কৃষি শ্রমের ন্যূনতম মজুরী আইন

 

ন্যূনতম মজুরী আইন বলতে বুঝায়, কৃষি শ্রমিকদের জন্য অর্থাৎ কৃষিজ শস্য উৎপাদনে নিয়োজিত যে কোন ব্যক্তির মজুরীর নিম্নতম হার স্থির করণের জন্য বিধান প্রণয়নকল্পে অধ্যাদেশ। দেশ বিভাগের পূর্বে বা পরে প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশে কোন কৃষি মজুরী আইন বা একজন ক্ষেত মজুরের জন্য ন্যূনতম শ্রম সম্পর্কে কোন বিধিবদ্ধ আইন ছিল না। স্বাধীনতার পর ১৯৮৪ সালে এ সম্পর্কে একটি অধ্যাদেশ জারী করা হয়্ নূ্যনতম অর্থ হল সর্বনিম্ন অর্থাৎ যার নীচে আর যাওয়া যায় না। 'মজুরী' অর্থ পারিশ্রমিক। যে শর্তে কাজে নিয়োগ করা হয় সেই শর্ত পূরণ সাপেক্ষে কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিকে যে অর্থ প্রদান করা হয় তাই হল- মজুরী।

 

ন্যূনতম মজুরী আইন কাদের জন্য প্রযোজ্য?

ন্যূনতম মজুরী অধ্যাদেশ কৃষি শ্রমিকদের জন্য প্রযোজ্য অর্থাৎ কৃষিজ শস্য উৎপাদনে নিয়োজিত যে কোন ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য তবে-

ক. সরকার কর্তৃক নিয়োজিত ব্যক্তি।

খ. ১৯৩৬ সনের মজুরী পরিশোধ আইনে সংজ্ঞার্থকৃত বাগানে নিয়োজিত ব্যক্তি।

গ. মাসিক মজুরীর ভিত্তিতে পারিবারিক শ্রমিক হিসেবে নিয়োজিত ব্যক্তি।

ঘ. যে কোন প্রকারের মাছ বা পশু উৎপাদনে ও বিক্রয়রত ১৯১৩ সনের কোম্পানী আইনের অধীনে কোম্পানী কর্তৃক নিয়োজিত ব্যক্তি।

ঙ. ১৯৮৪ সনের ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশে সংজ্ঞার্থকৃত বর্গাদার-ন্যূনতম মজুরী অধ্যাদেশের আওতায় পড়বে না।

 

কৃষি শ্রমের জন্য প্রতিদিনের ন্যূনতম মজুরী কত?

ক. একজন কৃষি শ্রমিকের এক দিনের মজুরী হিসেবে ৩ কেজি ২৭০ গ্রাম মোটা চাল অথবা উহার সমপরিমাণ টাকা প্রদান করতে হবে। তবে-

খ. সরকার ৪ ধারার অধীনে গঠিত কৃষি শ্রমের নিম্নতম মজুরী ও মূল্য পরিষদের মাধ্যমে পুনরীক্ষণ করতে পারেন।

গ. সরকার পুনরীক্ষণক্রমে বিভিন্ন এলাকার জন্য, কৃষি শ্রমিকদের বিভিন্ন শ্রেণীর জন্য, কৃষি শ্রমিকদের বিভিন্ন প্রকারের জন্য নিম্নতম মজুরীর বিভিন্ন হার স্থির করতে পারেন।

ঘ. ন্যূনতম মজুরীর হার যে তারিখে উহা স্থির করা হয়েছিল সেখান থেকে তিন বৎসরের মধ্যে পুণরীক্ষণ করা যাবে না যদি না বিশেষ পরিস্থিতি সেরূপ বাধ্য করে।

 

মূল্য পরিষদ

পরিষদ একজন চেয়ারম্যান ও সরকার যেরূপ নিয়োগ করার উপযুক্ত মনে করতে পারেন সেরূপ সক্ষম অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে গঠিত হবে।

 

মজুরী পরিশোধ

কোন ব্যক্তিই এই অধ্যাদেশ দ্বারা স্থিরকৃত হার অপেক্ষা নিম্নহারে কোন শ্রমিককে মজুরী দেবেন না। তবে অধ্যাদেশে স্থিরকৃত হার অপেক্ষা উচ্চহারে মজুরী প্রদানের ক্ষেত্রে কোন বাধা নাই।

 

কৃষি শ্রমে নিয়োজিত শ্রমিক তার মজুরী না পেলে কি ধরনের প্রতিকার পেতে পারে?

একজন কৃষি শ্রমিক ন্যূনতম মজুরী না পেলে গ্রাম্য আদালতে মামলা করে তার অর্থ আদায় করতে পারবে। এক্ষেত্রে যে পরিমাণ অর্থ উক্ত শ্রমিকের প্রাপ্য ছিল তার অনধিক দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে পেতে পারেন।

 

গ্রাম্য আদালত

গ্রাম্য আদালত একজন চেয়ারম্যান এবং বিরোধের প্রত্যেক পক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত নিয়মে মনোনীত ২ জন প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত হবে। তবে প্রত্যেক পক্ষ কর্তৃক মনোনীত প্রতিনিধিদ্বয়ের একজন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হবেন।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গ্রাম্য আদালতের চেয়ারম্যান হবেন। তবে সে স্থলে তিনি কোন কারণে চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করতে অক্ষম কিংবা বিরোধের কোন পক্ষ তার পক্ষপাতিত্বহীনতা সম্পর্কে আপত্তি উত্থাপন করেন সে স্থলে নির্ধারিত নিয়মে ইউনিয়ন পরিষদের অন্য যে কোন সদস্য গ্রাম্য আদালতের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োজিত হবেন।

 

গ্রাম্য আদালতে মামলা দায়ের করার পদ্ধতি

একটি লিখিত আবেদন পত্র আবেদনকারী কর্তৃক স্বাক্ষরযুক্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট দাখিল করতে হবে। আবেদনপত্রে নিম্নলিখিত তথ্যাবলী থাকতে হবে-

ক. যে ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করা হয়েছে তার নাম

খ. আবেদনকারীর নাম, পরিচয় ও বাসস্থান

গ. প্রতিবাদকারীর নাম, পরিচয় ও বাসস্থান

ঘ. যে ইউনিয়ন পরিষদে অপরাধ সংঘঠিত হয়েছে অথবা মামলার কারণ উদ্ভব হয়েছে তার নাম

ঙ. প্রার্থীত প্রতিকার।

গ্রাম আদালতে ৪ টাকার কোর্ট ফি দিয়ে মামলা দায়ের করতে হবে। আবেদনপত্র যদি চেয়ারম্যান কর্তৃক নাকচ হয় তবে ৩০ দিনের মধ্যে সহকারী জজ আদলতে পুন:বিবেচনার জন্য দায়ের করতে হবে।

 

 

 

তথ্যসূত্র: প্রশিক্ষণ হ্যান্ডআউট, ভূমি আইন, ব্যবস্থাপনা ভূমিতে অধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষশণ - এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি)

 

 

সৌজন্যে: প্যান লোকালাইজেশন প্রোজেক্ট