চর জমি বন্দোবস্ত (বিধি ৭৩-১০১)
(সূত্র : ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল; ১৯৯০)
৭৩। কোন জমি নদী বা সমুদ্র গর্ভে সিকস্তি হলে জমির মালিক বা তার উত্তরাধিকারীগণের ঐজমিতে সকল মালিকানা বা অধিকার বা স্বার্থে সম্পূর্ণভাবে রহিত হয়ে যাবে।
৭৪। নদী বা সমুদ্র গর্ভ হতে কারও মালিকানাধীন জমির সংলগ্ন কোন চর সৃষ্টি হলে উহা মালিকের জমির পরিবৃদ্ধি বলে গণ্য হবেনা। এরূপ জমি সম্পূর্ণভাবে সরকারের মালিকানায় ন্যস্ত বলে গণ্য হবে।
৭৫। নদী বা সমদ্র গর্ভে হতে কোন চর জেগে ওঠলে তা ব্যক্তি মালিকাধীন সিকস্তি জমির পয়স্তিই হোক অথবা সম্পূর্ণ নতুন চরই হোক, উহা নিরংকুশভাবে সরকারে বর্তাবে এবং সরকার উহ প্রচলিত নিয়মনীতি অনুযায়ী বন্দোবস্ত প্রদান করবেন।
৭৬। জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন (১৯৫০) এর সংশোধিত ৮৬ ধারা প্রবর্তিত হওয়ার তারিখের (২৯শে জুন, ১৯৭২) পূর্বে বা পরে কোন চর সৃষ্টি হলেও উপরোক্ত বিধান প্রযোজ্য হবে। তবে এ তারিখের পূর্বে সৃষ্টি কোন চরে কোন সাবেক মালিকের অধিকার কালেক্টর, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বা আদালত এ তারিখের পূর্বে চূড়ান্ত স্বীকৃতি প্রদান করে থাকলে তার ক্ষেত্রে উপরোক্ত বিধান প্রযোজ্য হবেনা।
নোট : ১৯৯৪ সনের ১৫নং আইন দ্বারা ১৯৫০ সনের জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৮৬ ধারা সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত ৮৬ ধারা নিম্নরূপ :
সিকস্তি জমির খাজনা মওকুফ এবং পয়স্তি জমিতে প্রস্তাব অধিকার :
(১) কোন জোতের জমি অথবা ইহার অংশ বিশেষ সিকস্তি হলে উহা জমির খাজনা মওকুফ করে সিকস্তির বিবরণ লিপিবদ্ধ করতে হবে। জমি পয়স্তি হলে এ বিবরণ অধিকার নির্ণয়ে প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে।
(২) সিকস্তি জমি ৩০ চছরের সমধ্যে স্বস্থানে পয়ন্তি হলে উক্ত জমিতে জমিতে মূল প্রজা অথবা উত্তরাধিকারগণের অধিকার, স্বত্ব ও স্বার্থ বিদ্যমান থাকবে।
(৩) মুল মালিক অথবা তাদের উত্তরাধিকারগণের স্বত্বাধিকার ও স্বার্থ থাকাসত্বেও কালেক্টরকে পয়স্তি জমির দখল অবিলম্বে গ্রহণ করতে হবে।
(৪) কালেক্টর অথবা রাজস্ব অফিসার কর্তৃক জমির দখল গ্রহণের পর জনগণকে নোটিশ দিয়ে অবহিত করে পয়স্তি জমি জরিপ করে নকশা প্রস্তুত করতে হবে।
(৫) জরিপের মাধ্যমে নক্শা প্রস্তুত সমাপ্তির ৪৫ দিনের মধ্যে কালেক্টর মূল মালিক অথবা তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট উত্তরাধিকারগণের মধ্যে এমনভাবে জমি বরাদ্দ করবের যাতে বরাদ্দগ্রহীতার মোট জমি ৬০ বিঘার বেশী না হয়। পয়স্তি হওয়া অতিরিক্ত জমি সরকারের অধীনে ন্যস্ত হবে।
(৬) উপধারা (৫) মোতাবেক বরাদ্দকৃত জমি সালামী বিহীন হবে এবং বরাদ্দগ্রহীতাকে বিধি মোতাবেক ধার্যকৃত ন্যায্য খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হবে।
(৭) সরকার অথবা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উন্নয়ন কাজের উদ্দেশে কৃত্রিম উপায় অবলম্বনের কারণে জমি পয়স্তি হলে ও আইনের বিধান সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবেনা।
(ক) ৯৬ ধারার আওতাভুক্ত জমির ক্ষেত্রে ৮৬(৪) ধারায় পাবলিক নোটিশ প্রদানের ১২ মাসের মধ্যে কোন কোর্টে মামলা দায়ের করা যাবেনা।
৭৭। নব সৃষ্ট চরের জমি সম্পূর্ণভাবে সরকারের খাস জমি, বিধায় উক্ত চরের জমির ওপর সরকারের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং বেআইনী দখলদারের কবলমুক্ত রাখার জন্য কালেক্টর সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
৭৮। চরের মাটি সুসংহত হওয়ার পর বা চাষোপযোগী হওয়ামাত্র উহা জরিপ করে নকশা ও খতিয়ান প্রণয়নের জন্য মহাপরিচালক, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর/দিয়ারা সেটেলমেন্ট অফিসার এর নিকট সংশ্লিষ্ট কালেক্টর অনুরোধপত্র প্রেরণ করবেন। অনুরোধপত্র পাওয়ার পর দিয়ারা সেটেলমেন্ট অফিসার জরুরী ভিত্তিতে নূতন চর জরিপ ও রেকর্ড প্রণয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।
৭৯। চর্চা ম্যাপের ভিত্তিতে চরের জমি বন্দোবস্ত প্রদান করা যাবেনা।
৮০। চরের জমির জন্য কিস্তোয়ার জরিপ প্রয়োজন হয়। তবে উহা সম্পূর্ণভাবে খাস জমি বলে নকশায় ব্লক অংকন করা হয় এবং আপত্তি ও আপিলের অবকাশ প্রায় থাকেনা। উহা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করে রেকর্ড মুদ্রণ ও চূড়ান্ত প্রকাশনা ত্বরান্বিত করতে হবে। দিয়ারা সেটেলমেন্ট অফিসার এবং পরিচালক, ভূমি রেকর্ড, মুদ্রণ ও চূড়ান্ত প্রকাশনার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখবেন।
৮১। নূতন চরের জমি জরিপ ও রেকর্ড চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত কালেক্টর বা রাজস্ব অফিসার গোচারণ বা ফসল উৎপাদনের জন্য একসনা বন্দোবস্ত দিতে পারবেন। একসনা বন্দোবস্ত দেয়ার জন্যও কবুলিয়াত সম্পাদন করতে হবে।
৮২। খাস জমি বিতরণের বার্ষিক কর্মসূচী বহির্ভুত খাস কৃষি জমি একসনা বন্দোবস্ত দেয়া যাবে।
৮৩। একসনা বন্দোবস্তের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারী খাস জমির একটি তালিকা প্রণয়ন করবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রণীত তালিকা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিস্বাক্ষর করবেন। থানা ভূমি সংস্কার কমিটির নিয়মিত সভায় আলোচনাক্রমে বন্দোবস্ত দেয়ার সিদ্ধান্তগ্রহণ করতে হবে।
৮৪। সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদা কাগজে কৃষি জমি একসনা বন্দোবস্ত দেয়ার জন্য দরখাস্ত আহবান করবেন এবং ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করবেন।
৮৫। কেবলমাত্র নিম্নোক্ত যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিগণ একসনা বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য দরখাস্ত করতে পারবেন :
(ক) যে পরিবারের মোট জমির পরিমাণ এক একরের কম এবং চাষের উপকরণ, যথা : লাংগল, আনুষংগিক যন্ত্রাদি এবং কমপক্ষে একটি হালের বলদ আছে, সেই পরিবার প্রধান।
(খ) পরিবারটি সংশ্লিষ্ট মৌজার বা পার্শ্ববর্তী মৌজার বাসিন্দা হতে হবে।
(গ) আবেদনে প্রার্থিত জমির বিবরণ ক্রমানুসারে উল্লেখ করতে হবে।
৮৬। থানা ভূমি সংস্কার কমিটি আবেদনসমূহ বিবেচনা করে এবং প্রয়োজনে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে আবেদনকারীদের মধ্যে কাকে কোন জমি একসনা বন্দোবস্ত দেয়া হবে, তা নির্ধারণ করবেন। তবে কোন পরিবারকেই দুই একরের অধিক জমি বন্দোবস্ত দেয়া যাবেনা।
৮৭। দেওয়ানী মামলাধীন খাস জমির ওপর সরকারী দখল বজায় রাখার উদ্দেশে কালেক্টরের অনুমতিক্রমে নিয়ম/বিধি মোতাবেক একসনা বন্দোবস্ত দেয়া যাবে।
৮৮। অনুচ্ছেদ ৮৭ মোতাবেক আবেদন বাছাই ও জমি বন্দোবস্ত দেয়ার সিদ্ধান্তের পর সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রত্যেক বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তির জন্য পৃথক কেইস শুরু করে থানা নির্বাহী অফিসারের নিকট প্রেরণ করবেন এবং তিনি বন্দোবস্ত অনমোদন করবেন।
৮৯। একর প্রতি বার্ষিক ইজারা মূল্য তিনশত টাকা এবং ইহা প্রকল্পকালীন অগ্রিম পরিশাধ্য। ১লা বৈশাখ হতে ৩০শে চৈত্র পর্যন্ত ইজারার মেয়াদকাল গণ্য হবে। ইজারা মূল্য সরকার সময় সময় পরিবর্তন করতে পারবেন।
৯০। ইজারা নবায়নযোগ্য নয়। বিরোধ ও মামলা এড়ানোর জন্য একই জমি পর পর দু বছর একই ব্যক্তি বা পরিবারের নিকট ইজারা দেয়া যাবেনা।
৯১। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের মধ্যে পরবর্তি বছরের জন্য ইজারার পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং চৈত্র মাসের মধ্যে ইজারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
৯২। নির্বাহী অফিসারের একসনা বন্দোবস্ত দেয়ার আদেশের বিরুদ্ধে কালেক্টরের নিকট আপীল করা যাবে এবং তার সিদ্ধান্ত চ্যড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
৯৩। খাস জমিতে কোন ভূমিহীন পরিবার বাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করতে থাকলে তাকে একসনা ইজারার আওতায় আনয়ন করতে হবে। বাস্তভিটার জমি অন্য কাকেও বন্দোবস্ত দেয়া যাবেনা। অবশ্য বাস্তভিটা আইনানুগভাবে বাস্তভিটা হতে হবে।
৯৪। একসনা ভিত্তিক খাস জমি বন্দোবস্তের মাসিক প্রতিবেদন নির্ধারিত ছকে দাখিল করতে হবে।
৯৫। কালেক্টর বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি কর্তৃক সম্পাদিত ও রেজিষ্ট্রিকৃত বন্দোবস্ত দলিল ব্যতীত কোন সরকারী খাস জমিতে কারও কোন মালিকানা বা অন্য কোন স্বার্থ সৃষ্টি হবেনা এবং কেহ এরূপ কোন মালিকানা বা স্বার্থ দাবি করলে তা অগ্রাহ্য হবে। এরূপ কোন দাবিদারের নামে খতিয়ান খোলা যাবেনা এবং তার নামে প্রজাস্বত্ব সৃষ্টি করা যাবেনা।
৯৬। একসনা বন্দোবস্ত সাময়িকভাবে জমি চাষ বা ব্যবহার করার লাইসেন্স মাত্র। সুতরাং একসনা লীজ বা বন্দোবস্ত কোন মালিকানা, অধিকার বা দখল অধিকার সৃষ্টি করেনা। নির্দিষ্ট সময় অন্তে বা ৩০শে চৈত্র তারিখে একসনা লীজভুক্ত জমির দখল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরকারে বর্তায়। উপর্যপুরি কয়েক বছরের নিরবচ্ছিন্ন একসনা লীজও কোন মালিকানা বা দখল অধিকার সৃষ্টি করেনা।
৯৭। একসনা লীজ বা ডি.সিআর. মাধ্যমে রাজস্ব প্রদানের বিত্তিতে ১২ বছরের উর্ধকাল খাস জমি বা চরের জমি ভোগদখল দাবি করে প্রায় সময় মালিকানা দাবি করা হয়। এ দাবি আইনত অগ্রাহ্য। কেননা সরকারী জমিতে জবর দখল বা Adverse possession এর মাধ্যমে মালিকানা প্রতিষ্ঠার সময়কাল ৬০ বৎসর। জবর দখল বলতে প্রকাশ্য বিরোধিতামূলক বেদখল বুঝায়। একসনা লীজ বা ডি.সি.আর মাধ্যমে দখল, অনুমতি দখল প্রকাশ্য বিরোধিতাশূলক জবর দখল নয়।
৯৮। জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর সংশোধিত ৮৬ ধারা প্রবর্তিত হওয়ার পূর্বে বা পরে কোন সিকস্তি জমি সিকস্তির ২০ বছরের মধ্যে পয়স্তি হলে সাবেক মালিক বা তার উত্তরাধিকারীগণকে উক্ত জমি বন্দোবস্ত প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।
নোট : ১৯৫০ সনের জমিদারী অধিগ্রহণ আইনের ৮৬ ধারা ১৯৯৪ সনে সংশোধিত হওয়ার পর উক্ত সংশোধিত বিধান মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৯৯। সিকস্তি জমির মালিকানা একসনা লজি বা ডি.সি.আর মাধ্যমে ১২ বছরের ঊর্ধকাল দখল এবং সংশোধিত ৯৬ ধারা প্রবর্তনের পূর্বে কালেক্টর কর্তৃক বন্দোবস্ত প্রদান ইত্যাদি কারণে চরের জমির মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য কেহ কেহ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ডিক্রি লাভ করছে। এরূপ ক্ষেত্রে দেওয়ানী মামলার নোটিশ পাওয়া মাত্র কালেক্টরগণ সরকার পক্ষে আদালতে আইন ও বিধি ব্যাখ্যা করে জোরালো বক্তব্য রাখার জন্য সচেষ্ট থাকবেন। আদালতের নিকট পরিস্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে যে, জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন (১৯৫০) এর ৮১ (খ) ধারা মোতাবেক কালেক্টর সম্পাদিত ও রেজিষ্ট্রীকৃত লজি দলিল ব্যতীত অন্যকোন উপায়ে সরকারী খাস জমির মালিকানা কোন ব্যক্তি/সংস্থার ওপর বর্তায় না।
১০০। চরের জমি বা বৃহৎ এলাকার জমি (যার পরিমাণ ২০ একরের ঊর্ধে) বন্দোবস্ত প্রদানকালে গোচারণ ভূমি, মসজিদ ও বিদ্যালয়, রাস্তা-হালট, খেলার মাঠ এবং বসবাসকারী চাষী পরিবারের বসতবাটির জন্য জমি সংরক্ষণ ও বন্দোবস্তের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। সম্পূর্ণ এলাকা বন্দোবস্ত প্রদান কখনও বিবেচিত নহে। পানির নিকটের প্লট এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি সংরক্ষণ করতে হবে।
১০১। নদী বা সমুদ্র গর্ভ হতে কোন নতুন চর ওঠলে উহার ওপর সরকারী স্বার্থ সংরক্ষণকল্পে কালেক্টর স্থানীয়ভাবে এবং স্থানীয় পত্রিকায় নোটিশ জারী করে উক্ত চর সরকারের আইনত খাস জমি এবং এতে কারও কোন মালিকানা/আধিকার নেই বা থাকবেনা এ মার্মে সকলকে অবহিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এ নোটিশ পরবর্তিতে কোন দেওয়ানী/ফৌজদারী মামলায় সরকার পক্ষের সহায়ক হবে।
সূত্র: বাংলাদেশের উপজাতিদের আইন- রামকান্ত সিংহ, ২০০৩
সৌজন্যে: প্যান লোকালাইজেশন প্রোজেক্ট