তৃতীয় খণ্ড
Part III
সাক্ষ্য উপস্থাপন ও উহার ফল
Production and effect of Evidence
সপ্তম অধ্যায়
Chapter VII
প্রমাণের দায়িত্ব
Of the Burden of proof
ধারা-১০১। প্রমাণের
দায়িত্ব (Burden of proof) :
যিনি কোন
বিষয়ের অস্তিত্বের দাবি করিয়া তদুপরি নির্ভরশীল কোন আইনগত অধিকার বা দায় সম্পর্কে
আদালতের রায় কামনা করেন, তিনি সেই বিষয়ের অস্তিত্ব
অবশ্যই প্রমাণ করিবেন।
কোন ব্যক্তি যখন কোন বিষয়ের অস্তিত্ব প্রমাণ করিতে
বাধ্য থাকেন, তখন বলা হয় যে বিষয়টি প্রমাণ করিবার দায়িত্ব সেই
ব্যক্তির উপর ন্যস্ত।
উদাহরণ
(ক) 'ক' বলেন
যে, 'খ' একটি অপরাধ করিয়াছে এবং সেই
অপরাধের জন্য 'খ' দাণ্ডিত হইবে; এই
মর্মে 'ক' আদালতের রায় কামনা করে।
'খ' যে
সেই অপরাধ করিয়াছে, 'ক'-এর
তাহা অবশ্যই প্রমাণ করিতে হইবে।
(খ) 'ক' এই
মর্মে আদালতের রায় কামনা করেন যে, 'খ'-এর
দখলভুক্ত কোন একটি জমি তিনি পাইবার অধিকারী। ইহার সমর্থনে 'ক' কতগুলি
বিষয়ের অস্তিত্ব দাবি করেন এবং 'খ' সেই
সকল বিষয়ের অস্তিত্ব অস্বীকার করেন। ঐ সমস্ত বিষয়ের অস্তিত্ব অবশ্যই 'ক'-এর
প্রমাণ করিতে হইবে।
ধারা- ১০২। প্রমাণের দায়িত্ব যাহার উপর
ন্যস্ত থাকে (On whom burden of proof lies) :
মামলায় ঠকিবে, মামলার বিষয়বস্তু প্রমাণ করিবার দায়িত্ব সেই পক্ষের উপর ন্যস্ত।
উদাহরণ
(ক) 'ক' একটি
জমির জন্য 'খ'-এর বিরুদ্ধে দেওয়ানী
মামলা দায়ের করে। জমিটি 'ক'-এর
দখলে আছে। 'ক' দাবি
করে যে, 'খ'-এর পিতা 'গ' উইল
করিয়া ঐ জমি 'ক'-কে দিয়া গিয়াছে।
(খ) একটি খতমূলে পাওনা টাকা
দাবি করিয়া 'খ'-এর বিরুদ্ধে 'ক' একটি
মামলা দায়ের করে।
খত সম্পাদন স্বীকৃত; কিন্তু 'খ' বরে
যে, প্রতারণা করিয়া উক্ত খত লওয়া হইয়াছে। 'খ' তাহা অস্বীকার করে।
কোন পক্ষ যদি কোন সাক্ষ্য না দেয়, তবে 'ক' মামলায়
জিতিবে; কারণ খত সম্পর্কে কোন তর্ক নাই এবং প্রতারণা প্রমাণিত
হয় নাই। সুতরাং এইক্ষেত্রে প্রমাণের দায়িত্ব 'খ'-এর
উপর ন্যস্ত।
ধারা- ১০৩। কোন নির্দিষ্ট ঘটনা প্রমাণের দায়িত্ব (Burden of proof as
to particular fact):
যে ব্যক্তি কোন বিষয়ের অস্তিত্ব আদালতকে বিশ্বাস করাইতে চাহেন, সেই বিষয়ের অস্তিত্ব প্রমাণ করিবার দায়িত্ব সেই ব্যক্তির উপর ন্যস্ত। কোন আইন অনুসারে উক্ত বিষয়ের প্রমাণের দায়িত্ব কোন ব্যক্তিবিশেষের উপর ন্যস্ত হইয়া থাকিলে অন্য কথা।
উদাহরণ
'ক' চুরির
দায়ে 'খ'-কে ফৌজদারীতে সোপর্দ করে। 'ক' আদলতকে বিশ্বাস করাইতে চায় যে, 'খ' চুরির
কথা 'গ'-এর নিকট স্বীকার করিয়াছে। স্বীকৃতি অবশ্যই 'ক'-কে
প্রমাণ করিতে হইবে।
'খ' আদালতকে
বিশ্বাস করাইতে চায় যে, সংশ্লিষ্ট সময়ে
সে অন্যত্র ছিল। ইহা
অবশ্যই তাহাকে প্রমাণ করিতে হইবে।
ধারা- ১০৪। সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য করিবার
জন্য যে ঘটনা প্রমাণ করিতে হইবে তাহা প্রমাণের দায়িত্ব (Burden of proving
fact to be proved to make evidence admissible) :
কোন ব্যক্তি যাহাতে অপর কোন ঘটনার সাক্ষ্য দিতে পারে, তজ্জন্য
ঘটনা প্রমাণ করা আবশ্যক, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিতে ইচ্ছুক
তাহারই উপর উপরোক্ত ঘটনা প্রমাণের দায়িত্ব ন্যস্ত।
উদাহরণ
(ক) 'খ'-এর
মৃত্যুকালীন ঘোষণা 'ক'-কে
প্রমাণ করিতে ইচ্ছুক। এইক্ষেত্রে "ক'-এর
মৃত্যু অবশ্যই 'ক' প্রমাণ করিতে হইবে।
(খ) 'খ'-একটি
হারাইয়া যাওয়া দলিলের বিষয়বস্তু মাধ্যমিক সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করিতে ইচ্ছুক।
দলিলটি যে হারাইয়া গিয়াছে তাহা অবশ্যই 'ক'-এর প্রমাণ
করিতে হইবে।
ধারা- ১০৫। আসামীর মামলা যে ব্যক্তিক্রমের মধ্যে
পড়ে তাহা প্রমাণের দায়িত্ব (Burden of proving that case of accused comes within
exceptions) :
কোন ব্যক্তি কোন অপরাধে অভিযুক্ত হইলে মামলাটি যাহাতে দণ্ডবিধিতে বর্ণিত সাধারণ
ব্যক্তিক্রসমূহের মধ্যে পড়িতে পারে, অথবা দণ্ডবিধিতে বর্ণিত কোন বিশেষ
ব্যতিক্রম বা উহার অপর কোন অংশে বর্ণিত কোন শর্তের মধ্যে পড়িতে পারে বা উক্ত অপরাধ
সম্পর্কিত অপর কোন আইনে বর্ণিত কোন শর্তের মধ্যে পড়িতে পারে, এইরূপ কোন পরিস্থিতির অস্তিত্ব
প্রমাণ করিবার দায়িত্ব অভিযুক্ত ব্যক্তির উপর ন্যস্ত থাকে এবং এইরূপ ক্ষেত্রে
আদালত অনুরূপ পরিস্থিত অনুপস্থিত বলিয়া অবশ্যই ধরিয়া হইবেন।
উদাহরণ
(ক) হত্যার দায়ে অভিযুক্ত 'ক' অভিযোগ করে যে, মানসিক অপ্রকৃতিস্থতার কারণে যে
তাহার কৃতকার্যের প্রকৃতি জ্ঞাত ছিল না। ইহা
প্রমাণের দায়িত্ব 'ক'-এর উপর
ন্যস্ত।
(খ) হত্যার দায়ে অভিযুক্ত 'ক' অভিযোগ করে যে, গুরুত্বর ও আকস্মিক উস্কানির
কারণে সে আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারাইয়া ফেলিয়াছিল। ইহা প্রমাণের দায়িত্ব 'ক'-এর উপর
ন্যস্ত।
(খ) দণ্ডবিধির ৩২৫ ধারায় বর্ণিত
হইয়াছে যে, কোন ব্যক্তি
উক্ত বিধির ৩৩৫ ধারায় বর্ণিত অবস্থা ভিন্ন অন্যান্য ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় কাহাকেও
গুরুতররূপে জখন করিলে আইনে নির্দিষ্ট দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন; 'ক' দণ্ডবিধির ৩২৫ ধারা অনুসারে গুরুতর জখন
করিবার দায়ে অভিযু্কত হইল।
মামলাটি যে ৩৩৫ ধারায় বর্ণিত পরিস্থিতির
আওতায় পড়ে, তাহা
প্রমাণ করিবার দায়িত্ব 'ক'-এর উপর
ন্যস্ত।
ধারা- ১০৬। যে ঘটনা বিশেষভাবে কাহারও জ্ঞানের গোচরে থাকে তাহা প্রমাণের
দায়িত্ব (Burden of proving fact
especially within knowledge) :
কোন বিষয় যখন বিশেষভাবে কোন ব্যক্তির
অবগতির মধ্যে থাকে, তখন সেই বিষয় প্রমাণ করিবার দায়িত্ব তাহার উপর ন্যস্ত।
উদাহরণ
(ক) কোন ব্যক্তি যখন এমন ইচ্ছা প্রণোদিত
হইয়া একটি কাজ করে, যে ইচ্ছা উক্ত কাজের প্রকৃতি ও পরিস্থিতি হইতে অনুমিত ইচ্ছা অপেক্ষা পৃথক; তখন ইচ্ছা প্রমাণের
দায়িত্ব সেই ব্যক্তির উপর ন্যস্ত।
(খ) বিনা টিকিটে রেলগাড়িতে ভ্রমণের
দায়ে 'ক' অভিযুক্ত হইলে তাহার নিকট টিকিট
ছিল ইহা প্রমাণের দায়িত্ব তাহারই উপর ন্যস্ত।
ধারা-১০৭। যে ব্যক্তি জীবিত বলিয়া ত্রিশ বৎসর যাবত জ্ঞাত আছে তাহার
মৃত্যুর প্রমাণের দায়িত্ব (Burden
of proving death of person known to have been alive within thirty years) :
যখন প্রশ্ন হইতেছে, কোন ব্যক্তি জীবিত বা মৃত
এবং ইহা দেখানো হয় যে, বিগত ৩০ বৎরের মধ্যে সেই ব্যক্তি জীবিত ছিল, তখন যে ব্যক্তি তাহাকে মৃত বলিয়া
দাবি করে, উক্ত
ব্যক্তি যে মৃত, তাহা প্রমাণের
দায়িত্ব সেই ব্যক্তির উপর ন্যস্ত।
ধারা- ১০৮। যে ব্যক্তি সম্পর্কে সাত বৎসর পর্যন্ত কোন খবর পাওয়া যায়
নাই যে, জীবিত আছে তাহা প্রমাণের দায়িত্ব (Burden
of proving that person is alive who has not been heard of for seven years) :
তবে যখন প্রশ্ন হইতেছে, কোন ব্যক্তি জীবতি বা মৃত
এবং প্রমাণিত হইয়াছে যে, সেই ব্যক্তি জীবিত থাকিলে স্বাভাবিকভাবে যাহারা তাহার সংবাদ পাইত, তাহারা সাত বৎসর যাবত
তাহার কোন সংবাদ পায় নাই; তখন উক্ত ব্যক্তি জীবতি বলিয়া যে দাবি করে, উহা প্রমাণ করিবার দায়িত্ব তাহার উপর
ন্যস্ত হয়।
ধারা- ১০৯। অংশীদারগণের মধ্যে, জমিদার ও প্রজার মধ্যে মালিক ও
প্রতিনিধির মধ্যে সম্পর্ক প্রমাণের দায়িত্ব (Burden of proof as to relationship in the cases of partners, landlord
and tenant, principal and agent) :
যখন প্রশ্ন হইতেছে, ব্যক্তিগণ পরস্পর অংশীদার
কিনা, অথবা
মালিক ও প্রজা কিনা অথবা প্রধান ও প্রতিনিধি কিনা এবং দেখানো হইয়াছে যে, তাহারা অনুরূপভাবে কাজ
করিয়া আসিতেছে, তখন যে
ব্যক্তি দাবি করে যে, উপরোক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অনুরূপ সম্পর্কে নাই, অথবা সেই সম্পর্কের অবসান হইয়াছে, উহা প্রমাণিত করিবার
দায়িত্ব সেই ব্যক্তির উপর ন্যস্ত হয়।
ধারা-১১০। মালিকানা প্রমাণের দায়িত্ব (Burden of proof as to ownership):
যে ব্যক্তির দখলে কিছু আছে বলিয়া
দেখানো হয়, সেই
ব্যক্তি উহার মালিক কিনা এই প্রশ্ন হইলে, যেই ব্যক্তি দাবি করে যে, দখলকারী ব্যক্তি সেই
জিনিসের মালিক নহে, সেই ব্যক্তির উপরই উহা প্রমাণের দায়িত্ব ন্যস্ত হয়।
ধারা-১১১। যে লেনদেনের ক্ষেত্রে এক পক্ষের সক্রিয় আস্থার সম্পর্ক
সেইক্ষেত্রে সরল বিশ্বাসের প্রমাণ (Proof
of good faith in transactions where one Party is in relation of active
confidence) :
যেখানে পক্ষবৃন্দের মধ্যে একপক্ষের
সহিত অপরপক্ষের সক্রিয় আস্থার সম্পর্ক বিদ্যমান; সেখানে উক্ত পক্ষবৃন্দের মধ্যে
লেনদেনের ব্যাপারে সরল বিশ্বাস সম্পর্কে প্রশ্ন উঠিলে, যে পক্ষ সক্রিয় আস্থার দ্বারা
সম্পর্কিত, সেই
পক্ষের উপর সরল বিশ্বাস প্রমাণের দায়িত্ব ন্যস্ত হয়।
উদাহরণ
(ক) মক্কেল কর্তৃক এডভোকেটের নিকট
একটি বিক্রয়ের ব্যাপারে মক্কেল একটি মামলা দায়ের করিয়া উক্ত বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সরল
বিশ্বাস সম্পর্কে উত্থাপন করিয়াছেন। লেনদেনটিতে
সরল বিশ্বাস প্রমাণের দায়িত্ব এডভোকেটের উপর ন্যস্ত।
(খ) সদ্য বয়ঃপ্রাপ্ত কর্তৃক পিতার
নিকট বিক্রয়ের ব্যাপারে পুত্র একটি মামলা রুজু করিয়া উক্ত বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সরল
বিশ্বাস সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করিয়াছে। লেনদেনটিতে
সরল বিশ্বাস প্রমাণ করিবার দায়িত্ব পিতার উপর ন্যস্ত।
ধারা- ১১২। বিবাহ স্থির থাকাকালে সন্তানের জন্মই উহার বৈধতার চূড়ান্ত
প্রমাণ (Birth during marriage,
conclusive proof of legitimacy) :
কোন ব্যক্তির মাতার সহিত এক ব্যক্তির
আইনত সিদ্ধ বিবাহ কায়েম থাকাকালে অথবা বিবাহবিচ্ছেদের পর দুইশত আশি দিনের মধ্যে
তাহার মাতা অবিবাহিতা থাকালে যদি তাহার জন্ম হইয়া থাকে এবং যদি ইহা দেখানো না হয়
যে, ঐ
ব্যক্তি যখন মাতৃগর্ভে আসিয়া থাকিতে পারে অনুরূপ কোন সময়ে বিবাহিত পক্ষদ্বয়ের
পরস্পরের মধ্যে মিলনের পথ উন্মুক্ত ছিল না; তবে সে যে জন্মিয়াছে এই বিষয় দ্বারা
অবশ্যই চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হইবে যে, সে উক্ত ব্যক্তির বৈধ সন্তান।
ধারা-১১৩। কোন ভূখণ্ডের স্বত্ব সমর্পণের প্রমাণ (Proof of cession of territory) :
ব্রিটিশ ভূখণ্ডের কোন অংশ ১৯৩৫ সালের
ভারত শাসন আইনের ৩য় খণ্ড বলবত হইবার পূর্বে কোন দেশীয় রাজ্য রাজন্য বা শাসনকর্তার
নিকট সমর্পিত হইয়াছে এই সরকারী গেজেটে কোন বিজ্ঞপ্তি প্রচারিত হইলে তাহা দ্বারা
অবশ্যই চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হইবে যে, উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত স্থানে
ও তারিখে আইনসম্মতভাবে উক্ত ভূ-খণ্ডের সমর্পণ হইয়াছে।
এই ধারাটি ১৯৭৩ সালের ৮নং আইনে বাতিল
করা হইয়াছে। তাই এই ধারার বিধান বর্তমানে
বাংলাদেশে প্রযোজ্য নহে।
ধারা- ১১৪। আদালত কতিপয় ঘটনার অনুমান করিতে পারেন (Court may presume existence of certain facts) :
প্রাকৃতিক ঘটনাবলীর সাধারণ গতিধারা
মানবিক আচরণ এবং সরকারী ও বেসরকারী কার্যবলীর পরিপ্রেক্ষিতে যাহা ঘটিয়া থাকা সম্ভব
বলিয়া আদালত মনে করেন কোন মামলার বিষয় সম্পর্কে সেই ঘটনার অস্তিত্ব আদালত ধরিয়া
লইবেন।
উদাহরণ
আদালত ধরিয়া লইবেন যে,
(ক) চুরির অব্যবহিত পরই চোরাইমাল
যে ব্যক্তির দখলে থাকে সে যদি তাহার দখলের কারণ দর্শাইতে না পারে তবে সেই ব্যক্তি
চোর অথবা চোরাইমাল বলিয়া জানা সত্ত্বেও সে উহা গ্রহণ করিয়াছে।
(খ) গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদিসহ সমর্থিত
না হইলে দুষ্কর্মের সহযোগী বিশ্বাসের অযোগ্য।
(গ) বরাত চিঠি, যাহা স্বীকৃত বা
পৃষ্ঠাঙ্কিত, তাহা
উপযুক্ত প্রতিদানের বিনিময়ে স্বীকৃত বা পৃষ্ঠাঙ্কিত হইয়াছে।
অষ্টম অধ্যায়
Chapter VIII
প্রতিবন্ধকতা
Estoppel
ধারা- ১১৫। স্বীকৃতি
বাধা (Estoppel) :
যখন এক ব্যক্তি তাহার ঘোষণা, কার্য বা কার্য বিরতির দ্বারা
স্বেচ্ছায় অন্য ব্যক্তিকে কিছু সত্য বলিয়া বিশ্বাস করাইয়াছেন বা বিশ্বাস করিতে
দিয়াছেন এবং সেই বিশ্বাসের ভিত্তিতে কাজ করিতে দিয়াছেন, তখন উহাদের মধ্যে বা উহাদের
প্রতিনিধিদের মধ্যে কোন মামলায় প্রথমোক্ত ব্যক্তি বা তাহার প্রতিনিধি উক্ত বিষয়ের
সত্যতা অস্বীকার করিতে পারেন না।
উদাহরণ
'ক' স্বেচ্ছায় এবং মিথ্যাভাবে 'খ'-কে বিশ্বাস করান যে, 'ক' কোন একটি জমির মালিক এবং তাহা দ্বারা 'খ'-কে ঐ জমি ক্রয় করিতে ও উহার মূল্য দিতে
প্রলুব্ধ করেন। পরবর্তীকালে ঐ জমি 'ক'-এর সম্পত্তিতে পরিণত হয়। বিক্রয়ের সময় উক্ত জমিতে তাহার কোন স্বত্ব ছিল না, এই অজুহাতে 'ক' বিক্রয় নাচক করিবার চেষ্টা করে। এইক্ষেত্রে তাহার স্বত্বহীনতা অবশ্যই প্রমাণ করিতে দেওয়া যাইবে
না।
ধারা- ১১৬। প্রজার ক্ষেত্রে স্বীকৃতির বাধা; দখলকারীর
অনুমতিক্রমে ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে স্বীকৃতির বাধা (Estoppel of tenant, and of licence of person in
possession) :
কোন স্থাবর সম্পত্তিতে কাহারও প্রজাস্বত্ব
(বা ভাড়াটিয়া স্বত্ব) বিদ্যমান থাকাবস্থায় সেই প্রজা (বা ছাড়াটিয়া) অথবা তাহার
মাধ্যমে দাবিদার ব্যক্তিকে এই কথা অবশ্যই অস্বীকার করিতে দেওয়া যাইবে না যে, উক্ত প্রজাস্বত্ব (বা
ভাড়াটিয়ার) ভূস্বামীর (বা মালিকের) স্বত্ব ছিল এবং কোন ব্যক্তি কোন স্থাবর
সম্পত্তির দখলকারের অনুমতি লইয়া উহাতে প্রবেশ করিয়া থাকিলে তাহাকে এই কথা অবশ্যই
অস্বীকার করিতে দেওয়া হইবে না যে, উক্ত অনুমতি প্রদানের সময় উক্ত সম্পত্তি দখল করিবার অনুমতি দাতার অধিকারে ছিল।
ধারা- ১১৭। বরাত চিঠির স্বীকৃতিদাতা, গচ্ছিতগ্রহীতা
এবং অনুমতিক্রমে ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে স্বীকৃতির বাধা (Estoppel of acceptor of bill of exchange, bailee and
licensee) :
বরাত চিঠির কোন স্বীকৃতিদাতাকে এই
কথা অবশ্যই অস্বীকার করিতে দেওয়া যাইবে না যে, উক্ত বরাত চিঠি প্রণয়ন করিবার বা উহাতে
পৃষ্ঠাঙ্কন করিবার ক্ষমতা প্রণেতার ছিল; অথবা কোন গচ্ছিতগ্রহীতা বা অনুমতিক্রমে
দখলকারীকে এই কথা অবশ্যই অস্বীকার করিতে দেওয়া যাইবে না যে, গচ্ছিত রাখা বা ব্যবহারের
অনুমতি দানের সময় গচ্ছিত প্রদানকারী বা অনুমতিদাতার গচ্ছিত রাখিবার বা অনুমতি
দিবার ক্ষমতা ছিল।
ব্যাখ্যা-১ : বরাত চিঠির স্বীকৃতিদাতা এই কথা অস্বীকার করিতে পারিবে যে,
ব্যাখ্যা-২ : গচ্ছিতগ্রহীতা যদি গচ্ছিতদাতা ব্যতীত অপর কোন ব্যক্তির নিকট পণ্য অর্পণ করে
তবে যে প্রমাণ করিতে পারে যে, যেই ব্যক্তির নিকট পণ্য অর্পিত হইয়াছে ঐ পণ্যের গচ্ছিতদাতার বিরুদ্ধে তাহার
স্বত্ব ছিল।
নবম অধ্যায়
Chapter IX
সাক্ষী
Of Witnesses
ধারা-১১৮। যে
সাক্ষ্য দিতে পারে (Who may
testify)
সকল ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রদানের যোগ্য, যদি আদালত মনে না করেন যে, তাহারা অল্প বয়স, অতি বৃদ্ধ বয়স, দৈহিক বা মানসিক ব্যাধি বা
অনুরূপ কোন কারণে তাহাদিগকে জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন বুঝিতে বা সেই প্রশ্নের যুক্তিসঙ্গত
উত্তর দিতে তাহারা অক্ষম।
ব্যাখ্যা : কোন বিকৃত মস্তিষ্ক ব্যক্তি যদি তাহার মস্তিষ্ক বিকৃতির জন্য তাহাকে
জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন বুঝিতে বা উহার যুক্তসঙ্গত উত্তর দিতে অক্ষম না হয় তবে সেই
ব্যক্তি সাক্ষ্যদানের অযোগ্য হইবে না।
ধারা- ১১৯। বোবা সাক্ষী (Dumb
witnesses) :
যে সাক্ষী কথা বলিতে অক্ষম, তিনি তাহার বক্তব্য অন্য কোনভাবে, অর্থাৎ লিখিয়া বা ইশারা
করিয়া বুঝাইতে পারেন এবং সেইভাবে সাক্ষ্য দিতে পারেন, তবে সেই লেখা বা ইশারা
প্রকাশ্য আদালতে লিখিতে বা করিতে হইবে। এইরূপভাবে
যে সাক্ষ্য দেওয়া হইবে তাহা মৌখিক সাক্ষ্য বলিয়া গণ্য হইবে।
ধারা- ১২০। দেওয়ানী মামলার পক্ষবৃদ্দ এবং তাহাদের স্ত্রী বা স্বামী; ফৌজদারী
মামলার বিচারাধীন ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রী (Parties to civil suit and their wives or husbands
wife of person under criminal trial) :
সকল দেওয়ানী মামলায় মামলার পক্ষগণ
এবং কোন পক্ষের স্বামী বা স্ত্রী অবশ্যই োগ্য সাক্ষী হইবেন। কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজাদারী মামলায় সেই ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রী অবশ্যই
যোগ্য সাক্ষী হইবেন।
ধারা-১২১। জজ ও ম্যাজিস্ট্রেটগণ (Judges and Magistrates) :
যে অঅদালতের অধীন, সেই আদালতের বিশেষ আদেশ
ব্যতীত কোন জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের স্বীয় আচরণ সম্পর্কে অথবা জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট
হিসাবে আদালতে তাঁহার গোচরে আসিয়াছে এমন কোন বিষয় সম্পর্কে কোন প্রশ্নের উত্তর
দিতে বাধ্য হইবেন না। কিন্তু উক্ত পদের কর্তব্য
পালন করিবার সময় অন্যান্য যেসব ঘটনা তাঁহার উপস্থিতিতে ঘটিয়াছে, সেইগুলি সম্পর্কে তাঁহার
সাক্ষ্য গ্রহণ করা যাইতে পারে।
উদাহরণ
(ক) 'ক' দায়রা আদালতে তাহার বিচারকালে বলেছেন যে, ম্যাজিস্ট্রেট 'খ' অশুদ্ধভাবে তাহার জবানবন্দি গ্রহণ করিয়াছেন। উর্ধ্বতন আদালতের বিশেষ আদেশ ব্যতীত 'খ' উক্ত বিষয় সম্পর্কে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে
বাধ্য নহেন।
(খ) ম্যাজিস্ট্রেট 'খ'-এর সম্মুখে মিথ্যা সাক্ষ্য দিবার অভিযোগে 'ক' দায়রা আদালতে অভিযুক্ত হইলেন। ঊর্ধ্বতন আদালতের বিশেষ আদেশ ব্যতীত 'ক' যাহা বলিয়াছেন, সেই সম্পর্কে 'খ'-কে প্রশ্ন করা যাইবে না।
(গ) দায়রা জজ 'খ'-এর বিচার চলাকালীন জনৈক পুলিশ অফিসারকে খুন
করিবার চেষ্টার অভিযোগে 'ক' দায়রা
আদালতে অভিযুক্ত হইল। ঘটনা সম্পর্কে 'খ'-এর সাক্ষ্য গ্রহণ করা যাইতে পারে।
ধারা-১২২। বিবাহ স্থির থাকাকালীন পত্রালাপ (Communication during marriage) :
কোন ব্যক্তি যিনি বিবাহিতা বা যাহার
সহিত বিবাহ হইয়াছে, বিবাহ বজায় থাকাকালে সেই ব্যক্তির সহিত তাহার স্ত্রী বা স্বামীর বার্তার
বিষয়বস্তু প্রকাশ করিতে সেই ব্যক্তিকে বাধ্য করা যাইবে না, বার্তা প্রদানকারী বা
তাহার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধির সম্মতি ব্যতীত বার্তার বিষয়বস্তু প্রকাশ
করিবার অনুমতিও তাহাকে দেওয়া হইবে না। তবে
বিবাহিত ব্যক্তিদ্বয়ের মধ্যে কোন দেওয়ানী মামলায় অথবা তাহাদের একজনের বিরুদ্ধে কোন
অপরাধ করিবার জন্য অপরজন ফৌজদারীতে সোপর্দ হইয়া থাকিলে সেইক্ষেত্রে বার্তার বিষয়
প্রকাশ করিতে দেওয়া যাইবে।
ধারা- ১২৩। রাষ্ট্রীয় ব্যাপার সম্পর্কে সাক্ষ্য (Evidence as to affairs of State) :
রাষ্ট্রীয় বিষয়াদি সম্পর্কিত অপ্রকাশিত
সরকারী দলিলপত্র হইতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কাহাকেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান
কর্মকর্তার অনুমতি ব্যতীত সাক্ষ্য দিবার অনুমতি দেওয়া যায় না। উক্ত কর্মকর্তা যেমন উপযুক্ত বিবেচনা করিবেন, তেমনি অনমতি দিবেন বা দেওয়া হইতে
বিরত থাকিবেন।
ধারা-১২৪ভ সরকারী পর্যায়ের
পত্রালাপ (Official communications)
:
প্রকাশ করিলে জনস্বার্থে ব্যাঘাত
ঘটিবে বলিয়া যখন কোন সরকারী কর্মচারী মনে করিবেন, তখন সরকারী বিশ্বস্ততায় লব্ধ সংবাদ
তিনি প্রকাশ করিতে বাধ্য হইবেন না।
ধারা-১২৫। সংঘটন সম্পর্কে সংবাদ (Information as to commission of offence) :
ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ কর্মকর্তাকে
অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সংবাদ কোথা হইতে পাইয়াছিল তাহা বলিতে বাধ্য করা যাইবে না এবং
সরকারী রাজস্ব সংক্রান্ত অপরাধ সংঘটনের সংবাদ রাজস্ব বিভাগীয় কর্মকর্তাকে কোথায়
পাইয়াছিল তাহা বলিতে বাধ্য করা যাইবে না।
ব্যাখ্যা : এই ধারায় 'রাজস্ব বিভাগীয়
কর্মকর্তা' বলিতে
সরকারী রাজস্ব বিষয়ের বা তৎসংক্রান্ত ব্যাপারের যেকোন শাখার কার্যে নিযুক্ত যেকোন
কর্মচারীকে বুঝায়।
ধারা-১২৬। পেশা সম্পর্কিত পত্রালাপ (Professional communications) :
কোন এডভোকেট মক্কেলের এডভোকেট হিসাবে
কাজ করিবার সময়ে এবং উদ্দেশ্যে উক্ত মক্কেল কর্তৃক বা মক্কেলের পক্ষ হইতে তাহার
নিকট প্রদত্ত কোন সংবাদের বিষয় মক্কেলের অনুমতি ব্যতীত প্রকাশ করিতে অনুমতি পাইবেন
না অথবা পেশাগত কার্য সম্পাদনকালে এবং প্রসঙ্গে মক্কেলের যে সমস্ত দলিলের সহিত
তিনি পরিচিত হইয়াছেন, সেইগুলির বিষয়বস্তু বা অবস্থার বিষয়ে কোন বিবৃতি দিতে পারিবেন না অথবা তাহার
কার্যকালে ও উদ্দেশ্যে মক্কেলকে তিনি যে পরামর্শ দিয়োছেন, তাহা প্রকাশ করিতে পারিবেন না।
তবে শর্ত থাকে যে, নিম্নলিখিত বিষয়গুলি
প্রকাশ হইতে এই ধারায় কিছুমাত্র বাধা দেয় না-
১। বেআইনী উদ্দেশ্য সাধনকল্পে যে সংবাদ আদান-প্রদান করা হইয়াছে;
২। এডভোকেট পেশাগত কার্যে নিযুক্ত থাকিবার সময় তৎকর্তৃক লক্ষিত বিষয় যাহা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, তাঁহার নিযক্তির পরে কোন অপরাধ বা প্রতারণা সংঘটিত হইয়াছে;
অনুরূপ ঘটনার প্রতি উক্ত এডভোকেটের
মনোযোগ তাঁহার মক্কেল কর্তৃক বা মক্কেলের পক্ষ হইতে আকৃষ্ট হইয়াছিল কিনা তাহা
গুরুত্বপূর্ণ নহে।
ব্যাখ্যা : এই ধারায় বর্ণিত বাধ্যবাধকতা নিযক্তির অবসান ঘটিবার পরও অব্যাহত থাকে।
উদাহরণ
(ক) মক্কেল 'ক' এডভোকেট 'খ'-কে জানায় "আমি জালিয়াতি করিয়াছি এবং আমি
চাই যে, আপনি
আমার পক্ষে মামলা পরিচালনা করুন।"
ব্যক্তিকে দোষী জানিয়াও তাহাকে প্রতিরক্ষা
করা যেহেতু অপরাধমূলক কার্য নহে, সেইহেতু উপরোক্ত সংবাদ প্রদানের গোপনীয়তা সংরক্ষিত।
(খ) মক্কেল 'ক' এডভোকেট 'খ'-কে জানায় "আমি একটি জাল দলিল ব্যবহার
করিয়া সম্পত্তির দখল লইতে চাই এবং আমার পক্ষে এই বিষয়ে একটি দেওয়ানী মামলা রুজু
করিবার জন্য আপনাকে অনুরোধ করিতেছি।"
অপনাধমূলক উদ্দেশ্য সাধনকল্পে এই
সংবাদ প্রদান করা হইয়াছে বলিয়া ইহার প্রকাশ নিষিধ্ধ নহে।
(গ) তহবিল তসরূপের দায়ে অভিযুক্ত 'ক' তাহার পক্ষে মামলা পরিচালনা করিবার জন্য
এডভোকেট 'খ'-কে নিযুক্তি করিলেন। মামলা চলাকালীন 'খ' লক্ষ্য করিলেন যে, তসরূপকৃত পরিমাণ অর্থ 'ক'-এর নিকট হইতে আদায় দেখাইয়া হিসাবের খাতায়
একটি হিসাব লেখা হইয়াছে, যাহা তাহার নিযুক্তির শুরুতে লেখা ছিল না।
যেহেতু ইহা এমন একটি ব্যাপার যাহা
'খ' তাহার কার্যকালে লক্ষ্য করিয়াছেন
এবং মামলা চলিতে থাকাবস্থায় প্রতারণা করা প্রতীয়মান হইয়াছে, সেইহেতু ইহার প্রকাশ
নিষিদ্ধ নহে।
ধারা-১২৭। দোভাষী ইত্যাদির ক্ষেত্রে ১২৬ ধারার প্রয়োগ (Section 126 to apply to interpreters, etc.) :
দোভাষী এবং এডভোকেটের কেরানী বা
কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও ১২৬ ধারার বিধান প্রযোজ্য হইবে।
ধারা-১২৮। স্বত্বঃপ্রণোদিত হইয়া সাক্ষ্য দিবার ফলে বিশেষ সুবিধা
পরিত্যক্ত হয় না (Privilege not
waived by volunteering evidence) :
মামলার কোন পক্ষ যদি স্বেচ্ছায় বা
অন্য কোনভাবে মামলায় সাক্ষ্য দেয়, তবে তাহা দ্বারা এই কথা বুঝাইবে না যে, তিনি ১২৬ ধারায় উল্লিখিত সংবাদ
প্রকাশের সম্মতি দিয়াছেন এবং মামলা বা কার্যক্রমের কোন পক্ষ যদি অনুরূপ কোন
এডভোকেটকে সাক্ষী হিসাবে আহ্বান করেন এবং তাহাকে এমন কোন বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন
করেন, যে
বিষয়টি উক্ত এডভোকেট সেই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা না করা হইলে প্রকাশ করিতে পরিতেন না, তবে বুঝিতে হইবে যে, সেই ব্যক্তি বিষয়টি প্রকাশ
করিবার সম্মতি দিয়াছেন।
ধারা-১২৯। আইন উপদেষ্টার সহিত গোপন পত্রালাপ (Confidential communications with legal advisers) :
কোন ব্যক্তি ও তাহার পেশাদার আইন উপদেষ্টার
মধ্যে গোপনীয় সাংবাদাদি আদান-প্রদান হইয়া থাকিলে, সেই ব্যক্তি যদি মামলায় সাক্ষ্য
দিবার ইচ্ছা প্রকাশ না করে, তবে সেই গোপনীয় সংবাদ আদান-প্রদানের বিষয় আদালতে প্রকাশ করিতে তাহাকে বাধ্য
করা যাইবে না। যদি তিনি সাক্ষ্য প্রদান করেন, তবে তাঁহার দেওয়া সাক্ষ্যের
ব্যাখ্যার জন্য উক্ত গোপনীয় সংবাদ আদান-প্রদানের বিষয় আদালতের জানা প্রয়োজন হইলেই
কেবল উহা প্রকাশ করিতে বাধ্য করা যাইবে, অন্য কিছু নহে।
ধারা-১৩০। মামলার পক্ষ নহে এইরূপ সাক্ষীর স্বত্বের দলিল উপস্থাপন (Production of title deeds of witness not a party) :
মামলার পক্ষ নহে এইরূপ কোন সাক্ষীকে
তাহার সম্পত্তির স্বত্ব সংক্রান্ত কোন দলিল অথবা যে দলিল দ্বারা তিনি কোন সম্পত্তির
বন্ধকদার বা জামিনদার হিসাবে দখল করেন সেই দলিল, অথবা যে দলিল দাখিল করিলে তাঁহার
কোন অপরাধ ধরা পড়িবার আশঙ্কা থাকে এইরূপ কোন দলিল, আদালতে দাখিল করিতে তাহাকে বাধ্য
করা যাইবে না।
যদি না, যে ব্যক্তি দলিল দাখিল করাইতে
চাহেন, তাহার বা
যাহার মাধ্যমে তিনি অধিকার দাবি করিতেছেন, তাহার সহিত সাক্ষী কোন লিখিত
চুক্তিতে উক্ত দলিল দাখিল করিতে সম্মত হইয়া থাকেন।
ধারা-১৩১। যে দলিল অপর কোন ব্যক্তির দখলে থাকিলে সে তাহা দাখিল করিত
না, উক্ত দলিল দাখিলের অস্বীকৃতি (Production
of documents which another person, having possession, could refuse to produce)
:
কোন ব্যক্তির দখলে যদি এমন কোন দলিল
থাকে যাতা অন্য কাহারও দখলে থাকিলে তাহা দাখিল করিতে অস্বীকার করিবার অধিকার সেই
ব্যক্তির থাকিত, তবে
শেষোক্ত ব্যক্তি সেই দলিল দাখিলেন সম্মতি না দিলে প্রথমোক্ত ব্যক্তিকে উহা দাখিল
করিতে বাধ্য করা যাইবে না।
ধারা-১৩২। কোন প্রশ্নের উত্তরে সাক্ষীকে অপরাধের সহিত জড়িত করিবে, এই
অজুহাতে সাক্ষীকে উত্তর প্রদান করা হইতে অব্যাহতি দেয়া যায় না (Witness not excused from answering on ground that
answer will criminate) :
মামলার অথবা দেওয়ানী বা ফৌজদারী
কার্যক্রমে বিচার্য বিষয়ের প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সাক্ষীকে প্রশ্ন করা হইলে সেই প্রশ্নের
উত্তর সাক্ষীকে অভিযুক্ত করিবে অথবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অভিযুক্ত করিবার সম্ভাবনায়
ফেলিবে, অথবা
উহার ফলে সাক্ষী শাস্তি পাইবার যোগ্য হইবে অথবা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে শাস্তি
পাইবার যোগ্য হওয়ার সম্ভাবনায় পড়িবে, এই অজুহাতে উক্ত সাক্ষীকে অনুরূপ
প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হইতে অবশ্যই অব্যাহতি দেওয়া যাইবে না।
তবে শর্ত থাকে যে, সাক্ষীকে যদি অনুরূপ কোন
প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য করা হয় তবে তাহার জন্য তাহাকে গ্রেফতার করা বা
ফৌজদারীতে সোপর্দ করা যাইবে না বা কোন ফৌজদারী মামলায় তাহার বিরুদ্ধে উহা প্রমাণ
করা যাইবে না। কিন্তু অনুরূপ কোন উত্তরের জন্য
তাহাকে মিথ্যা সাক্ষ্য দিবার অভিযোগে ফৌজদারীতে সোপর্দ করা যাইবে।
ধারা-১৩৩। সহযোগী (Accomplice)
:
দুষ্কর্মের সহযোগী আসামীর বিরুদ্ধে
সাক্ষ্য দিবার উপযুক্ত ব্যক্তি বলিয়া গণ্য হইবেন; এবং দুষ্কর্মের সহযোগীর অসমর্থিত
সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আসামীকে দণ্ড দেওয়া হইলে শুধুমাত্র সেই কারণেই উক্ত দণ্ডাজ্ঞা
বেআইনী হইবে না।
ধারা-১৩৪। সাক্ষীর সংখ্যা (Number
of witnesses) :
মামলার কোন বিষয় প্রমাণের জন্য নির্দিষ্ট
সংখ্যক সাক্ষীর প্রয়োজন হইবে না।
দশম অধ্যায়
Chapter X
সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ
(Of the examination of witnesses)
ধারা-১৩৫। সাক্ষিগণকে হাজির করা ও
সাক্ষ্য গ্রহণ করিবার ক্রম (Order of Production and examination of witnesses) :
যে ক্রমানুসারে সাক্ষী উপস্থিত করা ও তাহাদের সাক্ষ্য
গ্রহণ করা হইবে, দেওয়ানী ও ফৌদারী কার্যবিধি সম্পর্কিত প্রচলিত আইন ও
রীতি অনুসারে তাহা নির্ধারিত হইবে। উক্তরূপ কোন আইন না থাকিলে
আদালতের স্ববিবেচনায় তাহা নির্ধারিত হইবে।
ধারা-১৩৬। জজ কোন্ সাক্ষ্যের
গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণ করিবেন (Judge to decide as
to admissibility of evidence) :
কোন একপক্ষ যখন কোন বিষয় সম্পর্কে
সাক্ষ্য দিবার প্রস্তাব করেন, তখন সেই বিষয় প্রমাণিত হইলে কিভাবে তাহা প্রাসঙ্গিক হইবে, তাহা প্রস্তাবকারী পক্ষকে
বিচারক জিজ্ঞাসা করিতে পারেন। বিচারক যদি
মনে করেন যে, বিষয়টি
প্রমাণিত হইলে তাহা প্রসাঙ্গিক হইবে; তবেই তিনি সেই সাক্ষ্য গ্রহণ
করিবেন, অন্যথায়
নহে।
যে বিষয়ের প্রমাণ প্রস্তাবিত হয়, তৎসম্পর্কে সাক্ষ্য গ্রহণ
করা যদি অন্য কোন বিষয়ের প্রমাণের উপর নির্ভরশীল হয়, তবে প্রথমোক্ত বিষয় সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবার
পূর্বে শেষোক্ত বিষয় অবশ্যই প্রমাণ করিতে হইবে; যদি না সংশ্লিষ্ট পক্ষ উক্ত বিষয়
প্রমাণের জন্য অঙ্গীকারাদ্ধ হন এবং আদালত সেই অঙ্গীকারে সন্তুষ্ট হন।
একটি বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতা যদি অন্য
একটি বিষয় প্রথমে প্রমাণিত হওয়ার উপর নির্ভর করে, তবে বিচারক তাহার সদ্বিবেচনায়
দ্বিতীয় বিষয় প্রমাণিত হওয়ার পূর্বেই প্রথম বিষয় সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবার অনুমতি
দিতে পারেন অথবা প্রথম বিষয় সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবার পূর্বে দ্বিতীয় বিষয় সম্পর্কে
সাক্ষ্য দিবার নির্দেশ দিতে পারেন।
উদাহরণ
(ক) একটি প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে
এমন এক ব্যক্তির বিবৃতির প্রমাণ করিতে প্রস্তাব করা হইতেছে, যে ব্যক্তি মৃত বলিয়া দাবি
করা হইতেছে এবং বিবৃতিটি ৩২ ধারানুযায়ী প্রাসঙ্গিক। যে ব্যক্তি বিবৃতিটি প্রমাণ করিবার প্রস্তাব করেন, তাহাকে অবশ্যই উক্ত বিবৃতি
সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবার পূর্বে প্রমাণ করিতে হইবে যে, সেই ব্যক্তি মৃত।
(খ) দলিল হারাইয়া গিয়াছে বলিয়া উল্লেখ
করিয়া উহার একটি নকলের দ্বারা দলিলটির বিষয়বস্তু প্রমাণ করিতে প্রস্তাব করা হইতেছে।
নকলটি দাখিল করিবার পূর্বে যে ব্যক্তি
নকল দাখিল করিবার প্রস্তাব করেন, তাহাকে অবশ্যই প্রমাণ করিতে হইবে যে, মূল দলিলটি হারাইয়া গিয়াছে।
(গ) চোরাইমাল বলিয়া জানিয়া চোরাইমাল
গ্রহণের দায়ে 'ক' অভিযুক্ত হইয়াছে। তাহার দখলে উক্ত মাল থাকিবার কথা তিনি অস্বীকার করিয়াছিলেন, ইহা প্রমাণ করিতে প্রস্তাব
করা হইতেছে। অস্বীকৃতির প্রাসঙ্গিকতা
সম্পত্তির পরিচয়ের উপর নির্ভর করে। দখলের
অস্বীকৃতি প্রমাণের পূর্বে আদালত সদ্বিবেচনায় সম্পত্তির পরিচয় প্রদানের নির্দেশ
দিতে পারেন অথবা সম্পত্তির পরিচয় প্রদানের পূর্বেই দখলের অস্বীকৃতি প্রমাণের অনুমতি দিতে
পারেন।
(ঘ) বিচার্য বিষয়ের কারণ অথবা ফল
বরিয়া কথিত বিষয় 'ক' প্রমাণ
করিতে চাওয়া হইতেছে। 'ক' বিষয়টি যে বিচার্য বিষয়ের কারণ অথবা ফল তাহা
স্থির করিবার পূর্বে কতিপয় মধ্যবর্তী বিষয় 'খ', 'গ' ও 'ঘ'-এর অস্তিত্ব অবশ্যই দেখাইতে হইবে। আদালত 'খ', 'গ' ও 'ঘ' বিষয় প্রমাণ করিবার পূর্বে 'ক' বিষয় প্রমাণ করিবার অনুমতি দিতে পারেন অথবা 'ক' বিষয় প্রমাণের অনুমতি দিবার পূর্বে 'খ', 'গ' ও 'ঘ' বিষয় প্রমাণ করিবার নির্দেশ দিতে পারেন।
ধারা-১৩৭। জবানবন্দি, জেরা ও পুনঃজবানবন্দি (Examination in-chief, cross-examination,
Re-examination) :
যে পক্ষ সাক্ষীকে হাজির করিয়াছেন
সেই পক্ষ যখন সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন, তখন তাহাকে সাক্ষীর জবানবন্দি
গ্রহণ করা বলা হয়।
বিরুদ্ধ পক্ষ যখন সাক্ষীকে প্রশ্ন
করেন, তখন
তাহাকে জেরা বলা হয়।
জেরার পর সাক্ষী উপস্থিতকারী পক্ষ
যদি পুনরায় তাহাকে প্রশ্ন করেন, তবে তাহাকে পুনঃজবানবন্দি গ্রহণ করা বলা হয়।
ধারা-১৩৮। সাক্ষ্য গ্রহণের ক্রম, পুনঃজবানবন্দি গ্রহণের
ক্রম (Order
of examination, direction of re-examination) :
প্রথমে সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ
করা হইবে। তৎপর (বিরুদ্ধপক্ষ ইচ্ছা করিলে)
সাক্ষীকে জেরা করা হইবে, তৎপর (সাক্ষী আহবানকারী পক্ষ ইচ্ছা করিলে) পুনঃজবানবন্দি গ্রহণ করা হইবে।
সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ ও জেরা
প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে হইতে হইবে। কিন্তু
সাক্ষী তাহার জবানবন্দিতে যে সকল বিষয় সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়াছে, কেবলমাত্র সেই সমস্ত বিষয়ই
জেরা চলিবে এমন নহে।
জেলা প্রসঙ্গে সাক্ষী যে সমস্ত বিষয়ের
উল্লেখ করেন, পুনঃজবানবন্দিতে
সেইগুলির ব্যাখ্যা চাহিতে হইবে, পুনঃজবানবন্দি গ্রহণের সময় যদি আদালতের অনুমতি লইয়া কোন নূতন বিষয়ের অবতারণা
করা হয় তবে বিরুদ্ধপক্ষ সেই সমস্ত বিষয়ে আরও জেরা করিতে পারিবে।
ধারা-১৩৯। দলিল দাখিলের জন্য আহূত ব্যক্তির জেরা (Cross-examination of person called of produced
document) :
কোন দলিল দাখিল করিবার জন্য কোন
ব্যক্তিকে সমন দেওয়া হইলে সেই ব্যক্তি যদি সেই দলিল দাখিল করেন, তবে সেইজন্যই সে ব্যক্তি
সাক্ষী বলিয়া গণ্য হইবেন না এবং সাক্ষী হিসাবে তাহাকে তলব না করা পর্যন্ত তাহাকে
জেরা করা যাইবে না।
ধারা-১৪০। চরিত্র সম্পর্কে সাক্ষ্য (Witness to character) :
চরিত্র সম্পর্কে সাক্ষীকে জেরা ও
তাহার পুনঃজবানবন্দি গ্রহণ করা যাইতে পারে।
ধারা-১৪১। ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন (Leading Questions) :
প্রশ্নকারী প্রশ্নের যে উত্তর অঅশা
বা ইচ্ছা করেন, প্রশ্নের
মধ্যেই উহার ইঙ্গিত দেওয়া থাকিলে তাহাকে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন বলা হয়।
ধারা-১৪২। উক্তরূপ প্রশ্ন যখন অবশ্যই করা যাইবে না (When they must not be asked):
বিরুদ্ধ পক্ষ যদি আপত্তি করেন, তবে জবানবন্দি ও পুনঃজবানবন্দি
গ্রহণকারীন আদালতের অনুমতি ব্যতীত ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন অবশ্যই বিজ্ঞাসা করা চলিবে না।
যে সমস্ত বিষয় ভূমিকামূলক অথবা অবিসংবাদিত
অথবা পূর্বেই যথেষ্টরূপ প্রমাণিত হইয়াছে বলিয়া আদালত মনে করেন, সেই সমস্ত বিষয় সম্পর্কে
ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করিবার অনুমতি আদালত অবশ্যই দিবেন।
ধারা-১৪৩। উত্তরূপ প্রশ্ন যখন করা যাইতে পারে (When they may be asked) :
জেরায় ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা
করা যাইবে।
ধারা-১৪৪। লিপিবদ্ধ বিষয় সম্পর্কে সাক্ষ্য (Evidence
as to matters in writing) :
কোন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের সময়
যে সম্পত্তি সম্পর্কে তিনি সাক্ষ্য দান করিতেছেন তৎসংক্রান্ত কোন চুক্তি, মঞ্জুরী বা অন্যবিধ বিলি
ব্যবস্থার বিষয় কোন একটি দলিলে লিপিবদ্ধ নাই, এই মর্মে তাহাকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা
করা যাইতে পারে। তিনি যদি বলেন যে, উহা দলিলে লিপিবদ্ধ আছে অথবা
উক্ত দলিলের বিষয়বস্তু সম্পর্কে তিনি যদি কোন বিবৃতি প্রদানের উপক্রম করেন এবং আদালত
যদি মনে করেন যে, উক্ত
দলিল দাখিল হওয়া উচিত, তবে বিরুদ্ধপক্ষ উক্ত দলিল দাখিল না হওয়া পর্যন্ত অথবা যে ঘটনার দরুন সাক্ষী
উপস্থিতকারীপক্ষ উক্ত দলিল সম্পর্কে মাধ্যমিক সাক্ষ্য দিবার অধিকার লাভ করিবেন
তাহা প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত উক্তরূপ সাক্ষ্য দানের বিরুদ্ধে আপত্তি করিতে পারিবেন
না।
ব্যাখ্যা : কোন দলিলের বিষয়বস্তু সম্পর্কে অপর কোন লোকের বিবৃতি যদি প্রাসঙ্গিক হয় তবে
সাক্ষী সেই বিবৃতি সম্পর্কে মৌখিক সাক্ষ্য দিতে পারিবেন।
উদাহরণ
প্রশ্ন হইতেছে 'ক' 'খ'-কে আঘাত করিয়াছে কিনা, 'গ' সাক্ষ্য দেয় যে, 'ঘ'-কে 'ক' এই কথা বলিতে তিনি শুনিয়াছেন, 'খ' আমার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ করিয়া একটি চিঠি
লিখিয়াছে। আমি উহার প্রতিশোধ লইব।" এই বিবৃতি প্রাসঙ্গিক। কারণ 'ক' কর্তৃক 'খ'-কে আঘাতের অভিপ্রায় ইহা হইতে প্রতীয়মান হয়। ঐ চিঠি সম্পর্কে আর কোন সাক্ষ্য না দেওয়া হইলে
বিবৃতি সম্পর্কে সাক্ষ্য দেওয়া যাইতে পারে।
ধারা-১৪৫। পূর্ববর্তী লিখিত বিবৃতি সম্পর্কে জেরা (Cross-examination as to previous statements in
writing) :
সাক্ষী কর্তৃক পূর্বে প্রদত্ত লিখিত
বিবৃতি অথবা তৎকর্তৃক পূর্বে প্রদত্ত বিবৃতি লিপিবদ্দ হইয়া থাকিলে তাহা যদি তর্কিত
বিষয়ের সহিত প্রাসঙ্গিক হয়, তবে উক্ত লিপি তাহাকে না দেখাইয়া অথবা তাহা প্রমাণ না করিয়াও তৎসম্পর্কে সেই
সাক্ষীকে জেরা করা যাইতে পারে; কিন্তু যদি, অভিপ্রায়
করা হয় যে, উক্ত
লিপির দ্বারা সাক্ষীর বক্তব্যের বৈপরীত্য প্রদর্শিত হইবে তবে লিপি প্রমাণ করিবার
পূর্বে উহার সেই অংশের দিকে যাহা বৈপরীত্য প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত হইবে, সাক্ষীর দৃষ্টি আকর্ষণ
করিতে হইবে।
ধারা-১৪৬। জেরায় আইনসঙ্গত প্রশ্ন (Questions lawful in cross-examination) :
যখন সাক্ষীকে জেরা করা হয় তখন ইতিপূর্বে
উল্লিখিত প্রশ্নসমূহ ব্যতীতও এমন প্রশ্ন্ জিজ্ঞাসা করা যাইতে পারে যাহা দ্বারা-
(১) তাহার সত্যবাদিতা পরীক্ষা করা যায়;
(২) তাহার পরিচয় ও মর্যাদা জানা যায়; অথবা
(৩) তাহার চরিত্রের প্রতি আঘাত করিয়া তাহার বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যায়, য়দিও প্রশ্নের উত্তরের দ্বারা তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অপরাধের সহিত জড়িত হইতে পারেন অথবা তিনি দণ্ড পাইবার যোগ্য সাব্যস্ত হইতে পারেন কিংবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাহার দণ্ড পাইবার বা সম্পত্তি বাজেয়াফতযোগ্য সাব্যস্ত হইবার সম্ভাবনা থাকে।
ধারা-১৪৭। সাক্ষীকে যখন উত্তর দিতে বাধ্য করিতে হইবে (When witness to be compelled to answer) :
উক্তরূপ কোন প্রশ্ন যদি এমন কোন
বিষয় সম্পর্কিত হয়, যাহা সংশ্লিষ্ট দেওয়ানী মামলা বা কার্যক্রমের সহিত প্রাসঙ্গিক, তবে সেইক্ষেত্রে ১৩২ ধারার
বিধানসমূহ প্রযোজ্য হইবে।
ধারা-১৪৮। যখন প্রশ্ন করিতে হইবে এবং সাক্ষী যখন উত্তর দিতে বাধ্য
তাহা আদালত নির্ধারণ করিবেন (Court
to decide when question shall be asked and when witness compelled to answer) :
উক্তরূপ কোন প্রশ্ন যদি এমন কোন
বিষয় সম্পর্কিত হয়, যাহা মামলা বা কার্যক্রমের সহিত প্রাসঙ্গিক নহে, তবে উক্ত প্রশ্নের দ্বারা সাক্ষীর
চরিত্রের উপর আঘাত করিয়া তাহার বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রভাবিত না করা হইলে সাক্ষী সেই
প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য কিনা, আদালত তাহা স্থির করিবেন এবং আদালত উপযুক্ত মনে করিলে সাক্ষীকে এই মর্মে সতর্ক
করিয়া দিতে পারিবেন যে, তিনি উহার উত্তর দিতে বাধ্য নহেন। আদালত
স্বীয় সদ্বিবেচনায় এই ক্ষমতা প্রয়োগ করিবার সময় অবশ্যই নিম্নলিখিত বিষয়গুলি লক্ষ্য
করিবেন :
১। উক্ত প্রশ্নের প্রকৃতি যদি এইরূপ হয় যে, ঐ প্রশ্নের অন্তর্নিহিত দোষারোপের সত্যতা সাক্ষী যে বিষয়ে সাক্ষ্য দান করিতেছেন সেই বিষয়ে তাহার বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে আদালতের অভিমতকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করিবে, তবে সেই প্রশ্ন করা সঙ্গত হইবে।
২। প্রশ্নটির অন্তর্নিহিত দোষারোপের সংশ্লিষ্ট সময় যদি সুদূরবর্তী হয় অথবা প্রশ্নের প্রকৃতি যদি এইরূপ হয় যে, উহার অন্তর্নিহিত দোষারোপের সত্যতা সাক্ষী যে বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান করিতেছেন সে সম্পর্কে তাহার বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে আদালতের অভিমতকে প্রভাবিত করিবে না অথবা সামান্য পরিমাণে প্রভাবিত করিবে, তবে সেই প্রশ্ন অসঙ্গত হইবে।
৩। সাক্ষীর চরিত্রের বিরুদ্ধে যে দোষারোপ তাহার গুরুত্ব এবং সাক্ষ্যের গুরুত্ব এই দুইয়ের মধ্যে যদি বিরাট অসামঞ্জস্য থাকে, তবে প্রশ্নটি অসঙ্গত হইবে।
৪। আদালত উপযুক্ত মনে করিলে প্রশ্নের উত্তর প্রদানে সাক্ষীর অস্বীকৃতি হইতে অনুমান করিতে পারিবেন যে, সাক্ষী উত্তর দিলে তাহা তাহার বিরুদ্ধ যাইবে।
ধারা-১৪৯। যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত প্রশান করা যাইবে না (Question not to be asked without reasonable ground) :
প্রশ্ন জিজ্ঞাসাকারীর পক্ষে যদি
না এইরূপ মনে করিবার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে যে, প্রশ্নটির অন্তর্নিহিত দোষারোপ দৃঢ়
ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত, তবে ১৪৮ ধারায় উল্লিখিত কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা উচিত হইবে না।
উদাহরণ
(ক) জনৈক এ্যাডভোকেট জনৈক মক্কেলের
নিকট হইতে এই তথ্য লাভ করেন যে, একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী একজন ডাকাত। তিনি একজন ডাকাত কিনা এই মর্মে সাক্ষীকে প্রশ্ন করিবার জন্য ইহা একটি
যুক্তিসঙ্গত কারণ।
(খ) জনৈক এ্যাডভোকেট আদালতের জনৈক
ব্যক্তির নিকট অবগত হন যে, একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী একজন ডাকাত। এ্যাডভোকেট
কর্তৃক জিজ্ঞাসিত হইয়া উক্ত সংবাদদাতা তাহার অনুরূপ বিবৃতির সন্তোষজনক কারণ প্রদর্শন
করেন। সাক্ষী একজন ডাকাত কিনা এই মর্মে
তাহাকে প্রশ্ন করিবার জন্য ইহা একটি যুক্তিসঙ্গত কারণ।
(গ) একজন সাক্ষী সম্পর্কে কিছু জানা
নাই। বেপরোয়াভাবে তাহাকে প্রশ্ন করা
হইল যে, তিনি
একজন ডাকাত কিনা। এইক্ষেত্রে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা
করিবার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নাই।
(ঘ) একজন সাক্ষী সম্পর্কে কিছু জানা
নাই। তাহার জীবনধারণের পদ্ধতি ও জীবিকা
নির্বাহের উপায় সম্পর্কে তাহাকে প্রশ্ন করা হইলে তিনি যে উত্তর দেন তাহা সন্তোষজনক
নহে। তিনি ডাকাত কিনা এই মর্মে তাহাকে প্রশ্ন
করিবার জন্য ইহা একটি যুক্তিসঙ্গত কারণ।
ধারা-১৫০। যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত প্রশ্ন করা হইলে সেইক্ষেত্রে
আদালতের কার্য পদ্ধতি (Procedure of
court in case of questions being asked without reasonable ground) :
আদালত যদি এই অভিমতে উপনীত হন যে, উক্তরূপ কোন প্রশ্ন
যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত জিজ্ঞাসা করা হইয়াছে, তবে সেই প্রশ্ন যদি কোন এডভোকটে
জিজ্ঞাস করিয়া থাকেন; সেই এডভোকেট পেশাগতভাবে যে হাইকোর্টের নিয়ন্ত্রণাধীন, আদালত মামলার সমস্ত
পরিস্থিতি সম্পর্কে সেই কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন দিতে পারেন।
ধারা-১৫১। অশ্লীল ও কেলেঙ্কারীজনক প্রশ্ন (Incident and seandalous questions) :
কোন প্রশ্ন বা বিজ্ঞাসাবাদ যদি আদালত
অশালীন বা কুৎসাজনক মনে করেন তবে আদালতের বিচার্য বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রশ্নটির কিছু
গুরুত্ব থাকিলেও আদালত উহার জিজ্ঞাসা নিষিদ্ধ করিতে পারেন; যদি না প্রশ্নটি বিচার্য
বিষয় সম্পর্কিত হয় অথবা বিচার্য বিষয়ের অস্তিত্ব নির্ধারণের জন্য যাহা জানা আবশ্যক
এমন বিষয় সম্পর্কিত হয়।
ধারা-১৫২। অপমান বা বিরক্তি করিবার উদ্দেশ্যমূলক প্রশ্ন (Questions intended to insulator annoy) :
কোন প্রশ্ন যদি কাহাকেও অপমান বা
বিরক্তি করিবার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলিয়া আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয় অথবা প্রশ্নটি সঙ্গত
হইলেও অকারণ আক্রমণাত্মক আকৃতিসম্পন্ন বলিয়া আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয়, তবে আদালত অনুরূপ প্রশ্ন
অবশ্যই নিষিদ্ধ করিবেন।
ধারা-১৫৩। সত্যবাদিতা পরীক্ষার জন্য প্রশ্ন করা হইলে উহার উত্তরের
বিরোধিতা করিবার সাক্ষ্য বর্জন (Exclusion
of evidence to contradict answers to questions testing veracity) :
কোন সাক্ষীকে যখন এইরূপ কোন প্রশ্ন
করা হইয়াছে যাহা ঐ সাক্ষীর চরিত্রের প্রতি আঘাত করিয়া সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা
অনিশ্চিত করিবার জন্যই তদন্তের ব্যাপারে প্রাসঙ্গিক এবং সাক্ষী তখন সেই প্রশ্নের
উত্তর দিয়াছেন, তখন
তাহার বক্তব্যের বিরোধিতা করিবার জন্য অবশ্যই কোন সাক্ষী দেওয়া চলিবে না, কিন্তু তিনি যদি মিথ্যা
উত্তর দিয়া থাকেন; তবে পরে তাহাকে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করা যাইবে।
ব্যাখ্যা-১ : কোন সাক্ষীকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে, পূর্ববর্তীকালে তিনি কোন অপরাধে
দন্ডিত হইয়াছিলেন কিনা এবং সাক্ষী যদি তাহা অস্বীকার করেন, তবে পূর্ববর্তীকালে তাহার
দন্ডিত হওয়া সম্পর্কে সাক্ষ্য দেওয়া যাইতে পারিবে।
ব্যাখ্যা-২ : সাক্ষীকে যদি এইরূপ কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয় যাহা দ্বারা তাহার নিরপেক্ষতা
অভিশংসিত হইবার সম্ভাবনায় পড়ে এবং যে ঘটনা সম্পর্কে প্রস্তাব করিয়া প্রশ্ন করা হয়
সাক্ষী যদি উত্তরে তাহা অস্বীকার করেন, তবে তাহার বক্তব্যের বিরোধিতা করা
যাইতে পারে।
উদাহরণ
(ক) প্রতারণার অজুহাতে কোন দায়গ্রহণকারীর
বিরুদ্ধে উপস্থাপিত দাবির প্রতিবাদ করা হইতেছে। দাবিদারকে জিজ্ঞাসা করা হইল যে, পূর্ববর্তী একটি লেনদেনের
ব্যাপারে তিনি প্রতারণামূলকভাবে দাবি উত্থাপন করিয়াছিলেন কিনা, তিনি উহা অস্বীকার করিলেন। উক্তরূপ দাবি উত্থাপন প্রতীয়মান করিবার জন্য সাক্ষ্য দিতে
চাওয়া হইল। এইরূপ সাক্ষ্য অগ্রাহ্য হইবে।
(খ) একজন সাক্ষীকে জিজ্ঞাসা করা
হইল যে, অসততার
দরুন তিনি চাকুরি হইতে বরখাস্ত হইয়াছিলেন কিনা। তিনি উহা অস্বীকার করিলেন।
অসততার জন্য তিনি চাকুরি হইতে বরখাস্ত
হইয়াছিলেন, তাহা
প্রতীয়মান করিবার জন্য সাক্ষী দিতে চাওয়া হইল।
(গ) 'ক' দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করিলেন যে, নির্দিষ্ট কোন একদিনে তিনি
'খ'-কে খুলনায় দেখিয়অছেন, 'ক'-কে জিজ্ঞাসা করা হইল, তিনি ঐদিন চট্টগ্রাম ছিলেন কিনা। ইহা তিনি অস্বীকার করিলেন।
ঐদিন যে, 'ক' চট্টগ্রাম ছিলেন, তাহা দেখাইবার জন্য সাক্ষ্য দিতে
চাওয়া হইল।
যে ঘটনার দ্বারা 'ক'-এর বিশ্বাসযোগ্যতা প্রভাবিত, তাহার প্রতিবাদ করিবার
জন্য নহে, বরং উক্ত
নির্দিষ্ট দিনে "ক'-কে খুলনায় দেখা গিয়াছে বলিয়া যে দাবি করা হইতেছে, তাহার প্রতিবাদ করিবার
জন্য উক্ত সাক্ষ্য গ্রহণীয় হইবে।
সাক্ষীর অস্বীকৃতি মিথ্যা হইলে সাক্ষীকে
মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানের দায়ে অভিযুক্ত করা যাইতে পারে।
(ঘ) 'ক'-কে জিজ্ঞাসা করা হইল যে, তিনি 'খ'-এর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করিতেছেন, সেই 'খ'-এর পরিবারের সহিত তাহার পরিবারের
হত্যাকান্ডজনিত শত্রুতা আছে কিনা। 'ক' ইহা অস্বীকার করিলেন, প্রশ্নটি দ্বারা তাহার
নিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করা হইয়াছে। এই কারণে তাহার বক্তব্যের প্রতিবাদ করা যাইতে পারে।
ধারা-১৫৪। কোন পক্ষ কর্তৃক নিজের সাক্ষীকে প্রশ্ন করা (Question by party to his own witness) :
যে ব্যক্তি সাক্ষী উপস্থিত করেন, তিনি যদি সাক্ষীকে এমন কোন
প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে চাহেন, যাহা বিরুদ্ধ পক্ষ সাক্ষীকে জেরা করিবার সময় জিজ্ঞাসা করিতে পারে, তবে আদালত তাহাকে
সদ্বিবেচনায় উক্ত ব্যক্তিকে সেই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিবার অনুমতি দিতে পারেন।
ধারা-১৫৫। সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে অভিযোগ (Impeaching credit of witness) :
নিম্নলিখিত উপায়ে বিরুদ্ধপক্ষ বা
আদালতের অনুমতিক্রমে সাক্ষী আহ্বানকারীপক্ষ সাক্ষীর বিশ্বাসযোগ্যতা অভিশংসন করিতে
পারেন :
১। যাহারা সাক্ষ্য দিবেন যে, ঐ সাক্ষী সম্পর্কে তাহাদের যাহা জানা আছে, তাহাতে তাহারা সাক্ষীকে বিশ্বাসের অযোগ্য বলিয়া মনে করেন, তাহাদের দ্বারা সাক্ষ্য দেওয়াইয়া;
২। সাক্ষীকে ঘুষ দেওয়া হইয়াছে, অথবা সাক্ষী ঘুষের প্রস্তাবে রাজি হইয়াছেন অথবা সাক্ষ্য দিবার জন্য অন্য কোনরূপ দুর্নীতিমুলক প্রলোভনের প্রস্তাবে রাজি হইয়াছিনে, তাহা প্রমাণ করিয়া;
৩। তাহার প্রদত্ত সাক্ষ্যে যে অংশ প্রতিবাদ সাপেক্ষ তাহা তাহার পূর্ববর্তী বিবৃতির সহিত সঙ্গতিবিহীন, তাহা প্রমাণ করিয়া;
৪। কোন ব্যক্তি যৌন, ধর্ষণ অথবা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারীতে সোপর্দ হন, তখন দেখানো যাইতে পারে যে, অভিযোগকারিনী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা।
ব্যাখ্যা : একজন সাক্ষী যদি অপর একজন সাক্ষীকে বিশ্বাসের অযোগ্য বলিয়া ঘোষণা করেন, তবে জবানবন্দির সময় তিনি তাহার
অনুরূপ বিশ্বাসের কারণ নাও দিতে পারেন। তবে
জেরার সময় তাহাকে উক্ত কারণ জিজ্ঞাসা করা যাইতে পারে।
জিজ্ঞাসার উত্তরে তিনি যাহা বলেন, তাহার প্রতিবাদ করা যায় না, উত্তরে তিনি যদি মিথ্যা
কথা বলেন, তবে সপরবর্তীকালে
তাহার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিবার অভিযোগ করা যাইতে পারে।
উদাহরণ
(ক) 'খ'-এর নিকট বিক্রীত এবং অর্পিত পণ্যের মূল্যের
জন্য 'ক' 'খ'-এর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করিলেন।
এই মর্মে সাক্ষ্য দিতে চাওয়া হইল
যে, পূর্ববর্তী
কোন এক সময় 'ক' বলিয়াছিলেন যে, তিনি "ক'-এর নিকট পণ্য অর্পণ করেন নাই।
এই সাক্ষ্য গ্রহণীয় হইবে।
(খ) 'ক' 'খ'-কে খুন করিবার দায়ে অভিযুক্ত হইলেন। 'গ' বলিলেন
যে, 'খ' মৃত্যুকালে ঘোষণা করিয়াছিলেন যে, 'খ'-এর দেওয়া আঘাতের ফলে তিনি মারা গিয়াছিলেন।
এই মর্মে সাক্ষ্য দিতে চাওয়া হইল
যে, পূর্ববর্তী
কোন সময় 'গ' বলিয়াছিলেন যে, 'ক' উক্ত আঘাত করে নাই, বা তাহার উপস্থিতিতে তাহা
করে নাই। এই সাক্ষ্য গ্রহণীয় হইবে।
ধারা-১৫৬। প্রাসঙ্গিক ঘটনা সমর্থন করিবার উদ্দেশ্যমূলক প্রশ্ন
গ্রহণযোগ্য (Question tending to
corroborate evidence of relevant fact, admissible) :
সাক্ষী যখন কোন প্রাসঙ্গিক ঘটনা
সম্পর্কে সাক্ষ্য দেন এবং তাহার সাক্ষ্য সমর্থন করানোর ইচ্ছা করা হয়, তখন উক্ত প্রাসঙ্গিক ঘটনা যে
স্থানে বা যে সময়ে ঘটিয়াছিল সেই সময়ে বা স্থানে অথবা তাহার নিকটবর্তী সময়ে বা
স্থানে তিনি অন্য যে অবস্থাদি লক্ষ্য করিয়াছিলেন, সেই সম্পর্কে তাহাকে প্রশ্ন করা
যাইতে পারে, যদি
আদালত মনে করেন যে, উক্ত অবস্থাদি প্রমাণিত হইলে প্রাসঙ্গিক ঘটনাটি সম্পর্কে সাক্ষী যে সাক্ষ্য
দিয়াছেন তাহা সমর্থিত হইবে।
উদাহরণ
ডাকাতিতে সহযোগী হিসাবে যোগদানকারী
'ক' ডাকাতির একটি বর্ণনা প্রদান
করিলেন। যেই স্থানে ডাকাতি হইয়াছিল সেখানে
যাওয়া-আসার পথে এমন কতকগুলি ঘটনার বিবরণ তিনি দিলেন, যেইগুলি ডাকাতির সহিত সংশ্লিষ্ট
নহে। ডাকাতি সম্পর্কে তাহার সাক্ষ্যের
সমর্থনের উদ্দেশ্যে এই সমস্ত বিষয় সম্পর্কে নিরপেক্ষ ব্যক্তির সাক্ষ্য দেওয়া যাইতে
পারে।
ধারা-১৫৭। এই ঘটনা সম্পর্কে পরবর্তী সাক্ষ্য সমর্থনের জন্য পূর্ববর্তী
সাক্ষ্য প্রমাণ করা যাইতে পারে (Former
statement of witness may be proved to corroborate later testimony as to same
fact) :
সাক্ষীর সাক্ষ্য সমর্থনের জন্য সংশ্লিষ্ট
ঘটনা যখন ঘটিয়াছিল সেই সময়ে বা তাহার নিকটবর্তী কোন সময়ে ঐ ঘটনা সম্পর্কে সাক্ষীর প্রদত্ত
বিবৃতি অথবা ঘটনা সম্পর্কে তদন্ত করিবার ক্ষমতাসম্পন্ন কোন কর্তৃপক্ষের নিকট
পূর্ববর্তীকালে সাক্ষীর প্রদত্ত বিবৃতি প্রমাণ করা যাইতে পারে।
ধারা-১৫৮। প্রমাণিত যেসব বিবৃতি ৩২ ও ৩৩ ধারা অনুসারে প্রাসঙ্গিক
সেইগুলি সম্পর্কে যেই সমস্ত বিষয় প্রমাণ করা যাইতে পারে (What matters may be proved in connection with proved
statement relevant under section 32 or 33) :
যখনই ৩২ বা ৩৩ ধারা অনুসারে প্রাসঙ্গিক
বিবৃতি প্রমাণ করা হয়, তখনই ঐ বিবৃতির প্রতিবাদ বা সমর্থন করিবার উদ্দেশ্যে অথবা উক্ত বিবৃতিদাতার
বিশ্বাসযোগ্যতার অভিশংসন বা সমর্থন করিবার উদ্দেশ্যে এমন সমস্ত বিষয় প্রমাণ করা
যাইতে পারে, যেইগুলি
ঐ ব্যক্তি সাক্ষী হিসাবে আহূত হইলে এবং তাহার জেরার সময় ঐ সমস্ত ঘটনার প্রস্তাব
দিলে সেইগুলি তিনি সত্য বলিয়া স্বীকার করিলে প্রমাণ করা যাইত।
ধারা-১৫৯। স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত করা (Refreshing menory) :
সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদানকালে, যে আদান-প্রদান সম্পর্কে
তাহাকে প্রশ্ন করা হইতেছে সেই আদান-প্রদানের সময়ে যাহা তিনি নিজে লিখিয়াছিলেন তাহা
দেখিয়া স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত করিতে পারেন অথবা আদান-প্রদান মনে জাগ্রত থাকা আদালত
সঙ্গত মনে করে এমন সময়ের ব্যবধানে তাহার নিজের লেখা তিনি দেখিয়া স্মৃতি
পুনরুজ্জীবিত করিতে পারেন।
সাক্ষী অন্যের দ্বারা লিখিত কিছু
দেখিয়াও তাহার স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত করিতে পারেন, যাহা পূর্ববর্ণিত সময়ে তিনি পড়িয়াছিলেন, যদি উহা এমন হয় যে, পড়িবার সময় তিনি উহা সত্যা
বলিয়া জানিতেন।
সাক্ষী যখন স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত
করিবার জন্য দলিলের নকল ব্যবহার করিতে পারে- সাক্ষী যখন কোন দলিল দেখিয়া তাহার
স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত করিতে পারে তখন তিনি আদালতের অনুমতি লইয়া সেই দলিলের নকলও দেখিতে
পারেন। তবে আদালত অনুমতি দিবার পূর্বে
সন্তুষ্ট হইবেন যে, মূল দলিলটি দাখিল না করিবার যথেষ্ট কারণ আছে। বিশারদ তাহার পেশা সম্পর্কিত পুস্তক দেখিয়া স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত করিতে পারেন।
ধারা-১৬০। ১৫৯ ধারায় উল্লিখিত দলিলে বর্ণিত ঘটনা সম্পর্কে সাক্ষ্য (Testimony to facts stated in document mentioned in
section 159) :
সাক্ষী যদি নিশ্চিত থাকেন যে, ১৫৯ ধারায় উল্লিখিত কোন দলিলে
সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ হইয়াছে, তবে সেই বিষয়াদি সাক্ষীর
নির্দিষ্টরূপে স্মরণ না থাকিলেও সেই বিষয়াদি সম্পর্কে তিনি সাক্ষ্য দিতে পারেন।
উদাহরণ
কোন হিসাবরক্ষক ব্যবসার নীতি অনুসারে
যে সমস্ত বিষয় নিয়মিতভাবে খাতাপত্রে লিপিবদ্ধ করিয়া থাকে, তবে নির্দিষ্ট কোন লেনদেন
সম্পর্কে খাতায় লিপিবদ্ধ বিবরণ ভুলিয়া যাইয়া থাকলেও তিনি যদি জানেন যে, খাতাপত্র সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা
হইয়াছে তবে ঐ সম্পর্কে সাক্ষ্য দিতে পারেন।
ধারা-১৬১। স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত করিবার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত কোন লিখন
সম্পর্কে বিরুদ্ধপক্ষের অধিকার (Right
of adverse party as to writing used to refresh memory) :
উপরের দুইটি ধারায় যেসমস্ত লিপির
বিষয় উল্লিখিত হইয়াছে, বিরুদ্ধপক্ষ চাহিলে তাহা অবশ্যই আদালতে দাখিল করিতে হইবে এবং বিরুদ্ধপক্ষকে
দেখাইতে হইবে। বিরুদ্ধপক্ষ ইচ্ছা করিলে সাক্ষীকে
উহা সম্পর্কে জেরা করিতে পারিবেন।
ধারা-১৬২। দলিল দাখিল (Production
of documents) :
সাক্ষীকে দলিল দাখিল করিবার জন্য সমন দেওয়া থাকিলে উহা যদি তাহার দখলে বা ক্ষমতাধীনে থাকে, তবে দলিলটির দাখিল বা গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে যতই আপত্তি থাকুক না কেন, সেই সাক্ষী অবশ্যই উহা আদালতে উপস্থিত করিবেন। আপত্তির বৈধতা সম্পর্কে আদালত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবেন। দলিলটি যদি রাষ্ট্রীয় বিষয় সংক্রান্ত না হয়্ তবে আদালত উপযুক্ত মনে করিলে দলিলটি পরিদর্শন করিতে পারিবেন অথবা দলিলটির গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হইবার জন্য অন্য প্রকার সাক্ষ্য গ্রহণ করিতে পারিবেন।
দলিলের অনুবাদ (Translation of documents)
উপরোক্ত উদ্দেশ্যে যদি দলিলটির অনুবাদ
করা প্রয়োজন হয়, তবে
দলিলটি সাক্ষ্য হিসাবে পেশ করিবার আবশ্যক না থাকিলে আদালত উপযুক্ত মনে করিলে
দলিলটির বিষয়বস্তু গোপন রাখিবার জন্য অনুবাদকারীকে নির্দেশ দিতে পারিবেন। দোভাষী যদি এইরূপ নির্দেশ অমান্য করেন, তিনি দণ্ডবিধির ১৬৬ ধারা অনুসারে
দোষী সাব্যস্ত হইবেন।
ধারা-১৬৩। তলবকৃত এবং নোটিশ মোতাবেক দাখিলকৃত দলিল সাক্ষ্য হিসাবে
দেওয়া (Giving, as evidence of
document called for and produced on notice) :
যখন কোন পক্ষ কোন দলিল তলব করেন
এবং তাহা দাখিল করিবার জন্য অপর পক্ষকে নোটিশ দেন এবং সেই দলিল দাখিল করা হয় ও তলবকারীপক্ষ
উহা পরিদর্শন করেন, তখন দলিল দাখিলকারী পক্ষ দাবি করিলে তলবকারীপক্ষ সেই দলিল সাক্ষরূপে দিতে
বাধ্য থাকিবেন।
ধারা-১৬৪। নোটিশ দেওয়া সত্ত্বেও যে দলিল উপস্থিত করিতে অস্বীকার করা
হইয়াছে তাহা সাক্ষ্য হিসাবে ব্যবহার (Using,
as evidence, of document production of which was refused on notice) :
কোনপক্ষ দলিল দাখিল করিবার জন্য
নোটিস পাওয়া সত্ত্বেও তিনি যখন সেই দলিল দাখিল করিতে অস্বীকার করেন, তখন সেইপক্ষ পরবর্তীকালে
অপরপক্ষের সম্মতি অথবা আদালতের আদেশ ব্যতীত সেই দলিল সাক্ষ্য হিসাবে ব্যবহার করিতে
পারিবেন না।
উদাহরণ
'ক' একটি অঙ্গীকারপত্রের ভিত্তিতে 'খ'-এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন এবং উহা দাখিল
করিবার জন্য 'খ'-কে নোটিশ দেন। বিচারের সময় 'ক' উক্ত দলিল তলব করেন কিন্তু 'খ' উহা দাখিল করিতে অস্বীকার করেন। দলিলটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে 'ক' মাধ্যমিক সাক্ষ্য প্রদান করেন। অতঃপর 'ক' কর্তৃক
প্রদত্ত মাধ্যমিক সাক্ষ্যের প্রতিবাদ করিবার জন্য অথবা দলিলটি যে স্ট্যাম্পযুক্ত
নহে তাহা দেখাইবার জন্য 'খ' উক্ত
দলিল দাখিল করিতে চাহেন। তিনি তাহা করিতে পারিবেন না।
ধারা-১৬৫। জজ কর্তৃক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিবার বা কিছু দাখিল করিবার
আদেশ প্রদানের ক্ষমতা (Judge's
power to put questions or order of production) :
বিচারক প্রাসঙ্গিক ঘটনা উদ্ধার করিবার
জন্য অথবা তৎসম্পর্কে উপযুক্ত প্রমাণ সংগ্রহের জন্য যেকোন সাক্ষীকে যেকোন সময়
যেকোন আকারে যেকোন প্রশ্ন ইচ্ছা জিজ্ঞাসা কিরতে পারিবেন এবং যেকোনা দলিল বা বস্তু
দাখিল করিবার আদেশ সম্পর্কে কোন আপত্তি করিতে পারিবেন না। অনুরূপ কোন প্রশ্নের উত্তরে সাক্ষী যাহা বলিবে তৎসম্পর্কে আদালতের অনুমতি
ব্যতীত সাক্ষীকে কোন জেরা করিতেও পারিবে না।
তবে শর্ত থাকে যে, অত্র আইন অনুসারে যে সমস্ত
বিষয় প্রাসঙ্গিক এবং যথারীতি প্রমাণিত, তাহাদের ভিত্তিতেই মামলার রায়
প্রদান কিরতে হইবে।
আরও শর্ত থাকে যে, কোন সাক্ষীকে বিরুদ্ধপক্ষ
কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলে বা কোন দলিল দাখিল করিতে বলিলে অত্র আইনের ১২১ এবং ১৩১
ধারা অনুসারে সাক্ষী যদি সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে বা দলিল দাখিল করিতে অস্বীকার
করিতে পারিতেন, তবে
আদালত অত্র ধারা অনুসারে কোন সাক্ষীকে উক্তরূপ কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে বা কোন
দলিল দাখিল করিতে বাধ্য করিতে পারিবেন না। অত্র আইনের ১৪৮ বা ১৬৯ ধারা অনুসারে অপর কোন ব্যক্তির পক্ষে যে প্রশ্ন
জিজ্ঞাসা করা অসঙ্গত। বিচারকও সেইরূপ প্রশ্ন
অবশ্যই জিজ্ঞাসা করিবেন না।
ইতিপূর্বে অত্র আইনে যে সমস্ত ব্যতিক্রম
উল্লেখ করা হইয়াছে তাহা ব্যতীত অন্য কোন ক্ষেত্রে কোন দলিল সম্পর্কে প্রাথমিক
সাক্ষ্য প্রদানের আবশ্যকতা আদালত মওকুফ করিতে পারিবেন।
ধারা-১৬৬। জুরি বা এ্যাসেসরগণ কর্তৃক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিবার ক্ষমতা (Power of Jury or assessors to put questions) :
জুরি বা এ্যাসেসরের দ্বারা বিচারাধীন
মামলায় জুরি বা এ্যাসেসরগণ বিচারকের মাধ্যমে বা তাঁহার অণুমতি লইয়া সাক্ষীকে এমন
যেকোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতে পারিবেন, যাহা বিচারক স্বয়ং জিজ্ঞাসা করিতে
পারিতেন না যাহা তিনি সঙ্গত মনে করিবেন।
ধারা-১৬৭। অন্যায়ভাবে সাক্ষ্য গ্রাহ্য বা অগ্রাহ্য করা হইলে তজ্জন্য
নূতন করিয়া বিচার হইবে না (No new trial for improper adminission or rejection of
evidence) :
সাক্ষ্যের অবৈধ গ্রহণ বা বর্জন
হইয়া থাকিলে যে আদালত উহার বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করা হয়, সেই আদালত যদি মনে করেন যে, যে সাক্ষ্য গ্রহণ করা
হইয়াছে এবং তাহার বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করা হইয়াছে, সেই সাক্ষ্য ব্যতীত এমন
সাক্ষ্য-প্রমাণ আছে যাহা দ্বারা আদালতের সিদ্ধান্তের ন্যায়তা প্রতিপন্ন হয়, অথবা যে সাক্ষ্য বর্জন করা
হইয়াছে, তাহা গ্রাহ্য
করা হলেও আদালতের সিদ্ধান্তের কোন তারতম্য হইত না, তবে কেবলমাত্র অন্যায়ভাবে কোন
সাক্ষ্য গ্রহণ বা বর্জন করিবার অজুহাতেই কোন মামলার পুনঃবিচার বা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন
দাবি করা যাইবে না।
তথ্যসূত্র: সাক্ষ্য আইন- বাসুদেব গাঙ্গুলী
সৌজন্যে: প্যান লোকালাইজেশন প্রোজেক্ট