সুনির্দিষ্ট
প্রতিকার
আইন,
১৮৭৭
[THE SPECIFIC RELIEF ACT, 1877]
[১৮৭৭ সালের ১নং আইন]
কতিপয় সুনির্দিষ্ট প্রতিকার বিষয়ক আইনের সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং সংশোধনের নিমিত্তে প্রণীত আইন ।
প্রস্তাবনা : যেহেতু দেওয়ানী মামলাসমূহে অর্জনযোগ্য কতিপয় সুনির্দিষ্ট প্রতিকার বিষয়ক আইনের ব্যাখ্যা ও সংশোধন যুক্তিযুক্ত ও প্রয়োজন, সেহেতু এতদ্বারা নিম্নরুপ আইন প্রণয়ন করা হইল ।
প্রথম খণ্ড
ধারা-১ (সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ) এই আইনটি ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন নামে অভিহিত হইবে ।
এলাকা : এর প্রয়োগক্ষেত্র সমগ্র বাংলাদেশ ।
বলবত্কাল : ইহা ১৮৭৭ সালের মে মাসের ১ তারিখ হতে কার্যকর হইবে ।
ধারা
২ (১৮৯১
সনের
১২
নং
আইন
দ্বারা
বাতিল )
ধারা-৩ (ব্যাখ্যামূলক অনুচ্ছেদ) এই আইনে যদি না প্রসঙ্গ অথবা বিষয় বস্তুতে বিপরীত কোনো কিছু থাকে তবে
'বাধবাধকতা' বলিতে আইন দ্বারা কার্যকরীকরণযোগ্য প্রতিটি কর্তব্য অর্ন্তভূক্ত হইবে ।
'জিম্মা' বলিতে প্রত্যেক ধরনের সুস্পষ্ট ইঙ্গিতবোধক অথবা আনুমানিক বিশ্বাসপূর্বক ন্যাস্ত মালিকানা অর্ন্তভূক্ত হইবে ।
'জিম্মাদার' বলিতে এমন প্রতিটি ব্যক্তি অর্ন্তভূক্ত হইবে যে সুষ্পষ্টভাবে, ইঙ্গিতবোধকভাবে অথবা আনুমানিকভাবে বিশ্বাসপূর্বক ন্যস্ত মালিকানার অধিকারী ।
উদাহরণ
(ক) ''খ'' ক-কে জমি দান করল এবং উহাতে কোনোরুপ সন্দেহ রাখল না, যে, খ জীবিত থাকা পর্যন্ত ক তাকে বাত্সরিক ১০০০ টাকা বৃত্তি দিবে । ক এই দান গ্রহণ করিল । এই ক্ষেত্রে ক এই আইনের অর্থ অনুসারে বার্ষিক বৃত্তির সীমা পর্যন্ত খ-এর জিম্মাদার ।
(খ) ''ক'' খ-এর আইনগত চিকিত্সক অথবা আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা । এই উপদেষ্টা পদের সদ্ব্যবহার করে ক কিছু আর্থিক সুবিধা অর্জন করিল যাহা অন্যপায় খ-এর নিকটই স্বাভাবিকভাবে জমা হতে পারিত । এই আইনের বিধান অনুসারে উক্ত সুবিধার ব্যাপারে ক খ-এর জিম্মাদার ।
(ঘ) ক কতিপয় ইজারাধীন জমির বন্ধকগ্রহীতা হিসাবে নিজের নামে উজারায় মেয়াদ বৃদ্ধি করে । এই আইনের অর্থানুসারে মূল ইজারার সাথে স্বার্থ-সংশ্লিষ্টদের জন্য ক বর্ধিত মেয়াদের ইজারার জিম্মাদার ।
(ঙ) অংশীদারদের একজন হিসাবে ক-কে কারবারে মালামাল ক্রয়ের জন্য নিযুক্ত করা হয়৷ তার অন্যান্য অংশীদারের অজ্ঞাতে বাজার দরে এমন মাল সরবরাহ করল, যা সে বাজার দর যখন কম ছিল তখন ক্রয় করেছিল এবং এভাবে সে উল্লেখযোগ্য মুনাফা অর্জন করল৷ এই আইনের অর্থানুসারে তেমনভাবে অর্জিত মুনাফার ব্যাপারে অন্যান্য অংশীদারের জন্য ক জিম্মাদার ।
(চ) খ-এর মালিকানাধীন নীল কারখানার ম্যানেজার ক নীল বীজ বিক্রেতা গ-এর এজেন্ট হয় এবং খ-এর সম্মতি ছাড়াই কারখানার জন্য গ-এর নিকট হতে ক্রীত নীল বীজের উপর কমিশন গ্রহণ করে । এই আইনের অর্থানুসারে গৃহীত কমিশনের ব্যাপারে ক-খ এর জিম্মাদার ।
(ছ) খ ইতিপূর্বে যে জমি ক্রয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হইয়াছে উহা জানিয়াও ক ঐ জমি ক্রয় করিল এই আইনের অর্থানুসারে উক্তভাবে ক্রীত জমির ব্যাপারে ক খ-এর জিম্মাদার ।
(জ) গ জমি দখল করেছে, উহা জানিয়াও ক খ-এর নিকট হইতে জমি ক্রয় করিল । ক উক্ত জমির ব্যাপারে গ-এর সম্পর্কে কোনো তদন্ত করার ব্যাপারটিকে উপেক্ষা করে । এই আইনের অর্থানুসারে তেমন স্বত্বের সীমা পর্যন্ত ক-গ এর জিম্মাদার ।
'পত্তনি' অর্থ এমন দলিল ১৯২৫ সালের উত্তরাধিকার আইনের (১৯২৫ সালের ৩৯নং আইন) সংজ্ঞা অনুসারে যা উইল বা উইলের বা উইলের পরিশিষ্ট নহে যাহার দ্বারা স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তিতে আনুক্রমিক স্বত্বের প্রতিসংক্রম বা লক্ষ্যের প্রবর্তন করা হয় অথবা প্রবর্তন করার সম্মতি প্রকাশ করা হয় । চুক্তি আইনে (১৮৭২ সালের ৯ নং আইন) যেই সব শব্দের সংজ্ঞা প্রদান করা হইয়াছে এমন যেই সব শব্দ এই আইনে ব্যবহৃত হয়েছে, তার অর্থ উক্ত আইনে অনুরূপ শব্দগুলোর যে অর্থ করা হয়েছে সেরূপ অর্থ একই অর্থবোধক গণ্য করা হইবে ।
ধারা-৪(সংরক্ষণ)
যদি না এই আইনে কোথাও অন্যরূপে সুস্পষ্টভাবে বিধিবদ্ধ থাকে, তবে এই আইনে কোনো কিছুকেই এরূপ গণ্য করা হইবে না, যাহাতে-
(ক) চুক্তি নহে এমন কোনো অঙ্গীকারের ব্যাপারে প্রতিকারের কোনো অধিকার প্রদান করা হয়;
(খ) কোনো ব্যক্তিকে কোনো প্রতিকারের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা হয়, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন ছাড়া, যাহা সে কোনো চুক্তির অধীনে পাইতে পারিত; অথবা
(গ) দলিলসমূহের উপর রেজিস্ট্রেশন আইনের প্রয়োগকে প্রভাবিত করা হয় ।
ধারা
৫ (কিভাবে
সুনির্দিষ্ট
প্রতিকার
প্রদান
করা
হয়)
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার প্রদান করা হয়-
(ক) কোনো সম্পত্তির দখল গ্রহণ এবং তা দাবিদারকে অর্পণের মাধ্যমে;
(খ) যা করার ব্যাপারে তাহার বাধ্যবাধকতা রয়েছে একটি পক্ষকে তেমন কাজ করার আদেশ প্রদানের মাধ্যমে;
(গ) যাহা না করার বিষয়ে তাহার বাধ্যবাধকতা রহিয়াছে, একটি পক্ষকে তেমন কাজ হইতে বিরত থাকার মাধ্যমে;
(ঘ) ক্ষতিপূরণের রায় প্রদানের মাধ্যম ব্যতীত অন্য প্রকারে পক্ষসমূহের অধিকার এবং ঘোষণার মাধ্যমে;
(ঙ) একজন রিসিভার বা তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগের মাধ্যমে ।
ধারা-৬ (নিরোধক
প্রতিকার) ৫ (গ) উপধারার অধীন মঞ্জুরি ও সুনির্দিষ্ট প্রতিকারকে নিরোধক প্রতিকার বলা হয় ।
অত্র ধারাতে নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুরের মাধ্যমে প্রতিকার প্রদানের বিষয়টি বর্ণিত হইয়াছে অত্র আইনের ৩য় খণ্ডে বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করা হ্ইয়াছে ।
ধারা-৭ (দণ্ডমূলক
আইন
কার্যকরী
করার
জন্য
প্রতিকার
মঞ্জুর
করা
যায়
না) শুধু দণ্ডমূলক আইন কার্যকর করার উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার মঞ্জুর করা হয় না ।
দ্বিতীয়
খন্ড
সুনির্দিষ্ট
প্রতিকার
প্রসঙ্গে
[OF SPECIFIC RELIFE]
প্রথম অধ্যায়
সম্পত্তির
দখল
পুনরুদ্ধার
প্রসঙ্গে
(ক)
স্থাবর
সম্পত্তির
দখল
ধারা-৮ (সুনির্দিষ্ট
স্থাবর
সম্পত্তি
পুনরুদ্ধার) সুনির্দিষ্ট স্থাবর সম্পত্তি দখলের অধিকারী ব্যক্তি দেওয়ানী কার্যবিধি অনুযায়ী উহা নির্ধারিত পন্থায় পুনরুদ্ধার করিতে পারে ।
ধারা-৯
স্থাবর
সম্পত্তির
দখলচ্যুত
ব্যক্তি
কর্তৃক
মামলা (Suit by person dispossed of immovable properly)
যথাযথ আইনগত পন্থা ব্যতিরেকে যদি কোনো ব্যক্তি তাহার অসম্মতিতে স্থাবর সম্পত্তির দখলচ্যুত হয়, তবে সে অথবা তাহার মাধ্যমে দাবিদার কোনো ব্যক্তি মামলার মাধ্যমে তাহার দখল পুনরুদ্ধার করিতে পারে, যদিও তেমন মামলায় অপর কোনো স্বত্ব খাড়া করা হইতে পারে, তথাপিও ।
এই ধারার কোনো কিছুই তেমন সম্পত্তির ব্যাপারে নিজের স্বত্ব প্রতিষ্ঠা এবং তার দখল পুনরুদ্ধার করার জন্য কোনো ব্যক্তি কর্তৃক মামলা দায়েরের পথে প্রতিবন্ধকতা হইবে না ।
(খ) অস্থাবর
সম্পত্তির
দখল
ধারা
১০। (সুনির্দিষ্ট
অস্থাবর
সম্পত্তির
পুনরুদ্ধার)
সুনির্দিষ্ট অস্থাবর সম্পত্তির দখলের অধিকারী ব্যক্তি দেওয়ানী কার্যবিধিতে নির্ধারিত পন্থায় উহার দখল পুনরুদ্ধার করিতে পারে ।
ব্যাখ্যা-১। এই ধারা অনুসারে একজন জিম্মাদার যাহার জন্য জিম্মাদার নিযুক্ত হইয়াছে সেই ব্যক্তির হিতকর স্বার্থে নিয়োগ করার অধিকার রহিয়াছে এমন অস্থাবর সম্পত্তির দখল পাওয়ার জন্য মামলা দায়ের করিতে পারে ।
ব্যাখ্যা-২। সম্পত্তির বর্তমান দখলের জন্য অস্থায়ী বা বিশেষ অধিকারকেই এই ধারা অনুযায়ী দায়েকৃত মামলাকে সমর্থন করার জন্য যথেষ্ট ।
উদাহরণ
(ক) ক, খ-কে সারাজীবনের জন্য জমি উইল করে দেয় এবং গ-কে পরবর্তী অধিকারী নির্দেশ করে৷ ক মারা গেল । খ জমিতে প্রবেশ করে কিন্তু গ, খ-এর সম্মতি ছাড়াই স্বত্ব-সম্পর্কিত দলিলসমূহ হস্তগত কর ।৷ খ, গ-এর নিকট হতে সেগুলি পুনরুদ্ধার করতে পারে ।
(খ) ক কিছু ঋণের জন্য খ-এর নিকট কিছু অলঙ্কার বন্ধক রাখে । খ সেগুলি বিক্রয় করার অধিকারী হবার আগেই বিক্রয় করে । ক ঋণের অর্থ পরিশোধ না করেই অলঙ্কারাদির দখলের জন্য খ-এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে । মামলা অবশ্যই খারিজ হইবে । কারণ ক সেগুলির দখলের অধিকারী নয়, তার যত্টুকু অধিকার তা হচ্ছে অলঙ্কারসমূহের নিরাপদ সংরক্ষণ নিশ্চিত করা ।
(গ) ক খ কর্তৃক তার নিকট লিখিত একটি চিঠি পেল । খ, ক-এর সম্মতি ছাড়াই উক্ত চিঠি ফিরিয়ে দিলো । উক্ত চিঠিতে ক-এর এমন এক স্বত্ব রয়েছে, যা তাকে খ-এর নিকট হতে পুনরুদ্ধার করার অধিকারী করে ।
(ঘ) ক, খ-এর নিকট নিরাপদ সংরক্ষণের জন্য বই এবং কাগজপত্র জমা রাখে । খ সেগুলি হারিয়ে ফেলিল এবং গ সেগুলি পেলো, কিন্তু খ যখন দাবি করল, তখন সেগুলি প্রত্যর্পণ করতে অস্বীকার করিল । খ চুক্তি আইনের ১৬৮ ধারা অনুসারে গ-এর যদি কোন অধিকার জন্মে থাকে তবে তত্সাপেক্ষে গ-এর নিকট হইতে পুনরুদ্ধার করিতে পারে ।
(ঙ) গুদামরক্ষক ক-এর দায়িত্ব ছিল জ-এর নিকট কিছু মাল অর্পণ করায় যা ক-এর দখল হইতে খ নিয়ে গিয়েছে । ক খ-এর বিরুদ্ধে উক্ত মালামালের জন্য মামলা দায়ের করতে পারে ।
ধারা-১১। (অব্যবহিত
দখল
লাভের
অধিকারী
ব্যক্তির
কাছ
থেকে
দখল
প্রদানের
নিমিত্তে
মালিক
নয়
এরূপ
দখলকারী
ব্যক্তির
দায়-দায়িত্ব)
যে সম্পত্তির মালিক সে নিজে নয়, এমন অস্থাবর সম্পত্তির কোনো বিশেষ অংশের দখলকারী বা নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তিকে নিম্নোক্ত যে কোনো অবস্থাতে অবিলম্বিত দখল লাভের অধিকারী ব্যক্তির নিকট উহা প্রদানার্থে সুনির্দিষ্টভাবে বাধ্য করা যেতে পারে-
(ক) যখন দাবিকৃত সম্পত্তি দাবিদারের জিম্মাদারের বা প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিবাদীর নিকট রহিয়াছে ।
(খ) যখন দাবীকৃত বস্তুর ক্ষতি টাকার মাধ্যমে ক্ষতিপুরণ দাবিদারের পর্যাপ্ত প্রতিকার করিবে না ।
(গ) যখন দাবিকৃত বস্তুর ক্ষতির কোনো সাধিত যথার্থ ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হইবে ।
(ঘ) যখন দাবিকৃত বস্তুর দখল দাবিদারের নিকট হইতে অন্যায়ভাবে হস্তান্তরিত করা হইয়াছে ।
উদাহরণ
দফা-(ক)
ক, ইউরোপে যাওয়ার প্রাক্কালে তাহার সকল আসবাবপত্র তাহার অনুপস্থিতকালীন সময়ের জন্য এজেন্ট হিসেবে খ-এর জিম্মায় রেখে গেল । খ, ক-এর প্রাধিকার ছাড়াই গ-এর নিকট আসবাবপত্র বন্ধক রাখিল এবং তাহা বিক্রয়ের জন্য বিজ্ঞাপন প্রদান করিল । গ-কে ক-এর নিকট উক্ত আসবাবপত্র অর্পণ করিতে বাধ্য করা যাইতে পারে; কারণ সে ক-এর জিম্মাদার হিসেবে তাহা রাখিয়াছে ।
দফা-খ
'ক'-একজন মৃত চিত্রকরের একটি চিত্র এবং একজোড়া দুষ্প্রাপ্য চীনামাটির কারুকার্যখচিত পাত্রের অধিকারী । কিন্তু সেগুলো খ-এর দখলে রহিয়াছে । এ জিনিসগুলো অত্যন্ত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এবং তার বাজার দর নির্ণয় ও কষ্টসাধ্য । ক-এর নিকট এগুলো অর্পণ করার জন্য খ-কে বাধ্য করা যাইতে পারে ।
দফা-গ
'ক'- একজন মৃত চিত্রকরের একটি চিত্র এবং একজোড়া দুষ্প্রাপ্য চীনামাটির কারুকার্যখচিত পাত্রের অধিকারী। কিন্তু সেগুলো খ-এর দখলে রয়েছে। এ জিনিসগুলো অত্যস্ত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এবং তার বাজার দর নির্ণয়ও কষ্টসাধ্র। ক-এর নিকট এগুলো অর্পণ করার জন্য খ-কে বাধ্র করা যেতে পারে।