খায়খালাসী বন্ধক আইন

 

খায়খালাসী বন্ধক

সহজভাবে বলা চলে খায়খালাসী বন্ধকের অর্থ, বন্ধকের সময় জমির উৎপন্ন ফসল থেকে বন্ধকের টাকা সুদে আসলে শোধ হয়ে যাবে ও নির্দিষ্ট সময়সীমা শেষ হলে কোন টাকা পরিশোধ ছাড়াই মালিক জমি ফেরৎ পাবে। অর্থাৎ জমির ফসল খেয়ে যে বন্ধক শোধ হয় তাকেই খায়খালাসী বন্ধক বলে।

 

খায়খালাসী বন্ধকের মেয়াদ

খায়খালাসী বন্ধকের সময়সীমা ৭ বৎসর, জমির মালিক কোন রকম টাকা পরিশোধ ছাড়াই ৭ বৎসর পার হলে বন্ধকী জমি ফেরৎ পাবে। এমনকি বন্ধকী দলিলে যদি ৭ বছরের বেশী লেখা থাকে তবুও আইন নির্ধারিত ৭ বছরই মানতে হবে, এর বেশী নয়।

 

যদি ৭ বছর পার হওয়ার পর কোন বন্ধক গ্রহীতা স্বেচ্ছায় জমির মালিককে দলিলপত্রসহ জমির দখল বুঝিয়ে না দেয় তবে বন্ধকী জমি উদ্ধারের জন্য বন্ধকদাতা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কাছে আবেদন করবে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) বন্ধক গ্রহীতাকে জমি থেকে উচ্ছেদ করে বন্ধক দাতাকে জমির দখল বুঝিয়ে দেবেন।

 

যে কোন খায়খালাসী বন্ধকী জমি সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই ইচ্ছা করলে ছাড়ানো যায়, তবে অনতিবাহিত সময়ের জন্য টাকা বন্ধক দাতা বন্ধক গ্রহীতাকে শোধ করে দেবেন।

 

যেমন : ৭০০ টাকার বিনিময়ে কেউ ১ বিঘা জমি ৭ বছরের জন্য খায়খালাসী বন্ধক দিল। ৫ বছর পর জমিটি বন্ধক দাতা ফেরত চাইল। তখন অনতিবাহিত ২ বছর এর টাকা ফেরত দিতে হবে অর্থাৎ ২০০ টাকা দিতে হবে নতুবা জমি পাবেনা।

 

কতিপয় ক্ষেত্রে জমি বিক্রি খায়খালাসী বন্ধক বলে বিবেচিত হয়

ক. ফেরত পাওয়ার চুক্তিতে জমি বিক্রি হলে তাও খায়খালাসী বন্ধক বলেই বিবেচিত হবে। যেমন- কেউ টাকার বিনিময়ে তার জমি অন্যের নামে রেজিষ্ট্রি করে দিল। সে আবার জমির ক্রেতার সঙ্গে একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয় যে- সে যদি দলিলের টাকা ফেরৎ দেয় তাহালে ক্রেতা তাকে জমি ফেরৎ দিতে বাধ্য থাকবে। এই ধরনের শর্তাধীন বিক্রয় আইনে খায়খালাসী বন্ধক হিসেবে চিহ্নিত হয়।

খ. অনধিক তিন এক কৃষি জমির মালিক কোন কৃষক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার বা জীবনধারণে অক্ষমতাজনিত অসহায়তার কারণে অনধিক ত্রিশ হাজার টাকা মূল্যের অনধিক এক একর পরিমাণ কৃষি জমি বিক্রয় করলে এবং প্রকৃত জমির বিক্রয়মূল্য বিক্রয়কালীন সময়ে সমশ্রেণীর জমির প্রচলিত বাজারমূল্য হতে কম হয়ে থাকলে উক্ত কৃষক এই বিক্রয় বাতিল ঘোষণা করার জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যথাথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ যথাযথ মনে করলে ্কু্ত বিক্রয় বাতিল ঘোষণা করতে পারবে এবং তখন উক্ত বিক্রয় খায়খালাসী বন্ধক হিসাবে গণ্য হবে। তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত জমি ১লা জানুয়ারী, ১৯৯৯ তারিখের পূর্বে পুনরায় হস্তান্তরিত হয়ে থাকলে বা ঐ তারিখের পূর্বে উহার উপর কোন শিল্প কারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা ইমারত স্থাপনের জন্য বা অন্য কোন কারণে উহার প্রকৃতি স্থায়ীভাবে পরিবর্তীত হয়ে থাকলে, উক্ত জমির বিক্রয় খায়খালাসী বিক্রয় হিসাবে গণ্য হবে না।

* উক্তরূপ কোন জমি বিক্রয় বাতিল ঘোষিত হলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যাহা তিন মাসের অধিক হবে না, বিক্রিত জমির দখল বিক্রেতার নিকট ক্রেতা প্রত্যার্পন করবে।

* বিক্রয় বাতিল ঘোষিত হলে বিক্রয়মূল্য সুদমুক্ত ঋণ বলে গণ্য হবে।

* দলিল রেজিষ্ট্রির তারিখ হতে জমি প্রত্যার্পণের তারিখ পর্যন্ত ক্রেতা উক্ত জমি হতে যে পরিমাণ আয় করেছেন তার সমপরিমাণ অর্থ বিক্রয়মূল্য হতে বাদ দিয়ে পরিশোধ্য সুদমুস্ত ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করলে এবং উহার অনধিক দশটি বার্ষিক কিস্তিতে ক্রেতা বিক্রেতাকে পরিশোধ করবে।

* কোন কৃষক উক্তরূপে তার নিকট প্রত্যার্পিত কোন কৃষি জমি, প্রথ্যার্পনের তারিখ হতে তিন বৎসরের মধ্যে অন্য কোথাও হস্তান্তর করতে পারবে না।

 

মহাজনী ঋণ সংক্রান্ত আইন

মহাজনী ঋণ অর্থ লিখিত বা মৌখিক চুক্তি বলে, আমানতসহ বা জামানত ব্যতিরেকে টাকার বা শস্যে বা শস্যবীজে পরিশোধ্য এমন ঋণ যা-

ক. টাকায় পরিশোধের ক্ষেত্রে, আসল ঋণের উপর বার্ষিক শতকরা বিশ টাকা বা তদুর্ধ্ব হারে অতিরিক্ত অর্থসহ পরিশোধ্য এবং

খ. শস্যে বা শস্যবীজে পরিশোধের ক্ষেত্রে আসল ঋণের উপর বার্ষিক এক-পঞ্চমাংশ বা তদুর্ধ্ব পরিমাণ অতিরিক্ত শস্য বা শস্যবীজসহ পরিশোধ্য।

* কোন ব্যক্তি মহাজনী ঋণের জামানত হিসাবে কোন কৃষকের নিকট হতে তার দস্তখত বা টিপসহিযুক্ত অলিখিত ষ্ট্যাম্প কাগজ গ্রহণ করতে পারবেন না।

* কোন ব্যক্তি মহাজনী ঋণের শর্ত হিসাবে ঋণ গ্রহীতার জমির উৎপাদিত ফসল কোন প্রকারের অগ্রীম ক্রয় করতে পারবেন না বা তার বাড়ীতে বা তার নির্ধারিত কোন স্থানে উঠাইতে পারবে না।

* কোন ব্যক্তি খায়খালাসী বন্ধক ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে মহাজনী ঋণের জামানত হিসাবে কোন কৃষকের কোন কৃষি জমির দখল গ্রহণ অথবা নিজের বা অন্য কারও অনুকূলে উহা দায়বদ্ধ করতে পারবেন না।

 

মহাজনী ঋণগ্রহীতা প্রাপ্ত আইনগত সুবিধা

কোন মহাজনী ঋণ গ্রহীতা কর্তৃক গৃহীত ঋণের পরিমাণ এবং উহার উপর প্রদেয় সুদের পরিমাণ এবং উক্ত নির্ধারিত ঋণ ও সুদের ন্যায় সংগত কিস্তি নির্ধারণের জন্য নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করতে পারেন।

মহাজনী ঋণ গ্রহীতা ঋণের জামানত হিসাবে তার দস্তখত বা টিপসহিযুক্ত অলিখিত ষ্ট্যাম্প কাগজ ঋণ দাতার নিকটে জমা দিয়ে থাকলে, তিনি উহা ফেরত পাবার জন্য নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করতে পারবেন। কর্তৃপক্ষ উক্ত আবেদনের যথার্থতা যাচাই করিয়া সন্তুষ্ট হলে, উক্ত ষ্ট্যাম্প কাগজ বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের মধ্যে প্রত্যার্পন করবার জন্য ঋণদাতাকে নির্দেশ দিবেন ঋণ দাতা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রত্যার্পন না করলে উক্ত ষ্ট্যাম্প কাগজ বাতিল এবং আইনগত: অসিদ্ধ বলে গণ্য হবে।

 

 

তথ্যসূত্র: প্রশিক্ষণ হ্যান্ডআউট, ভূমি আইন, ব্যবস্থাপনা ভূমিতে অধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষশণ - এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি)

 

সৌজন্যে: প্যান লোকালাইজেশন প্রোজেক্ট