পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক শান্তিচুক্তি; ১৯৯৭

[তারিখ : ০২-১২-২৯৯৭]

 

        বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের আওতায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি পূর্ণ অবিচল আনুগত্য বজায় রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমুন্নত এবং আর্থসামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিকের স্ব-স্ব অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নের লক্ষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তরফ হতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অধিবাসীদের পক্ষ হতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি নিম্নে বর্ণিত চারি খণ্ড (ক, খ, গ ও ঘ) সম্বলিত চুক্তিতে উপনীত হলেন :
 

ক. সাধারণ :

১. উভয়পক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করে এ অঞ্চলের বৈশিষ্ট সংরক্ষণ এবং এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন অর্জন করার প্রয়োজনয়িতা স্বীকার করেছে।

২. উভয়পক্ষ এ চুক্তির আওতায় যথাশীঘ্র ইহার বিভিন্ন ধারায় বিবৃত ঐকমত্য ও পালনীয় দায়িত্ব অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আইন, বিধানাবলী, রীতিসমূহ প্রণয়ন, পরিবর্তন, সংশোধন ও সংযোজন আইন মোতাবেক করা হবে বলে স্থিরিকৃত করেছেন।

৩. এ চুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পরিবীক্ষণ করার লক্ষে নিম্নেবর্ণিত সদস্য সমন্বয়ে একটি বাস্ত বায়ন কমিটি গঠন করা হবে;

 

অ.

প্রধানমন্ত্রী কর্র্তক মনোনীত একজন সদস্য

আহবায়ক

আ.

এ চুক্তির আওতায় গঠিত টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান

সদস্য

ই.

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি

সদস্য

 

৪. এ চুক্তি উভয়পক্ষ কর্তৃক সম্পাদিত ও সহি করার তারিখ হতে বলবৎ হবে। বলবৎ হবার তারিখ হতে এ চুক্তি অনুযায়ী উভয়পক্ষ হতে সম্পাদনীয় সকল পদক্ষেপ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এ চুক্তি বলবৎ থাকবে।

 

খ. পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ/পার্বত্য জেলা পরিষদ :

উভয়পক্ষ এ চুক্তি বলবৎ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যমান পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯ (রাঙামাটি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন ১৯৮৯, বান্দরবন পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন ১৯৮৯, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন ১৯৮৯) এবং এর বিভিন্ন ধারাসমূহের নিম্নেবর্ণিত পরিবর্তন, সংশোধন, সংযোজন ও অবলোপন করার বিষয়ে ও লক্ষে একমত হয়েছেন;

 

১. পরিষদের আইনে বিভিন্ন ধারায় ব্যবহৃত "উপজাতি" শব্দটি বলবৎ থাকবে।

২. "পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ" এর নাম সংশতদপরিবর্তে এ পরিষদ "পার্বত্য জেলা পরিষদ" নামে অভিহিত হবে।

৩. "অ-উপজাতীয় স্থায়ী বাসিন্দা" বলতে যিনি উপজাতীয় নহেন এবং যার পার্বত্য জেলায় বৈধ জায়গা জমি আছে এবং যিনি পার্বত্য জেলার সুনির্দিষ্ট ঠিকানায় সাধারণত বসবাস করেন তাকে বুঝাবে।

৪.     ক. প্রতিটি পার্বত্য জেলা পরিষদে মহিলাদের জন্য ৩ (তিন) টি আসন থাকবে। এসব আসনের এক তৃতীয়াংশ (১/৩) অ-উপজাতীয়দের জন্য হবে

        খ. ৪ নম্বর ধারার উপধারা ১, ২ ও ৪ মূল আইন মোতাবেক বলবৎ থাকবে।

        গ. ৪ নম্বর ধারার উপধারা (৫-এর দ্বিতীয় পংক্তিতে অবস্থিত "ডেপুটি কমিশনার" এবং "ডেপুটি কমিশনারের" শব্দগুলোর পরিবর্তে যথাক্রমে "সার্কেল চীফ" এবং "সার্কেল চীফের" শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হবে।

        ঘ. ৪ নম্বর ধারায় নিম্নোক্ত উপধারা সংযোজন করা হবে- "কোন ব্যক্তি অ-উপজাতীয় কিনা এবং হলে তিনি কোন সম্প্রদায়ের সদস্য তা সংশ্লিষ্ট মৌজার হেডম্যান/ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/ পৌরসভার চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেট দাখিল সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট সার্কেলের চীফ স্থির করবেন এবং এতদ সম্পর্কে সার্কেল চীফের নিকট হতে প্রাপ্ত সার্টিফিকেট ব্যতীত কোন ব্যক্তি অ-উপজাতীয় হিসেবে কোন অ-উপজাতীয় সদস্য পদের জন্য প্রার্থী হতে পারবেন না।"

৫. ৭ নম্বর ধারায় বর্ণিত আছে যে, চেয়ারম্যান বা কোন সদস্য পদে নির্বাচিত স্যক্তি তার কার্যভার গ্রহণের পূর্বে চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনের সম্মুখে শপথগ্রহণ বা ঘোষণা করবেন। ইহা সংশোধন করে "চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার"-এর পরিবর্তে "হাইকোর্ট ডিভিশনের কোন বিচারপতি" কর্তৃক সদস্যরা শপথগ্রহণ বা ঘোষণা করবেন- অংশটুকু সন্নিবেশ করা হবে।

৬. ৮ নম্বর ধারার চতুর্থ পংক্তিতে অবস্থিত "চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনারের নিকট" শব্দগুলিার পরিবর্তে "নির্বাচন বিধি অনুসারে" শব্দগুলো প্রতিস্থাপন করা হবে।

৭. ১০ নম্বর ধারার চতুর্থ পংক্তিতে অবস্থিত "তিন বৎসর" শব্দগুলোর পরিবর্তে "পাঁচ বছর" শব্দগুলো প্রতিস্থাপন করা হবে।

৮. ১৪ নম্বর ধারার চেয়ারম্যানের পদ কোন কারণে শূন্য হলে বা তার অনুপস্থিতিতে পরিষদের অন্যান্য দায়িত্ব পালন করবেন বলে বিধান থাকবে।

৯. বিদ্যমান ১৭নং ধারা নিম্নে উল্লিখিত বাক্যগুলো দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে : আইনের আওতায় কোন ব্যক্তি ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারবেন, যদি তিনি (১) বাংলাদেশের নাগরিক হন, (২) তার বয়স ১৮ বৎসরের কম না হয়, (৩) কোন উপযুক্ত আদালত তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ ঘোষণা না করে থাকেন, (৪) তিনি পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হন।

১০. ২০ নম্বর ধারার (২) উপধারায় "নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ" শব্দগুলো স্বতন্ত্রভাবে সংযোজন করা হবে।

১১. ২৫ নম্বর ধারার উপধারা (২) এ পরিষদের সকল সভায় চেয়ারম্যান এবং তার অনুপস্থিতিতে অন্যান্য সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত একজন উপজাতীয় সদস্য সভাপতিত্ব করবেন বলে বিধান থাকবে।

১২. যেহেতু খাগড়াছড়ি জেলার সমস্ত অঞ্চল মং সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত নহে, সেহেতু খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার আইনে ২৬ নম্বর ধারায় বর্ণিত "খাগড়াছড়ি মং চীফ" এর পরিবর্তে "মু সার্কেলের চীফ এবং চাকমা সার্কেলের চীফ" শব্দগুলো প্রতিস্থাপন করা হবে। অনুরূপভাবে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সভায় বোমাং সার্কেলের চীফেরও উপস্থিত থাকার সুযোগ রাখা হবে। একইভাবে বান্দরবন জেলা পরিষদের সভায় বোমাং সার্কেলের চীফ ইচ্ছা করলে বা আমন্ত্রিত হলে পরিষদের সভায় যোগদান করতে পারবেন বলে বিধান রাখা হবে।

১৩. ৩১ নম্বর ধারার উপধারা (১) ও উপধারা (২) এ পরিষদে সরকারের উপসচিব সমতুণ্য একজন মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সচিব হিসেবে থাকবেন এবং এ পদে উপজাতীয় কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে বলে বিধান থাকবে।

১৪.     (ক) ৩২ নম্বর ধারার উপধারা (১) এ পরিষদের কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের নিমিত্তে পরিষদ সরকারের অনুমোদনক্রমে বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদ সৃষ্টি করতে পারবেন বলে বিধান থাকবে।

          (খ) ৩২ নম্বর ধারার উপধারা (২) সংশোধন করে নিম্নোক্তভাবে প্রণয়ন করা হবে; "পরিষদ প্রবিধান অনুযায়ী তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে কর্মচারী নিয়োগ করতে এবং তাদেরকে বদলী ও সাময়িক বরখাস্ত, অপসারণ বা অন্য কোন প্রকার শাস্তি প্রদান করতে পারবেন। তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলার উপজাতীয় বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার বজায় রাখতে হবে।"

          (গ) ৩২ নম্বর ধারার উপধারা (৩) এ পরিষদের অন্যান্য পদে সরকার পরিষদের পরামর্শক্রমে বিধি অনুযায়ী কর্মকর্তা নিয়োগ করতে পারবেন এবং এসকল কর্মকতৃঅকে সরকার অন্যত্র বদলী, সাময়িক বরখাস্ত, অপসারণ অথবা অন্যকোন প্রকার শান্তি প্রদান করতে পারবেন বলে বিধান থাকবে।

১৫. ৩৩ নম্বর ধারার উপধারা (৩) এ বিধি অনুযায়ী হবে বলে উল্লেখ থাকবে।

১৬. ৩৬ নম্বর ধারার উপধারা (১) এর তৃতীয় পংক্তিতে অবস্থিত "অথবা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোন প্রকারে" শব্দগুলো বিলুপ্ত করা হবে।

১৭. (ক) ৩৭ নম্বর ধারা (১) উপধারার চতুর্থতঃ এর মূল আইন বলবৎ থাকবে। (খ) ৩৭ নম্বর ধারার (২) উপধারা (ঘ)-তে বিধি অনুযায়ী হবে বলে উল্লেখিত হবে।

১৮. ৩৮ নম্বর ধারার উপধারা (৩) বাতিল করা হবে এবং উপধারা (৪) সংশোধন করে নিম্নোক্তভাবে এ উপধারা প্রণয়ন করা হবে : কোন অর্থ বৎসর শেষ হবার পূর্বে যেকোন সময় সেই অর্থ বৎসরের জন্য, প্রয়োজন হলে, একটি বাজেট প্রণয়ন ও অনুমোদন করা যাবে।

১৯. ৪২ নম্বর ধারায় নিম্নোক্ত উপধারা সংযোজন করা হবে : পরিষদ সরকার হতে প্রাপ্য অর্থে হস্তান্তরিত বিষয়সমূহের উন্নয়ন, প্রকল্প প্রণয়ন, গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারবেন এবং জাতীয় পর্যায়ে গৃহীত সকল উন্নয়ন কার্যক্রম পরিষদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করবে।

২০. ৪৫ নম্বর ধারার উপধারা (২) এর দ্বিতীয় পংক্তিতে অবস্থিত "সরকার" শব্দটির পরিবর্তে "পরিষদ" শব্দটি প্রতিস্থাপন করা হবে।

২১. ৫০, ৫১ ও ৫২ নম্বর ধারাগুলো বাতিল করে তদ্পরিবর্তে নিম্নোক্ত ধারা প্রণয়ন করা হবে : এ আইনের উদ্দেশের সহিত পরিষদের কার্যকলাপের সামঞ্জস্য সাধনের নিশ্চয়তা বিধানকল্পে সরকার প্রয়োজনে পরিষদকে পরামর্শ প্রদান বা অনুশাসন করতে পারবেন। সরকার যদি নিশ্চিতভাবে এরূপ প্রমাণ লাভ করে থাকে যে, পরিষদ বা পরিষদের পক্ষে কৃত বা প্রস্তাবিত কোন কাজকর্ম আইনের সহিত সঙ্গতিপূর্ণ নহে অথবা জনস্বার্থের পরিপন্থী, তাহলে সরকার লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরিষদের নিকট হতে তথ্য ও ব্যাখ্যা চাহিতে পারবে এবং পরামর্শ বা নির্দেশ প্রদান করতে পারবে।

২২. ৫৩ ধারার (৩) উপধারার "বাতিল থাকার মেয়াদ শেষ হলে" শব্দগুলো বাতিল করে তদপরিবর্তে "এই আইন" শব্দটির পূর্বে "পরিষদ বাতিল হলে নব্বই দিনের মধ্যে" শব্দগুলো সন্নিবেশ করা হবে।

২৩. ৬১ নম্বর ধারার তৃতীয় ও চতুর্থ পংক্তিতে অবস্থিত "সরকারের" শব্দটির পরিবর্তে "মন্ত্রণায়য়ের" শব্দটি প্রতিস্থাপন করা হবে।

২৪. (ক) ৬২ নম্বর ধারার উপধারা (১) সংশোধন করে নিম্নোক্তভাবে ও উপধারাটি প্রণয়ন করা হবে : আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনের যা কিছুই থাকুক না কেন, পার্বত্য জেলা পুলিশের সাবইন্সপেক্টর ও তদনিম্ন স্তরের সকল সদস্য প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরিষদ কর্তৃক নিযুক্ত হবেন এবং পরিষদ তাদের বদলী ও প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলার উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার বজায় রাখতে হবে।

      (খ) ৬২ নম্বর ধারার উপধারা (৩) এর দ্বিতীয় পংক্তিতে অবস্থিত "আপাততঃ বলবৎ অন্য সকল আইনের বিধান সাপেক্ষে" শব্দগুলো বাতিল করে তদপরিবর্তে "যথা আইন ও বিধি অনুযায়ী" শব্দগুলো প্রতিস্থাপন করা হবে।

২৫. ৬৩ নম্বর ধারার তৃতীয় পংক্তিতে অবস্থিত "সহায়তা দান করা" শব্দগুলো বলবৎ থাকবে।

২৬. ৬৪ নম্বর ধারা সংশোধন করে নিম্নোক্তভাবে এ ধারাটি প্রণয়ন করা হবে :

(ক) আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, পার্বত্য জেলার এলাকাধীন বন্দোবস্তযোগ্য খাসজমিসহ কোন জায়গা জমি পরিষদের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে ইজারা প্রদানসহ বন্দোবস্ত, ক্রয়, বিক্রয় ও হস্তান্তর করা যাবে না। তবে শর্ত থাকে যে, রক্ষিত (Reserved) বনাঞ্চল, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ এলাকা, রাষ্ট্রীয় শিল্প কারখানা ও সরকারের নামে রেকর্ডকৃত ভূমির ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য হবে না।

(খ) আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণ ও আওয়াধীন কোন প্রকারের জমি, পাহাড় ও বনাঞ্চল পরিষদের সাথে আলোচনা ও ইহার সম্মতি ব্যতিরেকে সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণ ও হস্তান্তর করা যাবে না।

(গ) পরিষদ হেডম্যান, চেইনম্যান, আমিন, সার্ভেয়ার, কানুনুগো ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যঅদি তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

(ঘ) কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাষা (Fringe Land) জমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জমির মূল মালিকদেরকে বন্দোসস্ত দেয়া হবে।

২৭. ৬৫ নম্বর ধারা সংশোধন করে নিম্নোক্তভাবে এ ধারা প্রণয়ন করা হবে : আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, জেলার ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের দায়িত্ব পরিষদের হস্তে ন্যাস্ত থাকবে এবং জেলায় আদায়কৃত উক্ত কর পরিষদের তহবিলে থাকবে।

২৮. ৬৭ নম্বর ধারা সংশোধন করে নিম্মোক্তভাবে এ ধারা প্রণয়ন করা হবে : পরিষদ এবং সরকারী কর্তৃপক্ষের কার্যাবলীর মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন দেখা দিলে সরকার বা পরিষদ নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করবে এবং পরিষদ ও সরকারের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে কাজের সমন্বয় বিধান করা যাবে।

২৯. ৬৮ নম্বর ধারার উপধারা (১) সংশোধন করে নিম্নোক্তভাবে এ উপধারা প্রণয়ন করা হবে : এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা পরিষদের সাথে আলোচনাক্রমে বিধি প্রণয়ন করতে পারবে এবং কোন বিধি প্রণীত হওয়ার পরেও উক্ত বিধি পুনর্বিবেচনার্থে পরিষদ কর্তৃক সরকারের নিকট আদেন করার বিশেষ অধিকার থাকবে।

৩০.     (ক) ৬৯ ধারার উপধারা (১) এর প্রথম ও দ্বিতীয় পংক্তিতে অবস্থিত "সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে" শব্দগুলো বিলুপ্ত এবং তৃতীয় পংক্তিতে অবস্থিত "করতে পারবে" এ শব্দগুলোর নিম্নোক্ত অংশটুকু সন্নিবেশ করা হবে। তবে শর্ত থাকে যে, প্রণীত বিধানের কোন অংশ সম্পর্কে সরকার যদি মতভিন্নতা পোষণ করে, তাহলে সরকার উক্ত প্রবিধান সংশোধনের জন্য পরামর্শ দিতে বা অনুশাসন করতে পারবে।

            (খ) ৬৯ নম্বর ধারার উপধারা (২)-এর (জ) এ উল্লিখিত "পরিষদের কোন কর্মকর্তঅকে চেয়অরম্যানের ক্ষমতা অর্পণ"-এ শব্দগুলো বিলূপ্ত করা হবে।

৩১. ৭০ নম্বর ধারা বিলুপ্ত করা হবে।

৩২. ৭৯ নম্বর ধারা সংশোধন করে নিম্নোক্তভাবে এ ধারা প্রণয়ন করা হবে : পার্বত্য জেলায় প্রযোজ্য জাতীয় সংসদ বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত কোন আইন পরিষদের বিবেচনায় উক্ত জেলার জন্য কষ্টকর হলে বা উপজাতীয়দের জন্য আপত্তিকর হলে পরিষদ উহা কষ্টকর বা আপত্তিকর হওয়ার কারণ ব্যক্ত করে আইনটির সংশোধন বা প্রয়োগ শিথিল করার জন্য সরকারের নিকট লিখিত আবেদন পেশ করতে পারবে এবং সরকার এ আবেদন অনুযায়ী প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে।

৩৩.     (ক) প্রথম তফসিলে বর্ণিত পরিষদের কার্যাবলীর ১ নম্বরে "শৃঙ্খলা" শব্দটির পরে "তত্ত্বাবধান" শব্দটি সন্নিবেশ করা হবে।

          (খ) পরিষদের কার্যাবলীর ৩ নম্বরে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ সংযোজন করা হবে :

১. বৃত্তিমূলক শিক্ষা : ২. মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা; ৩. মাধ্যমিক শিক্ষা।

          (গ) প্রথম তফসিলে পরিষদের কার্যাবলীর ৬(খ) উপধারা "সংরক্ষিত বা" শব্দগুলো বিলুপ্ত করা হবে।

৩৪. পার্বত্য জেলা পরিষদের কার্য ও দায়িত্বাদির মধ্যে নিম্নে উল্লিখিত বিষয়াবলী অন্তর্ভুক্ত হবে : ক) ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা; খ) পুলিশ (স্থানীয়); গ) উপজাতীয় আইন ও সামাজিক বিচার; ঘ) যুব কল্যাণ; ঙ) পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন; চ) স্থানীয় পর্যটন; ছ) পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ ব্যতীত ইম্প্রুভমেন্ট ট্রাস্ট ও অন্যান্য স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান; জ) স্থানীয় শিল্প-বাণিজ্যের লাইসেন্স প্রদান; ঝ) কাপ্তাই হ্রদের জলসম্পদ ব্যতীত অন্যান্য নদী-নালা, খাল-বিলের সুষ্ঠু ব্যবহার ও সেচ ব্যবস্থা; ঞ) জন্ম-মৃত্যু ও অন্যান্য পরিসংখ্যান সংরক্ষণ; ট) মহাজনী কারবার; ঠ) জুমচাষ।

৩৫. দ্বিতীয় তফসিলে বিবৃত পরিষদ কর্তৃক আরোপনীয় কর, রেইট, টোল এবং ফিস এর মধ্যে নিম্নে বর্ণিত ক্ষেত্র ও উৎসাদি অন্তর্ভুক্ত হবে;

ক) অযান্ত্রিক যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন ফি;

খ) পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর কর;

গ) ভূমি ও দালান কোঠার ওপর হোল্ডিং কর;

ঘ) গৃহপালিত পশু বিক্রয়ের ওপর কর;

ঙ) সামাজিক বিচারের ফিস;

চ) সরকারী ও বেসরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওপর হোল্ডিং কর;

ছ) বনজ সম্পদের ওপর রয়ালটির অংশ বিশেষ;

জ) সিনেমা, যাত্রা, সার্কাস ইত্যাদির ওপর সম্পূরক কর;

ঝ) খনিজ সম্পদ অন্বেষণ বা নিষ্কর্ষণের উদ্দেশে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অনুজ্ঞাপত্র বা বাট্টাসমূহ সূত্রে প্রাপ্ত রয়ালটির অংশ বিশেষ;

ঞ) ব্যবসার ওপর কর;

ট) লটারীর ওপর কর;

ঠ) মৎস ধরার ওপর কর।

 

গ. পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ :

১. পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহ অধিকতর শক্তিশালী ও কার্যকর করার লক্ষে পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯ ইং (১৯৮৯ সনের ১৯, ২০ ও ২১নং আইন) এর বিভিন্ন ধারা সংশোধন ও সংযোজন সাপেক্ষে তিন পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদের সমন্বয়ে একটি আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হবে।

২. পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যগনের দ্বারা পরোক্ষভাবে এ পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন, যার পদমর্যাদা হবে একজন প্রতিমন্ত্রীর সমকক্ষ এবং তিনি অবশ্যই উপজাতীয় হবেন।

৩. চেয়ারম্যানসহ পরিষদ ২২ (বাইশ) জন সদস্য লয়ে গঠন করা হবে। পরিষদের দু-তৃতীয়াংশ সদস্য উপজাতীয়দের মধ্য হতে নির্বাচিত হবে। পরিষদ ইহার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করবেন। পরিষদের গঠন নিম্নরূপ হবে :

 

চেয়ারম্যান

১ জন

সদস্য উপজাতীয় (পুরুষ)

১২ জন

সদস্য উপজাতীয় (মহিলা)

২ জন

সদস্য অ-উপজাতীয় (পুরুষ)

৬ জন

সদস্য অ-উপজাতীয় (মহিলা)

১ জন

 

উপজাতীয় পুরুষ সদস্যদের মধ্যে ৫ জন নির্বাচিত হবেন চাকমা উপজাতি হতে, ৩ জন মার্মা উপজাতি হতে, ২ জন ত্রিপুরা উপজাতি হতে, ১ জন মুরং ও তনচৈঙ্গ্যা উপজাতি হতে এবং ১ জন লুসাই, বোম, পাংখো, খুমী, চাক ও খিয়াং উপজাতি হতে।

অ-উপজাতীয় পুরুষ সদস্যদের মধ্য হতে প্রত্যেক জেলা হতে ২ জন করে নির্বাচিত হবেন। উপজাতীয় মহিলা সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে চাকমা উপজাতি হতে ১ জন এবং অন্যান্য উপজাতি হতে ১ জন নির্বাচিত হবেন।

৪. পরিষদের মহিলাদের জন্য ৩ (তিন) টি আসন সংরক্ষিত রাখা হবে। এক-তৃতীয়াংশ (১/৩) অ-উপজাতীয় হবে।

৫. পরিষদের সদস্যগণ তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যগণের দ্বারা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হবেন। তিন পার্বত্য জেলার চেয়ারম্যান পদাধিকার বলে পরিষদের সদস্য হবেন এবং তাদের ভোটাধিকার থাকবে। পরিষদের সদস্য প্রার্থীদের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্যের যোগ্যতা ও আযোগ্যতা অনুরূপ হবে।

৬. পরিষদের মেয়াদ ৫ (পাঁচ) বৎসর হবে। পরিষদের বাজেট প্রণয়ন ও অনুমোদন, পরিষদ বাতিলকরণ, পরিষদের বিধি প্রণয়ন, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট বিষয় ও পদ্ধতি পার্বত্য জেলা পরিষদের অনুকূলে প্রদত্ত ও প্রযোজ্য বিষয় ও পদ্ধতির অনুরূপ হবে।

৭. পরিষদে সরকারের যুগ্মসচিব সমতুল্য একজন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা থাকবেন এবং এ পদে নিযুক্তির জন্য উপজাতীয় প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

৮. (ক) যদি পরিষদের চেয়ারম্যানের পদশূন্য হয়, তাহলে অন্তবর্তীকালীন সময়ের জন্য পরিষদের অন্যান্য উপজাতীয় সদস্যগণের মধ্য হতে একজন তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্যগণের দ্বারা পরোক্ষভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।

(খ) পরিষদের কোন সদস্যপদ যদি কোন কারণে শূন্য হয়, তবে উপনির্বাচনের মাধ্যমে তা পূরণ করা হবে।

৯.     (ক) পরিষদ তিনটি পার্তব্য জেলা পরিষদের অধীনে পরিচালিত সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সমন্বয় সাধন করাসহ তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদের আওতাধীন ও এদের  ওপর অর্পিত বিষয়াদি সার্বিক তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় করবে। তাছাড়া অর্পিত বিষয়াদির দায়িত্ব পালনে তিন জেলা পরিষদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব কিংবা কোনরূপ অসংগতি পরিলক্ষিত হলে আঞ্চলিক পরিষদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে পরিগণিত হবে।

        (খ) এ পরিষদ পৌরসভাসহ স্থানীয় পরিষদসমূহ তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় করবে।

        (গ) তিন পার্বত্য জেলার সাধারণ প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের ব্যাপারে আঞ্চলিক পরিষদ সমন্বয় সাধন ও তত্ত্বাবধান করতে পারবে।

        (ঘ) পরিষদ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনাসহ এনজিওদের কার্যাবলী সমন্বয় সাধন করতে পারবে।

        (ঙ) উপজাতীয় আইন ও সামাজিক বিচার আঞ্চলিক পরিষদের আওতাভুক্ত থাকবে।

        (চ) পরিষদ ভারী শিল্পের লাইসেন্স প্রদান করতে পারবে।

১০. পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, পরিষদের সাধারণ ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে। উন্নয়ন বোর্ডের চেয়অরম্যান নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার যোগ্য উপজাতীয় প্রার্থীকে অগ্রাধিকার প্রদান করবেন।

১১. ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধি এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইন, বিধি ও অধ্যাদেশের সাথে ১৯৮৯ সনের স্থানীয় সরকার পরিষদ আইনের যদি কোন অসংগতি পরিলক্ষিত হয়, তবে আঞ্চলিক পরিষদের পরামর্শ ও সুপারিশক্রমে সেই অসংগতি আইনের মাধ্যমে দূর করা হবে।

১২. পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ভিত্তিতে আঞ্চলিক পরিষদের পরামর্শ ও সুপারিশক্রমে সেই অসংগতি আইনের মাধ্যমে দূর করা হবে।

১২. পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ভিত্তিতে আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার অন্তবর্তীকালীন আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করে তার ওপর পরিষদের প্রদেয় দায়িত্ব দিতে পারবেন।

১৩. সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে গেলে আঞ্চলিক পরিষদের সাথে আলোচনাক্রমে ও উহার পরামর্শক্রমে আইন প্রণয়ন করবেন। তিনটি পার্বত্য জেলার উন্নয়ন ও উপজাতীয় জনগণের কল্যাণের পথে বিরূপ ফল হতে পারে, এরূপ আইনের পরিবর্তন বা নতুন আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে পরিষদ সরকারের নিকট আবেদন অথবা সুপারিশমালা পেশ করতে পারবেন।

১৪. নিম্নোক্ত উৎস হতে পরিষদের তহবিল গঠন হবে :

ক) জেলা পরিষদের তহবিল হতে প্রাপ্ত অর্থ;

খ) পরিষদের ওপর ন্যস্ত এবং তৎকর্তৃক পরিচালিত সকল সম্পত্তি হতে প্রাপ্ত অর্থ বা মুনাফা;

গ) সরকার বা অন্যান্য কর্তৃপক্ষের ঋণ ও অনুদান;

ঘ) কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান;

ঙ) পরিষদের অর্থ বিনিয়োগ হতে মুনাফা;

চ) পরিষদ কর্তৃক প্রাপ্ত যেকোন অর্থ;

ছ) সরকারের নির্দেশে পরিষদের ওপর ন্যস্ত অন্যান্য আয়ের উৎস হতে প্রাপ্ত অর্থ।

 

ঘ. পুনর্বাসন, সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন ও অন্যান্য ও অন্যান্য বিষয়াবলী : পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা পুনঃস্থাপন এবং এ লক্ষে পুনর্বাসন, সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন ও সংশ্লিষ্ট কার্য এবং বিষয়াবলীর ক্ষেত্রে উপভয়পক্ষ নিম্নে বর্ণিত অবস্থা পৌছেছেন এবং কার্যক্রম গ্রহণে একমত হইয়াছেন :

১. ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে অবস্থানরত উপজাতীয় শরণার্থীদের দেশে ফিরায়ে আনার লক্ষে সরকার ও উপজাতীয় শরণার্থী নেতৃবৃন্দের সাথে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় ৯ মার্চ ১৯৯৭ইং তারিখে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী ২৮ মার্চ ১৯৯৭ইং হতে উপজাতীয় শরণার্থীগণ দেশে প্রত্যাবর্তন শুরু করেন। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এবং এ লক্ষ্যে জনসংহতি সমিতির পক্ষ হতে সম্ভাব্য সবরকম সহযোগিতা প্রদান করা হবে। তিন পার্বত্য জেলার অভ্যন্তরীণ উদ্বাত্তুদের নির্দিষ্টকরণ করে একটি টাস্কফোর্সের মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

২. সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর ও বাস্তবায়ন এবং উপজাতয়ি শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উপজাতীয় উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের পর সরকার এ চুক্তি অনুযায়ী গঠিতব্য আঞ্চলিক পরিষদের সাথে আলোচনাক্রমে যথাশীঘ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি জরিপ কাজ শুরু এবং যথাযথ যাচায়ের মাধ্যমে জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করত উপজাতীয় জনগণের ভূমি মালিকানা চূড়ান্ত করে তাদের ভূমি রেকজর্ডভুক্ত ও ভূমির অধিকার নিশ্চিত করবেন।

৩. সরকার ভূমিহীন বা দুই একরের কম জমির মালিক উপজাতীয় পরিবারের ভূমির মালিকানা নিশ্চিত করতে পরিবার প্রতি দুই একর জমি স্থানীয় এলাকায় জমির লভ্যতা সাপেক্ষে বন্দোবস্তু দেয়া নিশ্চিত করবেন। যদি প্রয়োজনমত জমি পাওয়া না যায়, তাহলে সেক্ষেত্রে টিলা জমির (গ্রোভল্যান্ড) ব্যবস্থা করা হবে।

৪. জায়গা জমি বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তিকল্পে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি কমিশন (ল্যান্ড কমিশন) গঠিত হবে। পুনর্বাসিত শরণার্থীদের জমিজমা বিষয়ক বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তি করা ছাড়াও এ যাবৎ যেসব জায়গা-জমি ও পাহাড় অবৈধভাবে বন্দোবস্তু ও বেদখল হয়েছে, সেই সমস্ত জমি ও পাহাড়ের মালিকানা স্বত্ব বাতিলকরণের পূর্ণ ক্ষমতা এ কমিশনের থাকবে। এ কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে কোন আপীল চলবে না এবং এ কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। ফ্রীঞ্জল্যান্ড (জলেভাসা জমি) এর ক্ষেত্রে ইহা প্রযোজ্য হবে।

৫. এ কমিশন নিম্নোক্ত সদস্যদের লয়ে গঠন করা হবে : ক) অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি; খ) সার্কের চীফ (সংশ্লিষ্ট); গ) আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান/প্রতিনিধি; ঘ) বিভাগীয় কমিশনার/অতিরিক্ত কমিশনার; ঙ) জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান (সংশ্লিষ্ট)।

৬.     (ক) কমিশনের মেয়াদ তিন বৎসর হবে। হবে আঞ্চলিক পরিষদের সাথে পরামর্শক্রমে ইহার মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাবে।

         (খ) কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি অনুযায়ী বিরোধ নিষ্পত্তি করবেন।

৭. যে উপজাতীয় শরণার্থীরা সরকারের সংস্থা হতে ঋণ গ্রহণ করেছেন অথচ বিবাদমান পরিস্থিতির কারণে ঋণকৃত অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেননি, সেই ঋণ সুদসহ মওকুফ করা হবে।

৮. রাবার চাষের ও অন্যান্য জমি বরাদ্দ : যেসকল অ-উপজাতি ও অ-স্থানীয় ব্যক্তিদের রাবার বা অন্যান্য প্লান্টেশনের জন্য জমি বরাদ্দ করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে যারা গত দশ বছরের মধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করেননি বা জমি সঠিক ব্যবহার করেননি, সেই সকল জমির বন্দোবস্ত বাতিল করা হবে।

৯. সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের লক্ষে অধিক সংখ্যক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করবেন। এলাকার উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করার লক্ষে নতুন প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করবেন এবং সরকার এ উদ্দেশে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করবেন। সরকার এ অঞ্চলের পরিবেশ বিবেচনায় রাখিয়া দেশী ও বিদেশী পর্যটকদের জন্য পর্যটন ব্যবস্থার উন্নয়নে উৎসাহ যোগাবেন।

১০. কোটা সংরক্ষণ ও বৃত্তি প্রদান : চাকুরী ও উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সমপর্যায়ে না পৌছা পর্যন্ত সরকার উপজাতীদের জন্য সরকারী চাকুরী ও উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা ব্যবস্থা বহাল রাখবেন। উপরোক্ত লক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপজাতীয় ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সরকার অধিক সংখ্যক বৃত্তি প্রদান করবেন। বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও গবেষণার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় বৃত্তি প্রদান করবেন।

১১. উপজাতীয় কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক স্বতন্ত্রতা বজায় রাখার জন্য সরকার ও নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ সচেষ্ট থাকবেন। সরকার উপজাতীয় সংস্কৃতির কর্মকাণ্ডকে জাতীয় পর্যায়ে বিকশিত করার লক্ষে প্রয়োজনীয় পৃষ্টপোষকতা ও সহায়তা করবেন।

১২. জনসংহতি সমিতি ইহার সশস্ত্র সদস্যসহ সকল সদস্যের তালিকা এবং ইহার আয়ত্বাধীন ও নিয়ন্ত্রণাধীন অস্ত্র ও গোলাবারুদের বিবরণী এ চুক্তি স্বাক্ষরের ৪৫ দিনের মধ্যে সরকারের নিকট দাখিল করবেন।

১৩. সরকার ও জনসংহতি সমিতি যৌথভাবে এ চুক্তি স্বাক্ষরের ৪৫ দিনের মধ্যে অস্ত্র জমাদানের জন্য দিন, তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করবেন। জনসংহতি সমিতির তালিকাভুক্ত সদস্যদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমাদানের জন্য দিন, তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করার পর তালিকা অনুযায়ী জনসংহতি সমিতির সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গের স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তনের জন্য সবরকমের নিরাপত্তা প্রদান করা হবে।

১৪. নির্ধারিত তারিখে যেসকল সদস্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিবেন, সরকার তাদের প্রতি ক্ষমা ঘোষণা করবেন। যাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা আছে, সরকার ঐ সকল মামলা প্রত্যাহার করে নিবেন।

১৫. নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কেহ অস্ত্র জমা দিতে ব্যর্থ হলে, সরকার তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন।

১৬. জনসংহতি সমিতির সকল সদস্য স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তনের পর তাদেরকে এবং জনসংহতি সমিতির কার্যকলাপের সাথে জড়িত স্থায়ী বাসিন্দাদেরকেও সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করা হবে।

ক) জনসংহতি সমিতির প্রত্যাবর্তনকারী সকল সদস্যকে পুনর্বাসনের লক্ষে পরিবার প্রতি এককালীন ৫০,০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা প্রদান করা হবে।

খ) জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র সদস্যসহ অন্যান্য সদস্যের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতারী পরোয়ানা, হুলিয়া জারী অথবা অনুপস্থিতিকালীন সময়ে বিচারে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে, অস্ত্র সমর্পণ ও স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তনের পর পর যথাশীঘ্য সম্ভব তাদের বিরুদ্ধে সকল মামলা, গ্রেফতারী পরোয়ানা এবং হুলিয়া প্রত্যাহার করা হবে এবং অনুপস্থিতকালীন সময়ে প্রদত্ত সাজা মওকুফ করা হবে। জনসংহতি সমিতির কোন সদস্য জেলে আটক থাকলে তাকেও মুক্তি দেয়া হবে।

গ) অনুরূপভাবে অস্ত্র সমর্থন ও স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তনের পর কেবলমাত্র জনসংহতি সমিতির সদস্য ছিলেন কারণে কারো বিরুদ্ধে মামলা দায়ের বা শাস্তি প্রদান বা গ্রেফতার করা যাবে না।

ঘ) জনসংহতি সমিতির যেসকল সদস্য সরকারের বিভিন্ন ব্যাংক ও সংস্থা হতে ঋণ গ্রহণ করেছেন কিন্তু বিবাবদমান পরিস্থিতির জন্য গৃহীত ঋণ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেননি, তাদের উক্ত ঋণ সুদসহ মওকুফ করা হবে।

ঙ) প্রত্যাগত জনসংহতিসমিতির সদস্যদের মধ্যে যারা পূর্বে সরকার বা সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত ছিলেন, তাদেরকে স্ব-স্ব পদে পুনর্বহাল করা হবে এবং জনসংহতি সমিতির সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতা অনুসারে চাকুরীতে নিয়োগ করা হবে। এক্ষেত্রে তাদের বয়স শিথিল সংক্রান্ত সরকারী চাকুরীতে নিয়োগ করা হবে। এক্ষেত্রে তাদের বয়স শিথিল সংক্রান্ত সরকারী নীতিমালা অনুসরণ করা হবে।

চ) জনসংহতি সমিতির সদস্যদের কুটির শিল্প ও ফলের বাগান প্রভৃতি আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজের সহায়তার জন্য সহজশর্তে ব্যাংক ঋণ গ্রহণের অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।

ছ) জনসংহতি সমিতির সদস্যগণের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে এবং তাদের বৈদেশিক বোর্ড ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে প্রাপ্ত সার্টিফিকেট বৈধ বলে গণ্য করা হবে।

১৭.     (ক) সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে চুক্তি সই ও সম্পাদনের পর এবং জনসংহতি সমিতির সদস্যদের স্বভাবিক জীবনে ফেরত আসার সাথে সাথে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিডিআর) ও স্থায়ী সেনানিবাস (তিন জেলা সদরে তিনটি এবং আলীকদম, রুমা ও দীঘিনালা) ব্যতীত সামরিক বাহিনী, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সকল অস্থায়ী ক্যাম্প পার্বত্য চট্টগ্রাম হতে পর্যায়ক্রমে স্থায়ী নিবাসে ফেরত নেয়া হবে এবং এ লক্ষে সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে। আইন শৃঙ্খলা অবনতির ক্ষেত্রে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে এবং এ জাতীয় অন্যান্য কাজে দেশের সকল এলাকার ন্যায় প্রয়োজনীয় যথাযথ আইন ও বিধি অনুসরণে বেসামরিক প্রশাসনের কর্তৃত্বাধীনে সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করা যাবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন বা সময় অনুযায়ী সহায়তা লাভের উদ্দেশ্যে আঞ্চলিক পরিষদ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করতে পারবেন।

         (খ) সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর ক্যাম্প ও সেনানিবাস কর্তৃক পরিত্যক্ত জায়গা জমি পকৃতি মালিকের নিকট অথবা জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তর করা হবে।

১৮. পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সরকারী, আধাসরকারী, পরিষদীয় ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মচারী পদে উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার্বত্য স্থায়ী অধিবাসীদের নিয়োগ করা হবে। তবে কোনও পদে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী অধিবাসীদের মধ্যে যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি না থাকলে সরকার হতে প্রেষণে অথবা নির্দিষ্ট সময়ে মেয়অদে উক্ত পদে নিয়োগ করা যাবে।

১৯. উপজাতয়িদের মধ্য হতে একজন মন্ত্রী নিয়োগ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক একটি মন্ত্রণায় প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করার জন্য নিম্নেবর্ণিত উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হবে :

১) পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী;

২) চেয়ারম্যান/প্রতিনিধি, আঞ্চলিক পরিষদ;

৩) চেয়ারম্যান/ প্রতিনিধি, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ;

৪) চেয়ারম্যান/প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ;

৫) চেয়ারম্যান/প্রতিনিধি, বান্দরবন পার্বত্য জেলা পরিষদ;

৬) সাংসদ, রাঙামাটি;

৭) সাংসদ, খাগড়াছড়ি;

৮) সাংসদ, বান্দরবন;

৯) চাকমা রাজা;

১০) বোমাং রাজা;

১১) মং রাজা;

১২) তিন পার্বত্য জেলা হতে সরকার কর্তৃক মনোনীত পার্বত্য এলাকার স্থায়ী অধিবাসীদের তিন জন অ-উপজাতী সদস্য।

এ চুক্তি উপরোক্তভাবে বাংলা ভাষায় প্রণীত এবং ঢাকায় ১৮ই অগ্রহায়ণ ১৪০৪ সাল মোতাবেক ২রা ডিসেম্বর ১৯৯৭ইং তারিখে সম্পাদিত ও সইকৃত।

 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে

(আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ)

আহবায়ক

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি

বাংলাদেশ সরকার।

পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের পক্ষে

(জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা)

সভাপতি

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি।

.............

 

সূত্র: বাংলাদেশের উপজাতিদের আইন- রামকান্ত সিংহ, ২০০৩

 

সৌজন্যে: প্যান লোকালাইজেশন প্রোজেক্ট