ধারা-৫১। অভিমতের হেতু যখন প্রাসঙ্গিক (Grounds of
Opinion, when relevant) :
কোন জীবিত লোকের অভিমত যখন প্রাসঙ্গিক, তখন ঐ অভিমত যে সমস্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত সেই সমস্তগুলিও প্রাসঙ্গিক।
উদাহরণ :
কোন বিশারদ কোন অভিমতে উপনীত হওয়ার জন্য তাহার পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিবরণ দিতে পারে।
চরিত্র যখন প্রাসঙ্গিক
Character when relevant
ধারা-৫২। দেওয়ানী মমালায় কথিত আচরণ প্রমাণ করিবার জন্য চরিত্র প্রাসঙ্গিক (In Civil cases,
character to prove conduct imputed, irrelevant) :
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপর যেইরূপ আচরণের আরোপ করা হইয়াছে; তাহার চরিত্র অনুযায়ী তাহার পক্ষে ঐরূপ্আচরণ সম্ভব অথবা অসম্ভব, তাহা দেওয়ানী মামলায় অপ্রাসঙ্গিক; কিন্তু অন্যভাবে প্রাসঙ্গিক ঘটনা হইতে চরিত্র যতটা প্রকাশিত হয়, ততটা প্রাসঙ্গিক।
ধারা-৫৩। ফৌজদারী মামলায় পূর্ববর্তী সচ্চরিত্র প্রাসঙ্গিক (In Criminal cases,
previous good character relevant) :
ফৌজদারী মামলায় অপরাধী ব্যক্তির চরিত্র যে ভাল, ইহা প্রাসঙ্গিক বিষয়।
ধারা-৫৪। পূর্ববর্তী অসৎ
চরিত্র উত্তরদান প্রসঙ্গ ব্যতীত অন্যভাবে প্রাসঙ্গিক নহে (Previous bad
character not revelant, expect in reply) :
ফৌজদারী মামলায় আসামীর চরিত্র যে খারাপ, ইহা অপ্রাসঙ্গিক বিষয়। তবে তাহার চরিত্র ভাল এই মর্মে সাক্ষ্য দেওয়া হইয়া থাকিলে তাহার চরিত্র খারাপ, ইহা প্রাসঙ্গিক হইয়া পড়ে।
ব্যাখ্যা-১ : যে মমালায় কোন ব্যক্তির খারাপ চরিত্রই বিচার্য বিষয়, সেইক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য নহে।
ব্যাখ্যা-২ : খারাপ চরিত্রের সাক্ষ্য হিসাবে পূর্ববর্তী দণ্ডাদেশ প্রাসঙ্গিক।
ধারা-৫৫। ক্ষতিপূরণ নির্ণয়ে চরিত্রের গুরুত্ব (Character as
affecting damages) :
কোন ব্যক্তির চরিত্র যদি এইরূপ হয় যে, সেই ব্যক্তির ন্যায়তঃ প্রাপ্য ক্ষতিপূরণে তাহা দ্বারা প্রভাবিত হয়, তবে দেওয়ানি মামলায় তাহা প্রাসঙ্গিক ঘটনা।
ব্যাখ্যা: ৫২, ৫৩, ৫৪, ৫৫ ধারায় চরিত্র শব্দটির দ্বারা খ্যাতি ও প্রকৃতি উভয়ই বুঝায় । কিন্তু ৫৪ ধারায় যেরূপ বিধান আছে তাহা ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সাধারণভাবে খ্যাতি ও প্রকৃতি সম্পর্কে সাক্ষ্য দেওয়া চলে, বিশেষ যে কাজের মধ্য দিয়া খ্যাতি বা আচরণ প্রতীয়মান হয়, সে বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়া চলে না।
দ্বিতীয় খন্ড
Part-II
প্রমাণ
On Proof
তৃতীয় অধ্যায়
Chapter-III
যে সমস্ত ঘটনা প্রমাণ করিবার প্রয়োজন নাই
Facts which need not be proved
ধারা-৫৬। যে সমস্ত ঘটনা বিচারকের দৃষ্টিগোচরে লওয়ার যোগ্য সেইগুলি প্রমাণ করিবার প্রয়োজন নাই (Facts judicially
noticeable need not be proved) :
আদালত যে সমস্ত ঘটনা বিচারকরূপে অবগত হইবেন তাহা প্রমাণ করিবার প্রয়োজন নাই।
ধারা-৫৭। যে সমস্ত ঘটনা আদালতকে অবশ্যই বিচারক হিসাবে দৃষ্টিগোচরে লইতে হইবে (Facts of which
court must take judicial notice)
আদালত নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিচারকরূপে অবশ্যই অবগত হইবেন :
(১) বাংলাদেশের আইনসমূহ;
(২) সশস্ত্র বাহিনীসমূহের জন্য প্রণীত যুদ্ধ বিধিসমূহের জন্য প্রণীত যুদ্ধ বিধিসমুহ;
(৩) সংসদ এবং বাংলাদেশের বর্তমানে বলবত্ আইনবলে প্রতিষ্ঠিত কোন আইন সভার কার্যপদ্ধতি।
ব্যাখ্যা: উপরোক্ত (২) ও (৩) অনুচ্ছেদে ব্যবহৃত সংসদ শব্দ নিম্নবর্ণিত সংসদগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করিবে:
(ক) গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্যের সংসদ;
(খ) ইংল্যান্ডের সংসদ
(গ) স্কটল্যান্ডের সংসদ এবং
(ঘ) আয়ারল্যান্ডের সংসদ
(৪) ইংল্যান্ডের আদালতসমূহ বিচারকরূপে অবগত হন, এইরূপ সমুদয় সীলমোহরই বাংলাদেশের অভ্যন্তরের সমুদয় আদালত ও বাংলাদেশের বাহিরের এমন সমুদয় আদালত যাহা সরকারের ক্ষমতাবলে প্রতিষ্ঠিত বা সরকারের প্রতিনিধি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে সেইগুলির সীলমোহর; এডমিরালটি ও সামুদ্রিক এখতিয়ারসম্পন্ন আদালতসমূহের সীলমোহর, নোটারী পাবলিকের সীলমোহর এবং যুক্তরাজ্যের সংসদের পাস করা কোন আইন বা বাংলাদেশের আইন হিসাবে বলবৎ
অন্য কোন আইন বা বিধি বলে প্রাপ্ত ক্ষমতা অনুসারে কোন ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত সীলমোহর;
(৫) বাংলাদেশে কোন সরকারী পদে কাহারও যোগদানের বিষয় সরকারী গেজেটে বিজ্ঞাপিত হয়, তবে সেই পদে ঐ সময়ে যোগদানকারী ব্যক্তির নাম, উপাধি, কর্তব্য কাজ ও স্বাক্ষর;
(৬) সরকার কর্তৃক স্বীকৃত কোনরাষ্ট্র অথবা রাজা বা রানীর অস্তিত্ব, উপাধি ও জাতীয় পতাকা;
(৭) সময়ের বিভাগসমূহ, পৃথিবীর ভৌগলিক বিভাগসমূহ এবং সরকরী গেজেটে বিজ্ঞাপিত সর্বসাধারণের উত্ সব, উপবাস ও ছুটিসমূহ;
(৮) বাংলাদেশের ভূখন্ডসমুহ;
(৯) বাংলাদেশের সহিত অপর কোন রাষ্ট্র বা সংগঠনের বিরোধ আরম্ভ হওয়া, চলিতে থাকা ও অবসান হওয়া;
(১০) আদালতের সদস্যবৃন্দ ও অফিসারগণের ও তাহাদের সরকারী ও অধীনস্থ অফিসারগণের ও কেরানীগণের আদালতের কার্য সম্পাদনকারী অন্যান্য অফিসারগণের এবং আইন অনুসারে আদালতে উপস্থিত হইয়া মামলা পরিচালনার ক্ষমতাপ্রাপ্ত সকল এডভোকেট ও অন্যান্য ব্যক্তিদের নাম, এবং
(১১) স্থল বা সমুদ্র পথের নিয়মাবলী।
উপরোক্ত সকল ক্ষেত্রে এবং সাধারণ্যে প্রকাশিত ইতিহাস, সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিল্পকলা বিষয়ে আদালত উপযুক্ত রেফারেন্স পুস্তক বা দলিলাদির সাহায্য গ্রহণ করিতে পারেন। যদি কোন বিষয় বিচারকরূপে অবগত হইবার জন্য কেহ যদি আদালতের নিকট দাবি জানায়, তবে যে ব্যক্তি দাবি জানাইবে সে উক্তরূপ প্রয়োজনীয় পুস্তক বা দলিল দাখিল না করা পর্যন্ত আদালত সেই ঘটনা দৃষ্টিগোচরে লইতে অস্বীকার করিতে পারেন।
ধারা-৫৮। স্বীকৃত ঘটনা প্রমাণ করিবার প্রয়োজন নাই (Facts admitted
need not be proved) :
মামলায পক্ষগণ বা তাহাদের প্রতিনিধিগণ যদি কোন বিষয় মামলার শুনানির সময় স্বীকার করিতে সম্মত হয় অথবা শুনানির পূর্বেই যদি তাহারা উহা স্বহস্তে লিখিয়া স্বীকার করিতে সম্মত হয় অথবা ঐ সময়ে বলবত্ কোন নিয়ম বা পক্ষগণের কোন আরজি-জবাব ইত্যাদি অনুসারে যদি উহা পক্ষগণের দ্বারা স্বীকৃতি বলিয়া গণ্য হয়, তবে সেই ঘটনা প্রমণ করিবার প্রয়োজন নাই।
তবে, আদালত স্বীয় ইচ্ছাধীন ক্ষমতা অনুসারে কোন স্বীকৃত ঘটনার ও অন্যবিধ প্রমাণ চাহিতে পারেন।
চতুর্থ অধ্যায়
Chapter IV
মৌখিক সাক্ষ্য
Of Oral Evidence
ধারা-৫৯। মৌখিক সাক্ষ্য দ্বারা ঘটনা প্রমাণ (Proof of facts by
oral evidence) :
দলিলের বিষয়বস্তু ব্যতীত সমস্ত বিষয়ে মৌখিক সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করা যাইতে পারে।
ধারা-৬০। মৌখিক সাক্ষ্য অবশ্যই প্রত্যক্ষ হইতে হইবে (Oral evidence must
be direct):
মৌখিক সাক্ষী সমস্ত ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রত্যক্ষ হইতে হইবে। অর্থাৎ
ইহা যদি এমন বিষয় সম্পর্কে হয়, যাহা দেখা যাইতে পারে তবে যে সাক্ষী বলিবে যে, সে উহা দেখিয়াছে, তাহার সাক্ষ্যই দিতে হইবে; ইহা যদি এমন বিষয় সম্পর্কে হয়, যাহা শোনা যাইতে পারে, তবে যে সাক্ষী বলিবে যে, সে উহা শুনিয়াছে, তাহার সাক্ষ্যই দিতে হইবে।
ইহা যদি এমন বিষয় সম্পর্কে হয়, যাহা অন্য কোন ইন্দ্রিয় দ্বারা বা অন্য কোন উপায়ে উপলদ্ধি করা যাইতে পারে, তবে যে সাক্ষী বলিবে যে, সে উহা ইন্দ্রিয় দ্বারা বা সেই উপায়ে উপলদ্ধি করিয়াছে, তাহার সাক্ষ্যই দিতে হইবে।
ইহা যদি কাহারও অভিমত অথবা অভিমতের ভিত্তি সম্পর্কে হয়, তবে যে ব্যক্তি সেই ভিত্তিতে সেই অভিমত পোষণ করে তাহার সাক্ষ্যই দিতে হইবে।
তবে শর্ত থাকে যে, বিশারদের অভিমত সম্বলিত গ্রন্থ যদি সাধারণভাবে বাজারে বিক্রয়, সেইক্ষেত্রে সেই অভিমত এবং যে যুক্তির উপর উহা প্রতিষ্ঠিত তাহা প্রমাণের জন্য সেই গ্রন্থ দাখিল করা যাইতে পারে, যদি সেই গ্রন্থপ্রণেতার মৃত্যু হইয়া থাকে অথবা যদি তাঁহার সন্ধান না পাওয়া যায় অথবা যদি তিনি সাক্ষ্য অসমর্থ হইয়া থাকেন অথবা যদি তাহাকে সাক্ষী হিসাবে উপস্থিত করিতে এইরূপ বিলম্ব ও ব্যয় হয় যাহা আদালত অযৌক্তিক বলিয়া বিবেচনা করেন।
ইহা ব্যতীত আরও শর্ত থাকে যে, মৌখিক সাক্ষ্য যদি দলিল ব্যতীত অপর বস্তুর অস্তিত্ব বা অবস্থা সম্পর্কে উল্লেখ করা হয় তবে আদালত উপযুক্ত মনে করিলে সেই বস্তু আদালতের পরিদর্শনের জন্য হাজির করিবার নির্দেশ দিতে পারেন।
পঞ্চম অধ্যায়
Chapter V
দালিলিক সাক্ষ্য
Of Documentary Evidence
ধারা-৬১। দলিলের বিষয়বস্তুর প্রমাণ (Proof of contents
of documents) :
কোন দলিলের বিষয়বস্তুর প্রাথমিক সাক্ষ্য অথবা মাধ্যমিক সাক্ষ্যের দ্বারা প্রমাণ করা যাইতে পারে।
ধারা-৬২। প্রাথমিক সাক্ষ্য (Primary evidence) :
প্রাথমিক সাক্ষ্যের অর্থ হইল, সংশ্লিষ্ট দলিলটিই আদালতের পরিদর্শনের জন্য দাখিল করা।
ব্যাখ্যা-১ : কোন দলিল কতিপয় খন্ডে সম্পাদিত হইতে প্রত্যেক খন্ডই ঐ দলিলের প্রাথমিক সাক্ষ্য।
কোন দলিল যখন প্রতিলিপি সহকারে সম্পাদিত হয়; এবং প্রত্যেকটি প্রতিলিপি পক্ষগণের মধ্যে একজন বা কয়েকজন মাত্র কর্তৃক সম্পাদিত হয়, তখন প্রত্যেকটি প্রতিলিপি উহার সম্পাদনকারী পক্ষের বিরুদ্ধে প্রাথমিক সাক্ষ্য।
ব্যাখ্যা-২ : যেক্ষেত্রে কিছু সংখ্যক দলিল সমপদ্ধতিতে প্রস্তুত হয়; যথা: মুদ্রণ, লিথোগ্রাফি বা ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে হইয়া থাকে, সেইক্ষেত্রে উহার প্রত্যেকটিই অন্যগুলির বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রাথমিক সাক্ষ্য; কিন্তু যেক্ষেত্রে সেইগুলি সবই একটি মূল দলিলের নকল, সেইক্ষেত্রে ঐগুলি মূল দলিলটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রাথমিক সাক্ষ্য নহে।
উদাহরণ
এক ব্যক্তির দখলে এমন কতকগুলি প্রাচীরপত্র আছে বলিয়া দেখান হইল, যাহা সবগুলি একটি মৌলিক দলিল হইতে একই সময়ে মুদ্রিত হইয়াছে। প্রাচীরপত্রগুলির কোন একটি অপর একটির বিষয়বস্তুর সম্পর্কে প্রাথমিক সাক্ষ্য; কিন্তু সেইগুলি সবই একটি মূল দলিলের নকল, সেইক্ষেত্রে নকল, সেইক্ষেত্রে ঐগুলি মূল দলিলটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রাথমিক সাক্ষ্য নহে।
ধারা-৬৩। মাধ্যমিক সাক্ষ্য (Secondary evidence)
:
মাধ্যমিক সাক্ষ্য বলিতে বুঝায় এবং উহার অন্তর্ভুক্ত হয় :
(১) অতঃপর বর্ণিত বিধানসমূহ অনুসারে প্রদত্ত সহিমোহর নকল;
(২) মূল দলিল হইতে এইরূপ যান্ত্রিক উপায়ে প্রস্তুতকৃত নকল, যাহাতে নকলের নির্ভুলতা সম্পর্কে তুলনা করিয়া নিশ্চিত হওয়া যায়; এবং এইরূপ নকলের সহিত তুলনা করিয়া লওয়া অন্য নকল;
(৩) মূল দলিল হইতে প্রস্তুতকৃত অথবা মূল দলিলের সহিত তুলনা করিয়া লওয়া নকল;
(৪) কোন দলিলের প্রতিলিপি যে পক্ষ উক্ত দলিল সম্পাদন করে নাই, তাহার বিরুদ্ধে উহা ব্যবহারের ক্ষেত্রে;
(৫) যে ব্যক্তি নিজে কোন দলিল দেখিয়াছেন, তাহার দেওয়া ঐ দলিলের বিষয়বস্তু সম্পর্কে মৌখিক বিবরণ।
উদাহরণ
(ক) একটি মূল দলিলের সহিত উহার ফটোগ্রাফ তুলনা করিয়া দেখা না হইয়া থাকিলেও যদি প্রমাণ করা হয় যে, ফটোগ্রাফটি যে দলিলের ফটোগ্রাফ, তাহাই মুল দলিল; তবে উক্ত ফটোগ্রাফ উক্ত মূল দলিলের মাধ্যমিক সাক্ষ্য বলিয়া গণ্য হইবে।
(খ) নকল প্রস্তুতকরণের দ্বারা কোন চিঠির যে নকল প্র্তুত করা হয়, তাহার সহিত ঐ চিঠির অন্য একটি নকল তুলনা করিয়া লওয়া হইলে, তাহা চিঠিটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে মাধযমিক সাক্ষ্য বলিয়া গণ্য হইবে, যদি প্রমাণ করা হয় যে, যন্ত্র দ্বারা প্রস্তুত নকলগুলি মূল চিঠি হইতে প্রস্তুত করা হইয়াছে।
(গ) কোন নকল হইতে প্রতিলিপি প্রস্তুত করা হয় এবং পরে যাহা মূল দলিলের সহিত তুলনা করিয়া লওয়া হয়, তাহা মাধ্যমিক সাক্ষ্য। কিন্তু যে নকলটি হইতে উক্ত প্রতিলিপি প্রস্তুত করা হয়, সেই নকলটি মূল দলিলের সহিত তুলনা করিয়া লওয়া হইয়া থাকিলেও তাহা হইতে যে প্রতিলিপি প্রস্তুত করা হয়, তাহা যদি মূল দলিলের সহিত তুলনা করিয়া লওয়া না হয়, তবে সেই প্রতিলিপি মূল দলিলের মাধ্যমিক সাক্ষ্য হ্ইবে না।
(ঘ) যে সকল মুল দলিলের সহিত তুলনা করিয়া লওয়া হইয়াছে, তাহার সম্পর্কে মৌখিক বিবরণ, অথবা মূল দলিলের ফটোগ্রাফ বা যন্ত্র দ্বারা প্রস্তুতকৃত নকল সম্পর্কে মৌখিক বিবরণ কোনটাই মূল দলিলের মাধ্যমিক সাক্ষ্য নহে।
ধারা-৬৪। প্রাথমিক সাক্ষ্য দ্বারা দলিল প্রমাণ (Proof of documents
by primary evidence) :
অতঃপর বর্ণিত ক্ষেত্রসমূহ ব্যতীত সকল ক্ষেত্রে দলিলসমূহ অবশ্যই প্রাথমিক সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করিতে হইবে।
ধারা-৬৫। যে সমস্ত ক্ষেত্রে দলিল সম্পর্কে মাধ্যমিক সাক্ষ্য দেওয়া যাইতে পারে (Cases in which
secondary evidence relating to documents may be given) :
নিম্নিলিখিত ক্ষেত্রে দলিলের অস্তিত্ব, অবস্থা বা বিষয়বস্তু সম্পর্কে মাধ্যমিক সাক্ষ্য দেওয়া যাইতে পারে:
(ক) দলিলটি যাহার বিরুদ্ধে প্রমাণ করিতে চাওয়া হইতেছে, সেই মুল দলিলটি তাহার দখলে বা কর্তৃত্বাধীনে আছে অথবা আদালতের সমনের আওতার বাহিরে বা এখতিয়ারের বাহিরে বা এখতিয়ারের বাহিরে কোন ব্যক্তির দখলে বা কর্তৃত্বাধীনে আছে অথবা এমন লোকের দখলে বা কর্তত্বাধীনে আছে, যে ব্যক্তি উহা দাখিল করিতে আইনতঃ বাধ্য, কিন্তু ৬৬ ধারায় উল্লিখিত নোটিশ দেওয়া সত্ত্বেও সেই ব্যক্তি উহা দাখিল করিতেছে না, এইরূপ যদি দেখানো হয় বা প্রতীয়মান হয়;
(খ) দলিলটি যাহার বিরুদ্ধে প্রমাণ করা হইবে, সেই ব্যক্তি বা তাহার কোন স্বার্থসংশ্লিষ্ট, প্রতিনিধি মূল দলিলের অস্তিত্ব, অবস্থা বা বিসয়বস্তু লিখিতভাবে স্বীকার করিয়াছে বলিয়া যখন প্রমাণ করা হয়;
(গ) মূল দলিল যেক্ষেত্রে বিনষ্ট হইয়াছে বা হারাইয়া গিয়াছে, অথবা যেক্ষেত্রে মূল দলিলের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সাক্ষ্য দিতে ইচ্ছুক ব্যক্তি তাহার নিজের ত্রুটি অবহেলা ব্যতীত অন্য কোন কারণে যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে উহা দাখিল করিতে পারে না;
(ঘ) মূল দলিলটির প্রকৃতি যেক্ষেত্রে এইরূপ যে উহা সহজে স্থানান্তর করা যায় না;
(ঙ) মূল দলিলটি যেক্ষেত্রে ৭৪ ধারায় বর্ণিত সরকারী দলিল;
(চ) মূল দলিলটি যেক্ষেত্রে এমন যে, অত্র আইনে বা বাংলাদেশে বলবত্ অপর কোন আইনে উহার সহিমোহর নকল সাক্ষ্য হিসাবে ব্যবহার করিবার বিধান আছে;
(ছ) কোন মূল দলিলে যখন অন্যান্য এমন বহু সংখ্যক দলিলের বিতরণ থাকে যেইগুলি আদালত পরীক্ষা করিয়া দেখা সুবিধাজনক নহে এবং যে ঘটনা প্রমাণ করিতে হইবে, তাহা ঐ সমস্ত দলিলের সাধারণ ফলস্বরূপ।
উপরে বর্ণিত (ক), (গ) ও (ঘ)-এর ক্ষেত্রে দলিলটির সহিমোহর নকল মাধ্যমিক সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহনযোগ্য; কিন্তু অন্য কোন মাধ্যমিক সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে।
(ঙ) অথবা (চ)-এর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দলিলের সহিমোহর নকল মাধ্যমিক সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণযোগ্য; কিন্তু অন্য কোন মাধ্যমিক সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে।
ছ-এর ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি দলিলগুলি পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছেন এবং অনুরূপ দলিল পরীক্ষা করিয়া দেখিবার ব্যাপারে যিনি পারদর্শী, দলিলগুলির সাধারণ ফল সম্পর্কে তাহার সাক্ষ্য দেওয়া যাইতে পারে।
ধারা-৬৬। দলিল উপস্থাপিত করিবার নোটিশ সংক্রান্ত নিয়মাবলী (Rules as to notice
to produce) :
সেইক্ষেত্রে কোন পক্ষ ৬৫ ধারার (ক) অনুচ্ছেদে উল্লিখিত দলিলের বিষয়বস্তু সম্পর্কে মাধ্যমিক সাক্ষ্য দিতে চায, সেই দলিল যাহার দখলে বা কতৃত্বাধীনে আছে, তাহাকে বা তাহার এর্টনি বা উকিলকে উহা দাখিল করিবার জন্য পূর্বাহ্নে সেই পক্ষ আইন অনুসারে নোটিশ না দিলে মাধ্যমিক সাক্ষ্য দেওয়া যাইবে না, আইনে অনুরূপ নোটিশ সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু না থাকিলে মামলার পরিস্থিতি বিবেচনায় আদালত যেইরূপ যুক্তিসঙ্গিত মনে করেন সেইরূপ নোটিশ দিতে হইবে।
তবে শর্ত থাকে যে, মাধ্যমিক সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য করিবার জন্য নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে বা আদালত অন্য যেক্ষেত্রে নোটিশ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রহিত করেন সেইক্ষেত্রে নোটিশ দিতে হইবে নাঃ
(১) যে দলিল প্রমাণ করিতে হইবে তাহাই সেইক্ষেত্রে একটি নোটিশ;
(২) মামলার প্রকৃতি বিবেচনায় যেক্ষেত্রে বিরুদ্ধ পক্ষ অবশ্যই এই কথা জানান যে, দলিলটি তাহাকে দাখিল করিতে হইবে;
(৩) যেক্ষেত্রে প্রতীযমান অথবা প্রমাণিত হয় যে, বিরুদ্ধ পক্ষ প্রতারণা বা বলপ্রয়োগের দ্বারা মূল দলিল দাখিল করিয়াছে;
(৪) যেক্ষেত্রে বিরুদ্ধ পক্ষ বা তাহার প্রতিনিধি মুল দলিল আদালতে পেশ করিয়াছে;
(৫) যেক্ষেত্রে বিরুদ্ধ পক্ষ বা তাহার প্রতিনিধি দলিলটি হারাইয়া যাওয়ার কথা স্বীকার করিয়াছে;
(৬) দলিলটি যাহার দখলে আছে সেই ব্যক্তি যদি আদালতের নাগালের মধ্যে বা এখতিয়ারের আওতার মধ্যে না থাকে।
ধারা-৬৭। দাখিলকৃত দলিলের লেখক বা স্বাক্ষরকারী বলিয়া কথিত ব্যক্তির স্বাক্ষর ও হস্তাক্ষরের প্রমাণ (Proof of signature
and hand writing of person alleged to have signed or written document produced)
:
কোন দলিল যখন কোন ব্যক্তি কর্তৃক স্বাক্ষরিত অথবা সম্পূর্ণ আংশিক লিখিত হইয়াছে বলিয়া দাবি করা হয়, তখন সেই ব্যক্তির স্বাক্ষর অথবা দলিলের যে অংশ সেই ব্যক্তির হাতের লেখায় হইয়াছে বলিয়া দাবি করা হয়; সেই অংশ যে যথার্থই তাহার হাতের লেখা তাহা প্রমাণ করিতে হইবে।
ধারা-৬৮। যে দলিল প্রত্যায়িত করা আইনতঃ প্রয়োজন, তাহা সম্পাদনের প্রমাণ (Proof of execution
of document required by law to be attested) :
যে দলিল আইনে প্রত্যায়ন করিবার আদেশ দেয়, সেই দলিল প্রমাণ করিবার জন্য অন্ততঃপক্ষে একজন প্রত্যায়নকারী সাক্ষী তলব না করার পর্যন্ত দলিলটি সাক্ষ্য হিসাবে ব্যবহার করা যাইবে না। যদি একজন প্রত্যায়নকারী সাক্ষী বাঁচিয়া থাকে এবং আদালতের এখতিয়ারের আওতায় থাকে এবং সাক্ষ্য দিবার ক্ষমতা রাখে, তবে শর্ত থাকে যে, উইল ব্যতীত অন্য কোন দলিল যদি ১৯০৮ সালের নিবন্ধন আইনের বিধান অনুসারে নিবন্ধিত করা হইয়া থাকে এবং সেই ব্যক্তি কর্তৃক উহা সম্পাদিত বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয় সেই ব্যক্তি কর্তৃক উহা সম্পাদনের কথা যদি নির্দিষ্টভাবে অস্বীকার করা না হয়, তাহা হইলে সেই দলিলের সম্পদান প্রমাণ করিবার জন্য কোন প্রত্যায়নকারী সাক্ষীকে তলব করা প্রয়োজন হইবে না।
ধারা-৬৯। যেইক্ষেত্রে প্রত্যায়নকারী সাক্ষী পাওয়া যায় না, সেইক্ষেত্রে প্রমাণ (Proof where no
attesting witness found) :
প্রত্যায়নকারী কোন সাক্ষীকে যদি না পাওয়া যায়, অথবা দলিলটি যুক্তরোজ্যে সম্পাদিত হইয়াছে বলিয়া যদি বুঝিতে দেওয়া হয়, তবে অবশ্যই প্রমাণ করিতে হইবে যে, প্রত্যায়নকারী সাক্ষীদের মধ্যে অন্ততঃপক্ষে একজনের প্রত্যায়ন সেই ব্যক্তির হাতের লেখা এবং যে ব্যক্তি দলিলটি সম্পাদন করিয়াছেন, তাহার স্বাক্ষর তাহার স্বহস্তে প্রদত্ত।
ধারা-৭০। প্রত্যায়িত দলিলের পক্ষ কর্তৃক সম্পাদনের স্বীকৃতি (Admission of
execution by party to attested document) :
প্রত্যায়িত দলিলের কোন পক্ষ যদি স্বীকার করে যে, দলিলটি তাহার দ্বারা সম্পাদিত হইয়াছে, তবে যদিও আইনতঃ দলিলটির প্রত্যায়ন আবশ্যক, তথাপি উহার সম্পাদন সম্পর্কে ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাহার স্বীকৃতিই যথেষ্ট প্রমাণ বলিয়া গণ্য হইবে।
ধারা-৭১। প্রত্যায়নকারী সাক্ষী দলিল সম্পাদন অস্বীকার করিলে সেইক্ষেত্রে প্রমাণ (Proof when
attesting witness denies to execution) :
প্রত্যায়নকারী সাক্ষী যদি দলিলটির সম্পাদনের কথা অস্বীকার করে অথবা স্মরণ করিতে না পরে, তবে অন্য সাক্ষ্য দ্বারা উহার সম্পাদন প্রমাণ করা যাইতে পারে।
ধারা-৭২। যে দলিল প্রত্যায়িত করা আইনতঃ প্রয়োজন নহে, উহার প্রমাণ (proof of document
not required by law to be attested) :
কোন একটি দলিলের প্রত্যায়ন আইনতঃ আবশ্যকীয় না হইলেও যদি্উহা প্রত্যায়িত হইয়া থাকে তবে অপ্রত্যায়িত দলিল হিসাবেই উহা প্রমাণ করা যাইতে পারে।
ধারা-৭৩। স্বীকৃত বা প্রমাণিত স্বাক্ষর, লিখন বা সীলের সহিত অন্য কোন স্বাক্ষর বা সীলের তুলনা (Comparison of
signature, writing or seal with others admitted or proved) :
কোন স্বাক্ষর, লিখন বা সীলমোহর যে ব্যক্তির বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয়, উহা তাহারই কিনা, তাহা নির্ণয় করিবার জন্য যে স্বাক্ষর লিখন বা সীলমোহর ঐ ব্যক্তির বলিয়া স্বীকৃত বা আদালতের সন্তুষ্টি মোতাবেক প্রমাণিত হইয়াছে তাহা উপরোক্ত যে স্বাক্ষর, লীখন বা সীলমোহর প্রমাণ করিতে হইবে তাহার সহিত তুলনা করা যাইতে পারে, যদি সেই স্বাক্ষর, লিখন বা সীলমোহর অন্য কোন উদ্দেশ্যে দাখিলকৃত বা প্রমাণিত হয় নাই।
কোন কথা বা অংক কোন ব্যক্তি কর্তৃক লিখিত বলিয়া দাবি করা হইয়া থাকিলে আদালত যাহাতে সেই কথা বা অংকের সহিত তুলনা করিতে পারেন, সেজন্য আদালতে উপস্থিত ব্যক্তিকে সেই কথা বা অংশ লিখিবার জন্য আদালতে নির্দেশ দিতে পারেন।
এই ধারা প্রয়োজনীয়রূপে সংশোধিত আকারে টিপসহির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
সরকারী দস্তাবেজ
Public Documents
ধারা-৭৪। সরকারী দলিল Public Documents :
নিম্নলিখিত দলিলগুলি সরকারী দলিল :
(১) যে সমস্ত দলিল-
(ক) কোন সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের,
(খ) সরকারী প্রতিষ্ঠান বা ট্রাইবুনালের এবং
(গ) বাংলাদেশের বা কমন ওয়েলথের কোন অংশের অথবা বিদেশের আইন প্রণয়নকারী বিচার বিভাগীয় বা শাসন বিভাগীয় কোন কর্মকর্তার কার্য অথবা কার্যের রেকর্ড (লিপিবদ্ধ বিবরণ)।
(২) বাংলাদেশের সরকারীভাবে রক্ষিত ব্যক্তিগত দলিলের রেকর্ড (লিপিবদ্ধ বিবরণ)।
ধারা-৭৫। বেসরকারী দলিল (Private documents)
:
অন্যান্য যাবতীয় দলিল ব্যক্তিগত।
ধারা-৭৬। সরকারী দলিলের সহিমোহর নকল (Certified copies
of public documents)
সরকারী দলিলের হেফাজতকারী প্রত্যেক সরকারী কর্মচারী ঐ দলিল পরিদর্শনের অধিকারসম্পন্ন কোন ব্যক্তি চাহিলে উপযুক্ত ফি আদায়পূর্বক সেই দলিলের একটি নকল সেই ব্যক্তিকে দিবেন এবং তত্ সহ নকলটির নিম্নভাগে এই মর্মে একটি সত্যায়ন সংযোজিত করিয়া দিবেন যে, নকলটি সেই দলিলের বা তাহার অংশবিশেষের (যেখানে যেরূপ প্রয়োজন) সঠিক নকল এবং উক্ত প্রত্যায়নে সংশ্লিষ্ট অফিসের তারিখসহ স্বাক্ষর এবং নামসহ সরকারী উপাধি সংযোজিত করিতে হইবে এবং উকত্ কর্মচারী সীলমোহর ব্যবহারের কর্তৃত্বসম্পন্ন হইলে উহাতে সীলমোহর অঙ্কিত করিতে হইবে; উপরোক্ত সত্যায়িত নকল সহিমোহর নকল বলিয়া অভিহিত হইবে।
ব্যাখ্যা:
যে কর্মচারী তাহার সাধারন কর্তব্য পালন প্রসঙ্গে উক্তরূপ নকল প্রদানের কর্তৃত্বসম্পন্ন তিনিই এই ধারার অর্থ অনুসারে সেই দলিলের হেফাজতকারী বলিয়া বিবেচিত হইবেন।
ধারা-৭৭। সহিমোহর নকল উপস্থিত করয়া দলিলের প্রমাণ (Proof of documents
by production of certified copies) :
অংশরূপ সহিমোহর নকল যে সরকারী দলিলের নকল বা যে সরকারী দলিলের অংশবিশেষের নকল বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয়, সেই দলিলের বা তাহার অংশবিশেষের বিষয়বস্তুর প্রমাণস্বরূপ উহা দাখিল করা যাইতে পারে।
ধারা-৭৮। অন্যান্য সরকারী দলিল প্রমাণ (Proof of other
official documents) :
নিম্নবর্ণিত সরকারী দলিলগুলি নিম্নবর্ণিত উপায়ে প্রমাণ করা যাইতে পারে :
(১) সরকারের বা সরকারী কোন বিভাগের অথবা কোন রাজপ্রতিনিধির আইন, আদেশ বা বিজ্ঞপ্তি সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রদানের সার্টিফিকেট সম্বলিত বিভাগীয় নথিপত্র দ্বারা অথবা, সরকারী বা রাজপ্রতিনিধির আদেশক্রম যে দলিল মুদ্রিত হইয়াছে বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয়, তাহা দ্বারা।
(২) সংসদের কার্যবিবরণী সংসদের পত্রিকা দ্বারা অথবা প্রকাশিত আইন বা আইনের সংক্ষিপ্ত বিবরণী দ্বারা অথবা উহার যে নকল সরকার কর্তৃক মুদ্রিত বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয়, তাহা দ্বারা।
(৩) ১৯৭৩ সালের ৮নং আইন দ্বারা বাতিল।
লন্ডন গেজেটের কপি বা উহার উদ্ধৃতির অংশ দ্বারা বা সেখানের সরকারী প্রকাশনার বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয়, তাহা দ্বারা।
(৪) বিদেশের নির্বাহী বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত আইন অথবা আইন পরিষদের কার্যবিবরণী সংশ্লিষ্ট কর্তৃত্বাধীনে প্রকাশিত বলিয়া ধারণা করা হয় তাহা দ্বারা, অথবা সংশ্লিষ্ট দেশের বা সেখানকার রাষ্ট্রপতির সীলমোহরযুক্ত সহিমোহর নকল দ্বারা অথবা এই দেশের কোন আইনে উহার স্বীকৃতি দ্বারা।
(৫) বাংলাদেশের কোন পৌর সংস্থার কার্যবিবরণীর অনুরূপ কার্যবিবরণীর আইনসম্মত রক্ষকের সহিমোহর কৃত নকলের দ্বারা অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে যাহা প্রকাশিত বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয় এইরূপ কোন মুদ্রিত পুস্তকের দ্বারা।
(৬) বিদেশের অন্য কোন প্রকার সরকারী দলিল মূল দলিল দ্বারা, অথবা উক্ত দলিলের আইনসঙ্গত রক্ষকের দ্বারা সহিমোহর কৃত নকল, যাহাতে নোটারী পাবলিক অথবা বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিনিধির বা কূটনৈতিক প্রতিনিধির সীলমোহরসহ এইরূপ সার্টিফিকেট দেওয়া আকে, যে উহা সংশ্লিষ্ট মূল দলিলের আইনসঙ্গত রক্ষণের দ্বারা সত্যায়িত নকল এবং তত্ সহ সংশ্লিষ্ট দেশের আইন অনুসারে উক্ত দলিলের প্রকৃতির প্রমাণ থাকিলে তাহা দ্বারা।
দলিল সম্পর্কে অনুমান
Presumptions as to Documents
ধারা-৭৯। সহিমোহর নকলের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে অনুমান (Presumption as to
genuineness of certified copies) :
যে দলিলকে কোন সার্টিফিকেট বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয় অথবা অন্য কোন দলিলের সহিমোহর নকল বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয়, যাহা কোন বিশেষ ঘটনার সাক্ষ্য হিসাবে আইনতঃ গ্রহণযোগ্য বলিয়া ঘোষিত হইয়াছে এবং যাহা সরকারের সহিমোহরকৃত, আদালত সেই দলিলকে যথার্থ বলিয়া অনুমান করিবেন।
তবে উক্ত দলিল সংশ্লিষ্ট আইনে যেইরূপ নির্দেশিত আছে মোটামুটিভাবে সেই আকারে প্রণীত এবং সেই পদ্ধতিতে সম্পাদিত বলিয়া বুঝিতে দিতে হইবে।
আদালত ইহাও সিদ্ধান্ত করিবেন যে, যে কর্মকর্তা উক্ত দলিলে স্বাক্ষর বা সত্যায়ন করিয়াছেন বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হইয়াছে সেই কর্মকর্তা তাহার স্বাক্ষরিত কাগজে যে পদাধিকার দাবি করিয়াছেন, তত্ কালে তিনি সেই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
ধারা-৮০। লিপিবদ্ধ সাক্ষ্য হিসাবে উপস্থাপিত দলিল সম্পর্কে অনুমান (Presumption as to
documents produced as record of evidence) :
কোন আদালতে যখন কোন দলিল দাখিল করা হয় এবং তাহা লিপিবদ্ধ সাক্ষ্য সাক্ষ্যের স্মারকলিপি বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয় অথবা কোন মামলায় বা সাক্ষ্য গ্রহণের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তার নিকট কোন সাক্ষীর প্রদতত্ সাক্ষ্যের অংশ বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয় অথবা আইন অনুসারে গৃহীত কোন আটক ব্যক্তি বা আসামীর বিবৃতি বা স্বীকারোক্তি বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয় এবং তাহা কোন জজ, ম্যাজিষ্ট্রেট বা উপরোক্ত কর্মকর্তা কর্তৃক স্বাক্ষরিত বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয়, তখন আদালত সিদ্ধান্ত করিবেন যে, দলিলটি বিশুদ্ধ।
যে পরিস্থিতিতে উহা গ্রহণ করা হইয়াছে তত্ সম্পর্কে দলিলটিতে স্বাক্ষরদানকারী ব্যক্তি যে বিবৃতি দিয়াছেন বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হইয়াছে তাহা সত্য এবং অনুরূপ সাক্ষ্য, বিবৃতি বা স্বীকারোক্তি যথাবিহীতভাবে লওয়া হইয়াছে।
ধারা-৮১। গেজেট, সংবাদপত্র, সংসদের বেসরকারী আইন ও অন্যান্য দলিল সম্পর্কে অনুমান (Presumption as to
Gazettes, newspapers, private Acts of Parliament and other documents) :
লন্ডন গেজেট অথবা ব্রিটিশ রাজত্বের কোন উপনিবেশ; অধীনস্থ রাজ্য বা দখলী রাজ্যের সরকারী গেজেট বলিয়া যাহা বুঝিতে দেওয়া হয় অথবা সংবাদপত্র বা সাময়িক পত্রিকা বলিয়া যাহা বুঝিতে দেওয়া হয় অথবা রাজকীয মুদ্রাকর কর্তৃক মুদ্রিত যুক্তরাজ্যের সংসদের কোন বেসরকারী আইনের নকল বলিয়া যাহা বুঝিতে দেওয়া হয় এবং আইন অনুসারে যে দলিল কোন ব্যক্তি কর্তৃক রক্ষিত হইবে বলিয়া নির্দেশিত, তাহা যদি মোটামুটিভাবে আইনের নির্দেশিত আকারে রক্ষিত হইয়া থাকে এবং যথাবিহিত হেফাজত হইতে দাখিলকৃত হয়, এইরূপ প্রত্যেক দলিল আদালত বিশুদ্ধ বলিয়া অবশ্য ধরিয়া লইবেন।
এই ধারাটি ১৯৭৩ সালের ৮নং আইনে বাতিল করা হইয়াছে।
ধারা-৮২। ইংল্যান্ডে যে সমস্ত দলিল, সীল ও স্বাক্ষর প্রমাণ ব্যতীত গ্রাহ্য হয়, সেই সবগুলি সম্পর্কে অনুমান (Presumption as to
document admissible in England without proof of seal or signature) :
কোন আদালতে যখন এমন দলিল দাখিল করা হয় এবং বুঝিতে দেওয়া হয় যে, ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডে বর্তমানে প্রচলিত আইন অনুসারে ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডে কোন বিচার আদালতে উহাতে প্রদত্ত সীল, স্ট্যাম্প বা উহা অনুমোদনসূচক স্বাক্ষর প্রমাণ করা ব্যতীতই অথবা যে ব্যক্তি উহাতে স্বাক্ষর করিয়াছে বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয়, সেই ব্যক্তি বিচার বিভাগীয় বা অন্য যে সরকারী পদাধিকার দাবি করে তাহার প্রমাণ ব্যতীতই উহা কোন বিষয়ের প্রমাণ হিসাবে গ্রহণযোগ্য, তবে আদালত অবশ্যই ধরিয়া লইবেন যে, উপরোক্ত সীল, স্ট্যাম্প বা স্বাক্ষর বিশুদ্ধ এবং যে ব্যক্তি উহাতে স্বাক্ষর দিয়াছেন, তিনি বিচার বিভাগীয় বা অন্য যে বেসরকারী পদাধিকার দাবি করিয়াছেন, স্বাক্ষর দানকালে তিনি সেই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং উক্ত দলিল ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডে যে উদ্দেশ্যে গ্রহণযোগ্য হইত, সেই উদ্দেশ্যে উহা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হইবে।
ধারা-৮৩। সরকারী কর্তৃত্বাধীনে প্রণীত নকশা বা পরিকল্পনা সম্পর্কে অনুমান (Presumption as to
maps or plans made by authority of Government) :
যে সমস্ত মানচিত্র বা নকশা সরকারের কর্তৃত্বাধীনে প্রণীত বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয়, আদালত সেইগুলিকে অনুরূপভাবে প্রনীত ও সঠিক বলিয়া অবশ্য ধরিয়া লইবেন; কিন্তু যে সমস্ত মানচিত্র বা নকশা কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রণীত, সেইগুলি নির্ভুল বলিয়া অবশ্যই প্রমাণ করিতে হইবে।
ধারা-৮৪। আইন ও আদালতের সিদ্ধান্তের প্রতিবেদন সংকলন সম্পর্কে অনুমান (Presumption as to
collections of laws and reports of decisions) :
কোন দেশের সরকারের কর্তৃত্বাধীনে যে পুস্তক বা গেজেট মুদ্রিত বা প্রকাশিত এবং যাহাতে সেই দেশের কোন আইন অন্তর্ভুক্ত হইয়াছে বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয়, এইরূপ প্রত্যেকটি পুস্তক বা গেজেটের বিশুদ্ধতা আদালত অবশ্যই ধরিয়া লইবেন এবং সংশ্লিষ্ট দেশের আদালতসমূহের সিদ্ধান্তের বিবরণ যে পুস্তকে বা গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হইয়াছে বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয়, তাহার বিশুদ্ধতাও আদালত অবশ্যই ধরিয়া লইবেন।
ধারা-৮৫। আমমোক্তার নামা সম্পর্কে অনুমান (Presumption as to
power of attorney) :
আমমোক্তারনামা বলিয়া যাহা বুঝিতে দেওয়া হয় এবং যাহা কোন নোটারী পাবলিক বা কোন আদালত, জজ, ম্যাজিষ্ট্রেট, কন্সাল, বা ভাইস-কন্সাল অথবা সরকারের কোন প্রতিনিধির সম্মুখে সম্পাদিত হইয়াছে এবং তত্ কর্তৃক দৃড়ীকৃত হইয়াছে বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয়, তাহা অনুরূপভাবে সম্পাদিত ও দৃঢ়ীকৃত হইয়াছে বলিয়া আদালত অবশ্যই ধরিয়া লইবেন।
ধারা-৮৬। বিদেশী বিচার বিভাগীয নথিপত্রের সহিমোহর নকল সম্পর্কে অনুমান (Presumption as to
certified copies of foreign judicial records) :
বাংলাদেশের অংশ নহে এমন কোন দেশের বিচার বিষয়ক রেকর্ডের সহিমোহর নকল বলিয়া যাহা বুঝিতে দেওয়া যাইয়াছে, এইরূপ কোন দলিল বিশুদ্ধ ও নির্ভুল বলিয়া আদালত অনুমান করিতে পারেন, যদি ঐ দেশের অবস্থিত বা ঐ দেশের জন্য নিযুক্ত সরকারের কোন প্রতিনিধি কর্তৃক এইরূপ পদ্ধতিতে উহা সত্যায়িত হইয়াছে বুঝিতে দেওয়া হয়, যে পদ্ধতিতে সাধরণত ঐ দেশের বিচার বিষয়ক রেকর্ডের নকল সত্যায়িত হইয়া থাকে।
ধারা-৮৭। পুস্তক, মানচিত্র ও চার্ট সম্পর্কে অনুমান (Presumption as to
books, maps and charts) :
সাধারণ এবং গণ-স্বার্থমূলক বিষয়ে তথ্যের জন্য আদালতে যে পুস্তকের সাহায্য গ্রহণ করিতে পারেন তাহা এবং প্রকাশিত কোন মানচিত্র বা তালিকায় বর্ণিত বিষয়সমূহ প্রাসঙ্গিক ঘটনা হইলে এবং তাহা পরিদর্শনের জন্য দাখিল হইলে আদালত ধরিয়া লইতে পারেন যে, যে ব্যক্তি কর্তৃক উহা লিখিত ও প্রকাশিত হইয়াছে এবং যে সময়ে ও স্থানে উহা লিখিত ও প্রকাশিত হইয়াছে বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয়, প্রকৃতপক্ষে উহা সেই ব্যক্তি কর্তৃক সেই সময়ে ও স্থানে লিখিত ও প্রকাশিত হইয়াছে।
ধারা-৮৮। তারাবার্তা সম্পর্কে অনুমান (Presumption as to
telegraphic messages) :
আদালত ধরিয়া লইতে পারেন যে, যে ব্যক্তির নামে কোন তারবর্তা প্রেরিত হইয়াছে বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয়, সেই ব্যক্তির নিকট টেলিগ্রাফ অফিস হইতে যে বার্তা অর্পণ করা হয়, তাহা এবং যে অফিস হইতে বার্তাটি প্রেরিত হইয়াছে বলিয়া দেওয়া হয়, তারযোগে প্রেরণের জন্য সেই অফিসে অর্পিত বার্তা অভিন্ন। কিন্তু বার্তাটি তারযোগে প্রেরণের জন্য যে ব্যক্তি উহা অর্পণ করিয়াছে, তাহার সম্পর্কে আদালত অবশ্যি কিছু অনুমান করিবে না।
ধারা- ৮৯। উপস্থাপিত হয় নাই এইরূপ দলিলের যথাযথ সম্পাদন ইত্যাদি সম্পর্কে অনুমান (Presumption as to
due execution etc. of documents not produced) :
যে দলিল তলব করা হইয়াছে এবং যাহা দলিলের নোটিশ দেওয়া সত্ত্বেও দাখিল করা হয় নাই, এইরূপ প্রত্যেক দলিল আইনের বিধান অনুসারে প্রত্যায়িত স্ট্যাম্পযুক্ত ও সম্পাদিত হইয়াছে বলিয়া আদালত অবশ্যই মানিয়া লইবেন।
ধারা-৯০। ত্রিশ বত্সরের পুরাতন দলিল সম্পর্কে অনুমান (Presumption as to
documents thirty years old) :
যখন কোন দলিল ত্রিশ বত্সরের পুরাতন বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয় বা প্রমাণকরা হয় এবং তাহা সংশ্লিষ্ট মামলায় যে পক্ষের হেফাজতে থাকা সঙ্গত বলিয়া আদালত মনে করেন, সেই পক্ষের হেফাজত হইতে উহা আদালতে দাখিল করা হয়; তখন আদালত ধরিয়া লইতে পারেন যে, সেই দলিলের স্বাক্ষর এবং অন্যান্য সমস্ত অংশ যে ব্যক্তির হস্তাক্ষর বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয়, তাহা সেই ব্যক্তিরই হস্তাক্ষর এবং যেখানে দলিলটি সম্পাদিত বা প্রত্যায়িত, সেখানে আদালত ধরিয়া লইতে পারেন যে, যে ব্যক্তির দ্বারা উহা সম্পাদিত ও সত্যায়িত বলিয়া বুঝিতে দেওয়া হয়, সেই ব্যক্তির দ্বারা উহা যথাবিহিতরূপে সম্পাদিত ও সত্যায়িত হইয়াছে।
ব্যাখ্যা: দলিল যে স্থানে ও যে ব্যক্তির হেফাজতে থাকা স্বাভাবিক, যদি উহা সেই স্থানে এবং সেই ব্যক্তির হেফাজতে থাকে, তবে উহা উপযুক্ত হেফাজতে আছে বলিয়া বুঝাইবে। কিন্তু দলিলটি যে হেফাজতে আছে, সেখানে থাকিবার আইনসঙ্গত কারণ আছে বলিয়া যদি প্রমাণিত হয় অথবা সংশ্লিষ্ট মামলার ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে অনুরূপ কারণ থাকা সম্ভব বলিয়া যদি বিবেচিত হয়, তবে সেই হেফাজত অনুপযুক্ত বলিয়া গণ্য হইবে না।
এই ব্যাখ্যা ৮১ ধারার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
উদাহরণ
(ক) একটি ভুসম্পত্তি দীর্ঘকাল যাবত 'ক'-এর দখলে আছে। ভূমি সংক্রান্ত এইরূপ দলিলপত্র তিনি তাহার হেফাজত হইতে বাহির করেন, যাহা দ্বারা ঐ জমিতে তাহার স্বস্ত প্রতীয়মান হয়। এইক্ষেত্রে দলিলগুলির হেফাজত উপযুক্ত।
(খ) 'ক' যে ভূসম্পত্তির বন্ধকগ্রহীতা তত্সংক্রান্ত দলিলপত্র তিনি বাহির করিলেন। ভুমি বন্ধকদাতার দখলে আছে। এইক্ষেত্রে দলিলগুলির হেফাজত উপযুক্ত।
(গ) 'খ'-এর আত্মীয় 'ক' এমন দলিলপত্র বাহির করিলেন, যেইগুলি 'খ'-এর দখলী জমি সংক্রান্ত এবং নিরাপদ সংরক্ষণের জন্য 'খ' যেইগুলি 'ক'-এর নিকট রাখিয়াছিলেন। এইক্ষেত্রে দলিলগুলির হেফাজত উপযুক্ত।
ষষ্ঠ অধ্যায়
Chapter VI
দালিলিক সাক্ষ্য দ্বারা মৌখিক সাক্ষ্য বর্জন
Of the exclusion of oral by documentary evidence
ধারা-৯১। চুক্তি, সম্পত্তির স্বত্বাধিকার, দান বা অন্যবিধ বিলি ব্যবস্থার শর্তাবলী দলিলের আকারে লিপিবদ্ধ হইলে সেই সম্পর্কে সাক্ষ্য (Evidence of terms
of contracts, grants and other depositions of property reduced to form of
document) :
যখন চুক্তি, মঞ্জুরী বা অন্য প্রকার সম্পত্তি বিলি ব্যবস্থার শর্তাবলী একটি দলিলের আকারে লিপিবদ্ধ করা হয়, তখন এবং অন্যান্য যে সমস্ত ক্ষেত্রে দলিলের আকারে কোন ব্যাপারে লিপিবদ্ধ করা আইনতঃ আবশ্যক; সেই সমস্ত ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চুক্তি, মঞ্জুরী বা অন্য প্রকার বিলি ব্যবস্থার শর্তাবলী বা সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে প্রমাণের জন্য সেই দলিল ব্যতীত অন্য কোন সাক্ষ্য দেওয়া যাইবে না। তবে যে সমস্ত ক্ষেত্রে এই আইনে ইতিপূর্বে বর্ণিত বিধান অনুসারে মাধ্যমিক সাক্ষ্য গ্রহনযোগ্য, সেই সমস্ত ক্ষেত্রে মাধ্যমিক সাক্ষ্যও দেওয়া যাইবে।
ব্যতিক্রম ১ : যখন কোন সরকারী কর্মচারীর নিয়োগ লিখিতভাবে হওয়া আইনতঃ আবশ্যক এবং যখন দেখান হয় যে, কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট পদে কাজ করিয়াছেন তখন তাহার লিখিত নিয়োগপত্র প্রমাণ করিবার প্রয়োজন নাই।
ব্যতিক্রম ২ : বাংলাদেশে যে সমস্ত উইলের প্রবেট স্বীকৃত হইয়াছে, সেই সমস্ত উইল উক্ত প্রবেট দ্বারা প্রমাণ করা যাইতে পারে।
ব্যাখ্যা ১ : এই ধারায় উল্লিখিত চুক্তি, মঞ্জুরী বা সম্পত্তির বিলি ব্যবস্থার বিষয় যেক্ষেত্রে একটি দলিল লিপিবদ্ধ এবং যেইক্ষেত্রে একাধিক দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে এই উভয় ক্ষেত্রেই এই ধারা সমানভাবে প্রযোজ্য।
ব্যাখ্যা ২ : যেইক্ষেত্রে দলিলের একাধিক মৌলিক লিপি থাকে সেইক্ষেত্রে কেবল একটি মৌলিক লিপি প্রমাণ করা আবশ্যক।
ব্যাখ্যা ৩ : এই ধারায় উল্লিখিত ঘটনা ব্যতীত অপর কোন ঘটনা কোন দলিলে বর্ণিত থাকিলে তাহা সেই ঘটনা সম্পর্কে মৌখিক সাক্ষ্য গ্রহণ বারিত করিবে না।
উদাহরণ
(ক) একটি চুক্তির বিষয়বস্তু যদি কতিপয় চিঠিতে গ্রথিত হইয়া থাকে, তবে যে চিঠিগুলোতে উহা গ্রথিত হইয়াছে, তাহার সবগুলিই প্রমাণ করিতে হইবে।
(খ) কোন চুক্তি যদি একটি বরাত চিঠিতে লিপিবদ্ধ থাকে, তবে সেই বরাত চিঠি অবশ্যই প্রমাণ করিতে হইবে।
(গ) কোন বরাত চিঠি যদি তিনটি লিপির সমন্বয়ে প্রণীত হয়, তবে উহার শুধু একটি লিপি প্রমাণ করিতে হইবে।
(ঘ) 'ক' কতিপয় শর্তাধীনে নীল সরবরাহ করিবার জন্য 'খ'-এর সহিত লিখিত চুক্তি করে। চুক্তিতে উল্লেখ করা হয় যে, ইতিপূর্বে মৌখিক চুক্তি অনুসারে সরবরাহকৃত নীলের মূল্য 'ক'-কে 'খ' পরিশোধ করিয়াছে।
পূর্বে সরবরাহকৃত নীলের মূল্য পরিশোধ করা হয় নাই এই মর্মে মৌখিক সাক্ষ্য দিবার প্রস্তাব করা হইল। এই সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য।
(ঙ) 'খ'-এর প্রদত্ত টাকার জন্য 'ক' একটি রসিদ দিল। টাকা দেওয়া সম্পর্কে মৌখিক সাক্ষ্য দিবার প্রস্তাব করা হইল।
ধারা-৯২। মৌখিক চুক্তির সাক্ষ্য বর্জন (Exclusion of
evidence of oral agreement) :
দলিলের আকারে লিপিবদ্ধ করা আইনতঃ প্রয়োজন এইরূপ কোন চুক্তি, মঞ্জুরী, সম্পত্তির বিলিব্যবস্থা বা অন্য কোন বিষয় যখন পূর্ববর্তী ধারা অনুসারে প্রমাণিত হইয়াছে, তখন সেই দলিলের কোন শর্তের পরিবর্তন, সংযোজন বা বর্জনের উদ্দেশ্যে উক্ত দলিলের পক্ষগণের মধ্যে বা তাহাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিগণের মধ্যে কোন মৌখিক চুক্তি বা বিবৃতি সম্পর্কে কোন সাক্ষ্য অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হইবে না।
তবে শর্ত এই যে,
১। প্রতারণা, ভীতি-প্রদর্শণ, বে-আইনী কার্য, উপযুক্ত সম্পাদনের অভাব, চুক্তি সংশ্লিষ্ট কোন পক্ষের যোগ্যতার অভাব, বিনিময়ের অভাব বা ব্যর্থতা অথবা বিষয় বা আইন সংক্রান্ত ভ্রান্তি ইত্যাদি কোন কারণে দলিল অকার্যকরী হইয়া পড়িলে বা অনুরূপ কিছুর ফলে কোন ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট দলিল সম্পর্কে কোন ডিক্রি বা আদেশ লাভের অধিকারী হইলে সেই বিষয় প্রমাণ করা যাইতে পারে।
২। কোন বিষয় সম্পর্কে যদি কোন স্বতন্ত্র মৌখিক চুক্তি থাকে এবং দলিলে যদি তাহার কোন উল্লেখ না থাকে এবং তাহা যদি দলিলের শর্তের সহিত সামঞ্জস্যবিহীন না হয়, তবে সেই চুক্তির অস্তিত্ব প্রমাণ করা যাইতে পারে। এই শর্তটি কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে কিনা, তাহা বিবেচনা করিবার সময় আদালত অবশ্যই সংশ্লিষ্ট দলিলের আনুষ্ঠানিকতার পরিমাণের দিকে লক্ষ্য রাখিবেন।
৩। উপরে বর্ণিত কোন চুক্তি, মঞ্জুরী বা সম্পত্তির বিলিব্যবস্থার ব্যাপারে কোন দায় আরোপের পূর্বশর্ত সম্বলিত কোন স্বতন্ত্র মৌখিক চুক্তি থাকিলে তাহার অস্তিত্ব প্রমাণ করা যাইতে পারে।
৪। উপরে বর্ণিত কোন চুক্তি, মঞ্জুরী বা সম্পত্তির বিলিব্যবস্থা বাতিল বা সংশোধন করিবার উদ্দেশ্যে পরবর্তীকালে মৌখিক কোন সুষ্পষ্ট চুক্তি হইয়া থাকিলে তাহা প্রমাণ করা যাইতে পারে। তবে সংশ্লিষ্ট চুক্তি, মঞ্জুরী বা সম্পত্তির বিলিব্যবস্থা যদি লিখিত হওয়া আইনতঃ আবশ্যকীয হয় অথবা যদি উহা দলিল নিবন্ধিতকরণ সংক্রান্ত প্রচলিত আইন অনুসারে নিবন্ধিত হইয়া থাকে, তবে পরবর্তীকালের মৌখিক চুক্তি প্রমাণ করা যাইবে না।
৫। চুক্তিতে প্রকাশ্যভাবে উল্লিখিত থাকে না এইরূপ ঘটনা যখন কোন প্রচলিত প্রথা বা রীতি অনুসারে চুক্তির অংশ হিসাবে সংযোজিত গণ্য করা হয়, তখন সেই প্রথা বা রীতি প্রমাণ করা যাইতে পারে।
অবশ্য উক্তরূপ ঘটনার সংযোজন সংশ্লিষ্ট চুক্তিটির প্রকাশ্য শর্তাবলীর পরিপন্থী বা তাহার সহিত সামঞ্জস্যবিহীন হইলে তাহা প্রমাণ করা যাইবে না।
৬। কেন দলিলের ভাষা তত্ কালীন বিষয়ের সহিত কিভাবে সম্পর্কিত তাহা ব্যাখ্যা করে এমন যেকোন বিষয়ের প্রমাণ করা যাইতে পারে।
উদাহরণ
(ক) চট্টগ্রাম হইতে লন্ডনগামী জাহাজে অবস্থিত পণ্য সম্পর্কে একটি বীমাচুক্তি সম্পন্ন হইল। পণ্যগুলি নির্দিষ্ট যে জাহাজে বোঝাই করা হইল, সেই জাহাজটি হারাইয়া গেল। নির্দিষ্ট সেই জাহাজটি যে মৌখিকভাবে বীমাচুক্তির আওতা হইতে বাদ দেওয়া হইয়াছিল, তাহা প্রমাণ করা যাইবে না।
(খ) 'ক' ১৮৭০ সালে ১লা মার্চ 'খ'-কে ১০০০ টাকা প্রদানের জন্য একটি লিখিত চুক্তিতে বিনাশর্তে আবদ্ধ হইল; একই সময়ে যদি এইরূপ একটি মৌখিক চুক্তি হয় যে, ৩১শে মার্চের পূর্বে উক্ত টাকা প্রদান করা হইবে না, তবে তাহা প্রমাণ করা যাইবে না।
(গ) রামপুর চা বাগান নামচ সম্পত্তি দলিলমূলে বিক্রয় হইলা। উক্ত দলিলে বিক্রিত সম্পত্তির একটি নকশা সন্নিবেশিত হইল। উক্ত মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত নহে এইরূপ কোন জমি বরাবরই উক্ত সম্পত্তির অংশ হিসাবে গণ্য হইয়া আসিতেছে এবং উক্ত দলিলবলে সেই জমিও হস্তান্তরিত হইয়াছে, তাহা প্রমাণ করা যাইবে না।
(ঘ) 'ক' একটি চুক্তি প্রবলের জন্য 'খ'-এর খনির কাজ চালু করিবার জন্য লিখিত চুক্তিতে আবদ্ধ হইল। খনির মূল্য সম্পর্কে 'খ'-এর ভ্রান্ত বর্ণনার ফলেই 'ক' উক্ত চুক্তি সম্পাদনে প্রলুদ্ধ হইয়াছিল; এই বিষয় প্রমাণ করা যাইতে পারো।
(ঙ) 'ক' একটি চুক্তি প্রবলের জন্য 'খ'-এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করিল। সে আরও প্রার্থনা করিল যে, চুক্তিটির একটি শর্ত প্রসঙ্গে উক্তি সংশোধন করিতে হইবে; কারণ সেই শর্তটি ভুলবশতঃ চুক্তিতে সন্নিবেশিত হইয়াছিল। 'ক' প্রমাণ করিতে পারে যে, চুক্তিতে এইরূপ ভুল রহিয়াছে, যাহার ফলে সে আইনতঃ চুক্তি সংশোধনের দাবী করিবার অধিকার লাভ করিয়াছে।
(চ) 'ক' একটি চিঠিতে 'খ'-এর পণ্য ক্রয়ের জন্য অর্ডার দেয়। মূল্য পরিশোধের সময় সম্পর্কে চিঠিতে কিছু উল্লেখ করা হয় না। পণ্য অর্পিত হইলে সে তাহা গ্রহণ করে। 'খ' উক্ত পণ্যের মূল্যের জন্য 'ক'-এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। 'ক' দেখাইতে পারে যে, যে সময়ের জন্য ধারে পণ্য সরবরাহ করা হইয়াছে, সেই সময় অতিক্রান্ত হয় নাই।
(ছ) 'ক' একটি ঘোড়া 'খ'-এর নিকট বিক্রয় করে এবং ঘোড়াটি নিখুঁত এই মর্মে মৌখিক নিশ্চিত দেয়। 'ক' একটি কাগজে 'খ'-কে এই কথা লিখিয়া দেয়, 'ক'-এর নিকট হিতে ৫০০ টাকা মূল্যে একটি ঘোড়া ক্রয় করিলাম। 'খ' উক্ত মৌখিক শর্তটি প্রমাণ করিতে পারে।
(জ) 'খ'-এর নিকট হ্ইতে 'ক' ঘর ভাড়া নেয় এবং একটি কার্ডে এই কথা লিখিয়া দেয়, মাসিক ২০০ টাকা ঘর ভাড়া। এই শর্তের মধ্যে আংশিক আহার্য সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত, এই মর্মে মৌখিক চুক্তি 'ক' প্রমাণ করিতে পারে।
(ঝ) 'ক' তাহার পাওনা টাকা আদায়ের তাগাদাস্বরূপ 'খ'-এর নিকট উক্ত টাকা প্রাপ্তির একটি রসিদ পাঠাইয়া দিল 'খ' রসিদটি রাখিল; কিন্তু টাকা পাঠাইল না। উক্ত টাকার জন্য 'ক' দেওয়ানী মামলা দায়ের করিলে উক্ত বিষয়টি সে প্রমাণ করিতে পারে।
(ঞ) একটি অনির্ধারিত ঘটনা ঘটিলে চুক্তি কার্যকরী হইবে, এই শর্তে 'ক' ও 'খ' একটি লিখিত চুক্তি সম্পাদন করিল। চুক্তিটি 'খ'-এর নিকট রহিল এবং 'খ' সেই চুক্তি অনুসারে 'ক'-এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করি। যে অবস্থায় চুক্তিপত্রটি 'খ'-এর নিকট অর্পিত হইয়াছিল 'ক' তাহা প্রদর্শণ করিতে পারে।
ধারা-৯৩। দ্ব্যর্থবোধক দলিলের ব্যাখ্যা বা সংশোধনের সাক্ষ্য বর্জন (Exclusion of
evidence to explanin or amend ambiguous document) :
দলিলে ব্যবহৃত ভাষা যখন দৃষ্টতঃ অনিশ্চয়তাবোধক বা ত্রুটিপূর্ণ তখন যাহা দ্বারা উহার অর্থ বোধগম্য হয় বা ত্রুটি মোচন হয় এইরূপ সাক্ষ্য দেওযা যাইতে পারে না।
উদাহরণ
(ক) 'ক' একটি ঘোড়া ১০০০ টাকা অথবা ১৫০০ টাকা মূল্যে 'খ' -এর নিকট বিক্রয় করিবার জন্য লিখিত চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। কোন মূল্য দেওয়া স্থির হইয়াছিল, সেই বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়া যাইবে না।
(খ) একটি দলিলে কতকগুলি শূন্যস্থান আছে। শূন্যস্থানগুলি কিভাবে পূরণ করা স্থির হইয়াছিল সেই বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়া যাইবে না।
ধারা-৯৪। বিদ্যমান ঘটনা দলিল প্রয়োগের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য বর্জন (Exclusion of
evidence against application of document to existing fact) :
যখন দলিলে ব্যবহৃত ভাষা স্বতঃই সরল এবং যখন তাহা বিদ্যমান বিষয়সমূহের প্রতি সঠিকভাবে প্রযোজ্য হয়, তখন উক্ত ভাষা উক্তরূপ বিষয়ে প্রয়োগের জন্য ব্যবহার করা হয় নাই, ইহা দেখানোর জন্য সাক্ষ্য দেওয়া যাইবে না।
উদাহরণ
'ক' একটি দলিলমূলে “রংপুরে অবস্থিত আমার ১০০ বিঘার ভূসম্পত্তি” 'খ'-এর নিকট বিক্রয় করিল। রংপুরে 'ক'-এর ১০০ বিঘার একটি ভূসম্পত্তি আছে। এইক্ষেত্রে এইরূপ সাক্ষ্য দেওয়া যাইবে না যাহা দ্বারা প্রতীযমান হইবে যে, দলিলমূলে যে সম্পত্তি বিক্রয় করা হইয়াছে তাহা ভিন্ন স্থানে অবস্থিত এবং ভিন্ন পরিমাণের সম্পত্তি।
ধারা-৯৫। বিদ্যমান ঘটনা প্রসঙ্গে অর্থহীন দলিল সম্পর্কে সাক্ষ্য (Evidence as to
document in unmeaning reference to existing facts) :
যখন দলিলে ব্যবহৃত ভাষা স্বতঃই সরল, কিন্তু বিদ্যমান বিষয়ের সহিত অমিল, তখন উক্ত ভাষা যে একটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছিল, ইহা দেখানোর জন্য সাক্ষ্য দেওয়া যাইবে।
উদাহরণ
'ক' একটি দলিলমূলে “ঢাকা অবস্থিত আমার বাড়ি” 'খ'-এর নিকট বিক্রয় করিল। ঢাকা 'ক'-এর কোন বাড়ি ছিল না। কিন্তু দেখা যায় যে, নারায়ণগঞ্জে তাহার একটি বাড়ি ছিল এবং উক্ত দলিল সম্পাদনের সময় হইতেই তাহা 'খ' দখল করিতেছিল।
দলিলটি যে নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত বাড়ি সম্পর্কেই সম্পাদিত হইয়াছিল, তাহা দেখাইবার জন্য উপরোক্ত বিষয়গুলি প্রমাণ করা যাইতে পারে।
ধারা-৯৬। কতিপয় ব্যক্তির মধ্যে কেবল একজনের প্রতি প্রযোজ্য ভাষা প্রয়োগ সম্পর্কে সাক্ষ্য (Evidences as to
application of language which can apply to one only of several person) :
যখন বিষয়াবলী এইরূপ যে, দলিলে ব্যবহৃত ভাষা কতিপয় ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে একজন বা একটির প্রতি প্রযোজ্য বলিয়া বুঝান হইয়া থাকিতে পারে এবং উহাদের একাধিকের প্রতি প্রযোজ্য বলিয়া বুঝান হয় নাই, তখন উপরোক্ত ব্যক্তিগণের বা বস্তুগুলির মধ্যে কাহার প্রতি বা কোনটির প্রতি সেই ভাষা প্রযোজ্য বলিয়া ব্যবহার করা হইয়াছে, তদবিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়া যাইতে পারে।
উদাহরণ
(ক) 'ক' ১০০০ টাকার মূল্যে “আমার সাদা ঘোড়া” 'খ'-এর নিকট বিক্রয় করিতে চুক্তিবদ্ধ হইল। 'ক'-এর দুইটি সাদা ঘোড়া আছে; এইক্ষেত্রে এইরূপ বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়া যাইতে পারে, যাহা কোন ঘোড়াটি বিক্রয়ের চুক্তি হইয়াছে তাহা বুঝাইতে পারে।
(খ) 'ক' 'খ'-এর সহিত সৈয়দপুর যাইতে রাজী হইল। সৈয়দপুর বলিতে খুলনার সৈয়দপুর না কি রংপুরের সৈয়দপুর বুঝান হইয়াছে তদমর্মে সাক্ষ্য দেওয়া যইবে।
ধারা-৯৭। দুইটি ঘটনা সমষ্টির মধ্যে একটির প্রতিও যেই ভাষা সম্পূর্ণ ও সঠিকভাবে প্রযোজ্য নহে, উহার একটির প্রতি উহা প্রয়োগ সম্পর্কে সাক্ষ্য (Evidence as to
application language to one of two sets of facts to neither of which the whole
correctly applies) :
যখন দলিলে ব্যবহৃত ভাষা আংশিকভাবে একটি বিদ্যমান বিষয় সমষ্টির প্রতি প্রযোজ্য এবং আংশিকভাবে অপর একটি বিদ্যমান বিষয় সমষ্টির প্রতি প্রযোজ্য হয়, কিন্তু সামগ্রিকভাবে উহা উপরোক্ত দুইটি বিষয় সমষ্টির কোনটির প্রতিই সঠিকভাবে প্রযোজ্য হয় না, তখন এইরূপ সাক্ষ্য দেওয়া যাইতে পারে, যাহা দ্বারা প্রতীয়মান হইবে দুইটি ঘটনা সমষ্টির মধ্যে কোনটির প্রতি উহা প্রয়োগ করিতে চাওয়া হইয়াছে, তত্ সম্পর্কে সাক্ষ্য দেওয়া যাইতে পারে।
উদাহরণ
'ক' “আমার 'প' স্থানে অবস্থিত ও 'ফ'-এর দখলভুক্ত জমি” 'খ'-এর নিকট বিক্রয় করিতে চুক্তিবদ্ধ হয়। 'প' স্থানে 'ক'-এর জমি আছে, কিন্তু তাহা 'ফ'-এর দখলভুক্ত নহে। 'ক'-এর জমি 'ফ'-এর দখলভুক্ত আছে; কিন্তু তাহা 'প' স্থানে অবস্থিত নহে। এইক্ষেত্রে এইরূপ বিষয়ের সাক্ষ্য দেওয়া যাইতে পারে। যাহা দ্বারা 'ক' কোন জমি বিক্রয়ের চুক্তি করিয়াছে, তাহা বুঝা যায়।
ধারা-৯৮। অস্পষ্ট বর্ণলিপি ইত্যাদি সম্পর্কে সাক্ষ্য (Evidence as to
meaning of illegible characters, etc.) :
অষ্পষ্ট এবং সাধারণতঃ বোধগম্য নহে এইরূপ বর্ণলিপি বৈদেশিক, অপ্রচলিত, কারিগরি বিষয়ক, স্থানীয় ও আঞ্চলিক শব্দ, শব্দ-সংক্ষেপ এবং বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত শব্দের অর্থ বুঝাইবার জন্য সাক্ষ্য দেওয়া যাইতে পারে।
উদাহরণ
'ক' নামক একজন ভাস্কর 'খ'-এর নিকট “আমার যাবতীয় মড” বিক্রয়ের চুক্তি করিল। ভাস্কর্যের নমুনা এবং ভাস্কর্য কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি উভয় প্রকার বস্তুই 'ক'-এর আছে। 'ক' কোন বস্তু বিক্রয়ের চুক্তি করিয়াছে তাহা দেখাইবার জন্য সাক্ষ্য দেওয়া যাইতে পারে।
ধারা-৯৯। দলিলের শর্তাবলী পরিবর্তনের চুক্তি সম্পর্কে সাক্ষ্যকে দিতে পারে (Who may give
evidence of agreement verying terms of documents) :
দলিলের পক্ষ নহে এইরূপ ব্যক্তিবর্গ বা তাহাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিগণ এমন কোন বিষয়ের সাক্ষ্য দিতে পারে, যাহা দ্বারা প্রতীয়মান হইতে পারে যে, উক্ত দলিলে লিপিবদ্ধ শর্তাবলীর রদবদল করিয়া একটি চুক্তি একই সময়ে হইয়াছিল।
উদাহরণ
'ক' এবং 'খ'-এর মধ্যে এই মর্মে একটি লিখিত চুক্তি হইল যে, 'খ' কিছু পরিমাণ তুলা 'ক'-এর নিকট বিক্রয় করিবে এবং যাহার মূল্য পণ্য অর্পিত হইলে পরিশোধ করা হইবে। একই সময়ে তাহাদের মধ্যে একটি মৌখিক চুক্তি হয় এই মর্মে যে, তিন মাসের 'ক'-কে ধারে মাল সরবরাহ করা হইবে। 'ক' এবং 'খ'-এর মধ্যে বিরোধ উপস্থিত হইলে শেষোক্ত চুক্তিটি প্রমাণ করা যাইবে না। কিন্তু উহা দ্বারা যদি 'গ'-এর স্বার্থ ব্যহত হয় তবে 'গ' উহা প্রমাণ করিতে পারিবে।
ধারা-১০০। উইল সম্পর্কে উত্তরাধিকার আইনের বিধানসমূহ সংরক্ষণ (Saving of
provisions of Indian succession Act Relation to Wills) :
এই অধ্যায়ে বিধৃত কোন বিধান উইলের ব্যাখ্যা সম্পর্কে ১৯২৫ সালের উত্তরাধিকার আইনের কোন বিধানকে প্রভাবিত করিয়াছে, এইরূপ মনে করা যাইবে না।