বর্গা চাষ সংক্রান্ত আইন

 

বর্গাদার বা বর্গাচাষী বলতে এইরূপ ব্যক্তিকে বুঝায় যিনি আধি বা বর্গা বা ভাগ বলে সাধারণভাবে পরিচিত পদ্ধতিতে অপর কোন ব্যক্তির জমি চাষ করেন এই শর্তে যে, তিনি ঐ জমির উৎপন্ন ফসলের একটি অংশ উক্ত ব্যক্তিকে অর্পণ করবেন।

বর্গাচুক্তি অর্থ এইরূপ চুক্তি যার অধীনে কোন ব্যক্তি বর্গাদার হিসেবে অন্যের জমি চাষ করেন।

 

বর্গাচাষ সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদনের প্রক্রিয়া

* জমির মালিক ও বর্গাচাষী একটি লিখিত চুক্তিপত্রে আবদ্ধ হবেন।

* চুক্তিপত্রটি ১৫০ টাকা মূল্যের নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পের উপর মনিব, বর্গদার ও নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ প্রত্যেকের জন্য একটি করিয়া তিন প্রস্থে সম্পাদিত হবে।

* বর্গাচাষী ও মালিক বর্গাচাষের ব্যাপারে একমত হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে বর্গাচুক্তি সম্পাদন করতে হবে।

* বর্গাচুক্তি পাঁচ বছর মেয়াদী হবে।

* বর্গাচাষের জন্য একজন বর্গাদার ১৫ বিঘার বেশী জমি গ্রহণ করতে পারবে না। ১৫ বিঘার অধিক জমি গ্রহণ করলে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ বর্গা গ্রহণকারীর ফসলের অংশ বাধ্যতামূলকভাবে সংগ্রহ করতে পারেন।

* যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কোন পক্ষ চুক্তিভঙ্গ করতে পারবে না।

 

বর্গা জমির উৎপন্ন ফসলের বিভাজন

উৎপন্ন ফসল থেকে-

(ক) নিজ জমির জন্য এক তৃতীয়াংশ পাবে।

(খ) বর্গাচাষী তার শ্রমের জন্য এক তৃতীয়াংম পাবে।

(গ) চাষের ব্যয় যে বহন করবে সে এক তৃতীয়াংশ পাবে। যদি দুজনই আংশিক বহন করে তাহলে ঐ এক তৃতীয়াংশ অংশ দেয়ার অনুপাতে মালিক ও বর্গাগ্রহণকারী পাবে।

* শস্য কাটার অব্যবহিত পরে তা বর্গা জমির নিকটস্থ বর্গাদারের বা মনিবের মালিকানাধীন কোন স্থানে মাড়াই ও বিভাজনের জন্য গোলাজাত করা হবে।

* শস্য কাটার পরে প্রত্যেকে তার অংশ গ্রহণ করে নির্ধারিত ফরমে স্বাক্ষর করে একে অপরকে প্রদান করবে।

* যদি মালিক তার নির্ধারিত অংশ গ্রহণে অস্বীকার করে তাহালে বর্গাদার লিখিতভাবে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।

* নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ নোটিশ জারি করে ৭ দিনের মধ্যে উক্ত ফসল নেয়ার নির্দেশের পরও যদি মালিক না নেয় তাহালে বর্গাদার উক্ত ফসল সরকারী ক্রয় এজেন্সির কাছে বা বাজারে বিক্রি করে ৭ দিনের মধ্যে টাকা নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেবে।

* নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ মালিকের টাকা নেওয়ার ব্যবস্থা করবে অথবা প্রয়োজনে সরকারী কোষাগারে মালিকের অনুকূলে জমা করে রাখবে।

 

বর্গাচুক্তি অবসান

* বর্গাদার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতিরেকে বর্গা জমি চাষ করতে ব্যর্থ হলে।

* বর্গাদার কোন যুক্তসঙ্গত কারণ ব্যতীত সংশ্লিষ্ট এলাকায় অবস্থিত অন্যান্য জমির ন্যায় ফসল ফলাতে ব্যর্থ হলে।

* বর্গদার বর্গা জমি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে কৃষি ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করলে।

* বর্গাদার এই অধ্যাদেশের কোন বিধান লংঘন করলে।

* বর্গদার তার চাষের অধিকার স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করলে।

* বর্গদার নিজে চাষ না করে অন্য কাউকে দিয়ে চাষ করালে।

* মালিকের ব্যক্তিগত চাষের জন্য যদি বর্গা জমির প্রকৃতই আবশ্যক হয়।

তবে এক্ষেত্রে শর্ত হল যে, বর্গা চুক্তির অবসান করিয়ে মালিক তা ব্যক্তিগত চাষে না এনে যদি ২৪ মাসের মধ্যে অন্য কাউকে বর্গা দেয় তাহলে পূর্ববর্তী বর্গাদার নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ দখল উচ্ছেদ করে মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পূর্ববর্তী বর্গা গ্রহণকারীর দখল বহাল রাখার নির্দেশ দিবে।

 

বর্গাদারের ক্রয়াধিকার

মালিক বর্গা জমি বিক্রয় করতে চাইলে ক্রেতা হিসাবে বর্গাদারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, তবে মালিক কোন সহ-অংশীদার বা পরিবারের সদস্যদের কাছে বক্রিয় করলে এই বিধান প্রযোজ্য হবে না। বর্গাদার ক্রয় না করার সিদ্ধান্ত জানালে বা ক্রয় করতে চাইলেও যদি মনিবের দাবীকৃত দাম প্রদানে অস্বীকৃত হয় তাহলে মালিক তা অন্য কোন তৃতীয় ব্যক্তির কাছে বিক্রয় করতে পারেন এক্ষেত্রে শর্ত হল যে, বিক্রয় মূল্য বর্গাদার কর্তৃক প্রস্তাবিত দামের কম হবে না।

যে ক্ষেত্রে বর্গদার ছাড়া তৃতীয় কোন ব্যক্তি বর্গা জমি ক্রয় করেন, সে ক্ষেত্রে উক্ত জমি সংক্রান্ত বর্গাচুক্তি ক্রেতার উপর বাধ্যতামূলক হবে, যেন ক্রেতাই উক্ত চুক্তির একটা পক্ষ ছিলেন।

 

বিরোধ নিষ্পত্তি

নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ বর্গদার ও মনিবের মধ্যকার নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহ-সম্পর্কিত প্রত্যেক বিরোধের মীমাংসা করবেন।

(ক) উৎপন্ন ফসলের বিভাজন বা অর্পণ।

(খ) উৎপন্ন ফসলের গোলাজাতের ও মাড়াইয়ের স্থান নির্ধারণ।

(গ) বার্গাচুক্তির অবসান।

বিরোধ উদ্ভুত হওয়ার তিন মাসের মধ্যে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছে মীমাংসার আবেদন করতে হবে। নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ আবেদন গ্রহণের তারিখ থেকে তিন মাসের মধ্যে তার নিষ্পত্তি করবেন।

 

আপীল

উক্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত লাভের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে নির্ধারিত আপীল কর্তৃপক্ষের কাছে আপীল করা যায়। আপীল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। এর বিরুদ্ধে কোন আপীল চলবে না।

 

 

তথ্যসূত্র: প্রশিক্ষণ হ্যান্ডআউট, ভূমি আইন, ব্যবস্থাপনা ভূমিতে অধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষশণ - এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি)

 

সৌজন্যে: প্যান লোকালাইজেশন প্রোজেক্ট