নিকট প্রেরণ করবেন।

                ৩) ডেপুটি কমিশনার প্রত্যেক ৫ (পাঁচ) বৎসরে একবার প্রত্যেক তৌজির শুদ্ধতা পরীক্ষা করে দেখবেন।

                ৪) হেডম্যান শুদ্ধ তৌজি এবং ঝুমকরের হিসাব রেখেছে কিনা এবং চেকমুড়ি সংযুক্ত ছাপানো রসিদ প্রদান করে কিনা তা দেখার দায়িত্ব চীফের ওপর ন্যস্ত থাকবে।

১২। অনুমোদিত পাওনা নিষিদ্ধ : হেডম্যান বা চীফ ঝুমিয়াগণ বা জমির কোন মালিক হতে স্থানীয় প্রথা অনুযায়ী প্রদেয় অথচ অসন্তোষ সৃষ্টিকারী নহে এ প্রকার পাওনা অথবা সরকার কর্তৃক বিশেষভাবে অনুমোদিত হয়েছে এ প্রকার পাওনা ব্যতীত আবওয়ার ও নজরসহ অন্য কোন প্রকার পাওনা গ্রহণ করতে পারবেনা।

১৩। শনঘাস অহরণের অধিকার : ডেপুটি কমিশনার যুক্তিসঙ্গত মনে করলে পার্বত্য জেলাসমূহে পাহাড়ী লোকদেরকে তাদের গৃহে ব্যবাহরের জন্য বিনা রয়ালটিতে শনঘাস আহরণের অনুমতি দিতে পারবেন।

১৪। গোচারণ কর : ১) পার্বত্য জেলাসমূহে পালিত, রক্ষিত বা চারণরত সকল গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও গয়ালের ওপর গোচারণ কর আরোপযোগ্য হবে এবং কি হারে ঐ কর আরোপ করা হবে, কি প্রকারে উহা আদায় করা হবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে উহা হ্রাস বা মওকুফ করা যাবে বা আরোপ করা যাবেনা, তা বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে।

                ২) উপধারা (১)-এর অধীনে বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত Regulation বাতিল হবার অব্যবহিত পূর্বে পার্বত্য জেলাসমূহে যে হারে যে যে ক্ষেত্রে গোচারণ কর আরোপিত ছিল এবং যে পদ্ধতিতে উহা আদায়যোগ্য ছিল, উহা ঐ হারে এবং সেই পদ্ধতিতে আদায়যোগ্য হবে।

১৫। বসতবাড়ীর জন্য গ্রামীণ জমি দখল : ১) কোন পাহাড়ী ব্যক্তি পৌর এলাকা বহির্ভুত অনধিক ত্রিশ (৩০) শতাংশ পর্যন্ত খাস জমি তার নিজ বসতবাড়ীর জন্য হেডম্যানের অনুমতিক্রমে বিনা বন্দোবস্তিতে দখল করতে পারবেন।

                ২) হেডম্যান (১) উপধারার অধীনে অনুমতি প্রদত্ত বসতবাড়ীর একটি রেজিষ্টার সংরক্ষণ করবেন।

                ৩) কোন পাহাড়ী ব্যক্তি ত্রিশ শতাংশের অধিক পৌর এলাকা বহির্ভুত খাস জমি তার নিজ বসতবাড়ীর জন্য দখল করতে চাইলে ডেপুটি কমিশনারের নিকট হতে তাকে উক্ত জমির বন্দোবস্ত গ্রহণ করতে হবে এবং উক্ত প্রকার বন্দোবস্তকৃত জমি অকৃষি জমি বলে গণ্য হবে।

                ৪) ডেপুটি কমিশনার (১) উপধারার অধীনে বিনা বন্দোবস্তিতে দখলকৃত কোন জমি জনস্বার্থে পুনঃগ্রহণ করতে পারবে এবং সেক্ষেত্রে জমি দখলকারীকে তৎকর্তৃক প্রস্তুতকৃত বাড়ীঘর, উৎপাদিত ফসলাদি বা রোপিত বৃক্ষাদির জন্য ডেপুটি কমিশনার কর্তৃক বাজারমূল্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।

১৬। দলিল রেজিষ্টারী ফিস : আপতত বলবৎ অন্যকোন আইনে যা কিছু থাকুক না কেন, সরকার সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা পার্বত্য জেলাসমূহের যেকোন উপজাতি বা উপজাতির সদস্য কর্তৃক প্রদেয় দলিল রেজিষ্টারী ফিসের হার হ্রাস করতে পারবে।

১৭। বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা : এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা বিধি প্রণয়ন করতে পারবে।

 

মোহাম্মদ আইয়ুবুর রহমান

সচিব

 

সূত্র: বাংলাদেশের উপজাতিদের আইন- রামকান্ত সিংহ, ২০০৩

 

সৌজন্যে: প্যান লোকালাইজেশন প্রোজেক্ট