১৬। ভূমি খতিয়ান (পার্বত্য চট্টগ্রাম) অধ্যাদেশ, ১৯৮৪

 

    বৃটিশ আমল থেকে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী অধিবাসীদের ভূমি অধিকার তাদের স্থানীয় প্রথা পদ্ধতি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনের বিধান অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হত। পাকিস্তান আমলে ঐ রেগুলেশনের বিধান অনুযায়ী পাহাড়িদের নিকট ২৫ (পঁচিশ) একর আবাদযোগ্য জমির পরিবর্তে ১০ (দশ) একর পর্যন্ত জমি জেলা প্রশাসক কর্তৃক বন্দোবস্ত দেয়ার বিধান করা হয়েছিল এবং ১৫ বৎসর পর্যন্ত সেখানে বসাবাসকারী অপাহাড়িদের নিকট ঐ পরিমাণ আবাদযোগ্য জমি জেলা প্রশাসক কর্তৃক বন্দোবস্ত দেয়ারও বিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল।

    বাংলাদেশ আমলে জেলা প্রশাসক কর্তৃক আবাদযোগ্য জমি বন্দোবস্ত দেয়ার পরিমাণ কমিয়ে ৫ (পাঁচ) একর পর্যন্ত করা হয়েছে। ভূমিহীন ও দুঃস্থ অপাহাড়িদের বৃহত্তর চট্টগ্রামে বসত করাবার সুবিধার্থে বাংলাদেশ সরকার অপাহাড়িদের নিকট ঐএলাকার ভূমি বন্দোবস্ত দেয়ার রীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে ১৯৮০ দশকে অপাহাড়িদেরকেও সেখানে বসতি স্থাপন করানোর জন্য তাদের নিকট ক্রমান্বয়ে ভূমি বন্দোবস্ত দিতে থাকে। প্রকাশ থাকে যে, পার্বত্যচট্টগ্রাম থেকে অপাহাড়িদেরকে জেলা প্রশাসক কর্তৃক বহিষ্কার করার ক্ষমতাটি পাকিস্তান আমলে ঢাকা হাইকোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী 17 DLR-৫৫৩ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত রায়ে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল।

    ১৯৮৪ সনে পাহাড়ি ও অপাহাড়ি নির্বিশেষে পার্বত্য চট্টগ্রাম, বান্দরবন ও খাগড়াছড়ি জেলাসমূহের অধিবাসীদের জমিসহ ঐ সকল জেলার সকল জমি জরিপ করার লক্ষে অত্র অধ্যাদেশ জারী করা হয়েছে। কাজেই সরকার যথাযথ মনে করলে ঐ সকল জেলার বা উহার যেকোন অংশ জরিপ করে ভূমি খতিয়অন প্রস্তুত ও সংশোধন করার জন্য রাজস্ব কর্মকর্তাকে ক্ষমতা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারীর মাধ্যমে আদেশ দিতে সক্ষম হবে।

    আর তদ্রুপ পদক্ষেপে আদেশ জারী করা হলে রাজস্ব কর্মকর্তা (রেভিনিউ অফিসার) কর্তৃক প্রতিটি মৌজাকে জরীপের একক ধরে উহার অন্তর্গত রাস্তাঘাট, নদীনালা, বাড়িঘর, মাঠ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট প্রদর্শন করে খসড়া ভূমি নক্‌শা এবং খতিয়ান প্রস্তুত করার এবং তা জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য প্রকাশ করার, উহার বিরুদ্ধে কেউ কখনো কোনো প্রকার আপত্তি দাখিল করলে রাজস্ব কর্মকর্তা কর্তৃক তা বিবেচনা করার এবং রাজস্ব কর্মকর্তার তদসম্পর্কে প্রদত্ত সিদ্ধান্তের বিপক্ষে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কর্তৃক তদ্রুপ উপায়ে প্রদত্ত আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে সেটেলমেন্ট অফিসার বা জরীপ কর্মকর্তার কাছে আপীল দায়ের করণের এবং পক্ষগণকে শুনানীর সুযোগ দিয়ে তা যথাযথভাবে নিষ্পত্তি করার এবং সকল আপত্তি ও আপীল নিষ্পত্তি করার পর চূড়ান্ত ভূীম খতিয়ান মুদ্রণ ও প্রকাশ করার এবং তদ্রুপ প্রকাশিত খতিয়ান অশুদ্ধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত শুদ্ধ বলে গণ্য করার বিধান করা হয়েছে [37 DLR ষ্টেটিউটস, পৃঃ ১৭৩-৭৬; মো আব্দুল কাদের; প্রাগুক্ত পৃঃ ৭৮-৮২]

 

সূত্র: বাংলাদেশের উপজাতিদের আইন- রামকান্ত সিংহ, ২০০৩

 

সৌজন্যে: প্যান লোকালাইজেশন প্রোজেক্ট