উপজাতি-আদিবাসদের জমি হস্তান্তর সংক্রান্ত মামলা পরিচালনা পদ্ধতি

 

    রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ৯৭ ধারার বিধান মোতাবেক আদিবাসী ও উপজাতীয় ভূমি হস্তান্তরের বিধিনিষেধ বর্ণনা করা হয়েছে। অত্র ধারায় ১ হতে ১০টি উপধারা আছে। সমগ্র ধারা-উপধারার সারমর্ম নিম্নরূপ হয়ে থাকে- আদিবাসী অর্থাৎ সাঁওতাল, হাজং, গারো, মগ, হদি, ইত্যাদি জনজাতিগণ নিজ গোত্র ব্যতীত অন্যের নিকট সাধারণ নিয়মে জমি হস্তান্তর করতে পারেন না। অর্থাৎ আদিবাসী ছাড়া অন্য কেউ জমি ক্রয় করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এলাকার রাজস্ব অফিসারের অনুমতি লাগবে। এমনকি রেজিষ্ট্রী করার পূর্বের দলিলও হস্তান্তর চুক্তি অনুযায়ী রেভিনিউ অীফসারের নিকট থেকে অনুমতি নিয়ে সম্পাদন করতে হবে। যদি কেউ এরূপ অনুমতি ব্যতীত আদিবাসীর নিকট থেকে জমি ক্রয় করে, তবে তা বাতিল বলে গণ্য করা হবে। ৫ উপধারা মোতাবেক একজন আদিবাসী তার ভূমি কেবলমাত্র খায় খালাসী বন্ধক দিতে পারবে। কিন্তু আদিবাসী ব্যতীত অন্য কারো সাথে কোনরূপ বন্ধক দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারবেনা। আদিবাসীদের জোত জমির ব্যাপারে কোন আদালত হতে বিক্রি করার আদেশ জারী করা যাবেনা। তবে এক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হল যে, সার্টিফিকেট মামলার ক্ষেত্রে ইহা প্রযোজ্য নয় (৯ উপধারা)।

    ইহার পদ্ধতিগত পর্যালোচনায় দেখা যায়, কোন অউপজাতি ব্যক্তি, অর্থাৎ আদিবাসী ব্যতীত অন্যকোন বাংলাদেশী যদি উপজাতি কিম্বা আদিবাসীর কোন ভূমি ক্রয় করতে চান, তবে রাজস্ব অফিসার তথা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)-এর নিকট দরখাস্ত দাখিল করতে হয়। এমতাবস্থায় উক্ত দরখাস্ত প্রাপ্তির পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সংশ্লিষ্ট থানা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তথা রাজস্ব অফিসারকে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে থাকেন। আদিবাসীর প্রস্তাবিত জমি বিক্রয়ের বিষয়টি যদি সঠিক হয়ে থাকে, তাহলে তখন সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) তার শর্তমত সহকারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবর তার প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। উক্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বা কালেক্টর বিক্রয় সংক্রান্ত প্রস্তাবিত জমির হস্তান্তরের লিখিত অনুমতি দিয়ে থাকেন। অতপর উক্ত ব্যাপারে লিখিত অনুমতি পাবার পর বিক্রয় বিষয়ক প্রস্তাবিত ও সম্পাদিত দলিলের সাথে সংযুক্ত করে সাবরেজিষ্ট্রী অফিসে দাখিল করা হলে সংশ্লিষ্ট সাবরেজিষ্ট্রী অফিসার বর্ণিত দলিলটি রেজিষ্ট্রী করতে পারেন। অবশ্য উপরোক্ত নিয়মের কোন ধরণের ব্যতিক্রম হলে বিক্রয় এবং দলিল বাতিল বলে গণ্য করা হবে এবং তদ্ভাবে ক্রয়কৃত জমিতে ক্রেতার কোন দখল বা মালিকানা বর্তাবে না। শুধু তাই নহে, রেভিনিউ অফিসার যেকোন সময় উক্ত বিক্রীত ভূমির দখল গ্রহণ করতে পারবেন এবং উক্ত ভূমি সংশ্লিষ্ট আগিবাসীর নিকট পুনরায় ফিরিয়ে দিতে পারবেন।

    উল্লেখ থাকে যে, এতদ বিষয়ে যদি মূল আদেশ সহকারী কমিশনার (ভূমি) দিয়ে থাকেন, তবে তার আদেশের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবরে আপীল আবেদন এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) যদি মূল আদেশ দিয়ে থাকন, সেক্ষেত্রে তার আদেশের বিরুদ্ধ বিভাগীয় কমিশনারের নিকট আপীল দায়ের করা যাবে।

 

সূত্র: বাংলাদেশের উপজাতিদের আইন- রামকান্ত সিংহ, ২০০৩

 

সৌজন্যে: প্যান লোকালাইজেশন প্রোজেক্ট